আনুমানিক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের অল্পকাল পর থেকেই উত্তর ভারতের
রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল কনৌজ ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলকে
নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তিনটি রাজবংশের মধ্যে ধারাবাহিক সংগ্রাম। এই তিনটি রাজবংশ হলো বাংলা-বিহারের পাল রাজবংশ, গুজরাট-রাজস্থান-পাঞ্জাব অঞ্চলের গুর্জর প্রতিহার
বংশ এবং দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট বংশ। ত্রিশক্তি সংঘর্ষ নামে পরিচিত এই সাম্রাজিক
সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের পুত্র ধর্মপাল (৭৭৫-৮১০ খ্রি) এর আমলে। হর্ষবর্ধনের সময়
থেকে উত্তর ভারতের প্রধান রাজনৈতিক কেন্দ্র কনৌজ বা ‘মহোদয়-শ্রী' অধিকার করার স্বপ্নে বিভোর ধর্মপাল প্রথম পর্বেই বাধা
পান সমসাময়িক প্রতিহার রাজ বৎসরাজের দ্বারা। বৎসরাজ সমসাময়িক
কালে কনৌজের শাসক ইন্দ্রায়ুধের(জিনসেনের হরিবংশ) সমর্থনে এগিয়ে এসে ধর্মপালকে পরাজিত করলেও নিজে
রাষ্ট্রকূট রাজ ধ্রুবের কাছে পরাজিত হয়ে রাজস্থানের মরুভূমিতে আশ্রয় নেন (তৃতীয় গোবিন্দের ওয়ানি ও
রবনপুর তাম্র শাসন)। এরপর রাষ্ট্রকূটরাজ
ধ্রুব গৌড়রাজ ধর্মপালকেও পরাজিত করে নিজ রাজ্যে ফিরে গিয়েছিলেন (অমোঘবর্ষের সঞ্জন তাম্রশাসন) এবং ধর্মপাল সেই
সুযোগে কনৌজের সিংহাসনে ইন্দ্রায়ুধের প্রতিদ্বন্দ্বী চক্রায়ুধকে ক্ষমতা দখলে
সাহায্য করেন। দেবপালের মুঙ্গের তাম্রশাসন এবং ধর্মপালের খালিমপুর
তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, কনৌজ সহ উত্তর ভারতের এক বিশাল অঞ্চলের ওপর ধর্মপালের
নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ধর্মপাল যখন চক্রায়ুধকে কনৌজের সিংহাসনে বসান তখন ভোজ,
মৎস্য, মদ্র, কুরু, যদু, যবন, অবন্তি, গান্ধার, প্রভৃতি অঞ্চলের রাজারা সম্মানের
সঙ্গে তা অনুমোদন করে। ধর্মপালের এই কৃতিত্বের কথা মাথায় রেখে একাদশ শতকের গুজরাটী
কবি মোঢ়লদেব তাঁর ‘উদয়সুন্দরী কথা' কাব্যে ধর্মপালকে ‘উত্তরাপথস্বামী’ বলে বর্ণনা করেছেন। উত্তর ভারতের এক বিশাল অঞ্চলে
ধর্মপালের এই নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কেননা রাষ্ট্রকূট রাজ তৃতীয় গোবিন্দের
হাতে তিনি ও চক্রায়ুধ পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন (সঞ্জন অনুশাসন)। ৮০৫ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ উত্তর ভারতে এই অভিযান চালিয়ে তৃতীয় গোবিন্দ ধর্মপাল
ছাড়াও সমসাময়িক প্রতিহাররাজ দ্বিতীয় নাভট্টকেও পরাজিত করে দাক্ষিণাত্যে
প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এরপর অবশ্য দ্বিতীয় নাভট্ট অধীনস্থ সামন্ত কক্ক, বাহকধবলদের
সহায়তায় ধর্মপালকে পরাজিত করেন (গোয়ালিয়ার, যোধপুর প্রভৃতি অনুশাসন) এবং জৈন প্রভাকর চরিত
গ্রন্থ অনুসারে কনৌজে রাজধানী স্থাপন করেন।
ধর্মপালের উত্তরাধিকারী ছিলেন দেবপাল যার রাজত্বকালের
ইতিহাস জানা যায় নারায়ন পালের বাদল স্তম্ভলেখ, দেবপালের মুঙ্গের লেখ, ভাগলপুর লেখ,
সুলেমান আল মাসুদ প্রমুখ লেখকের বর্ণনা থেকে। বাদল স্তম্ভলেখ
অনুসারে দেবপাল গুর্জর ও দ্রাবিড় রাজকে পরাজিত করেছিলেন। দেবপাল সম্ভবত দ্বিতীয়
নাগভট্টের রাজত্বের শেষ দিকে অথবা নাগভট্টের পুত্র রামভদ্রের সময়কালে প্রতিহার ভোজদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করে থাকতে পারেন। তবে পরবর্তী প্রতিহাররাজ মিহির ভোজ জনৈক্য কলচুরি
সামন্তের সহায়তায় দেবপালকে পরাজিত করেছিলেন। তিব্বতরাজ রাল-পা-চান দেবপালের সময় বাংলা অভিযান করেছিলেন এবং এই
অভিযান সামলাতে বিপর্যস্ত দেবপাল প্রতিহারদের বিরুদ্ধেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে দেবপাল বারাণসী
পর্যন্ত অঞ্চলে তাঁর অধিকার বজায় রেখেছিলেন। দেবপালের পর থেকেই
বাংলা বিহারের পালরা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। পরবর্তী রাজা প্রথম
শূরপাল (মহেন্দ্র পাল?) এবং পরবর্তী রাজা বিগ্রহপালের সময় পালরা ত্রিশক্তি সংঘর্ষে অংশ না নিলেও বিগ্রহপালের
পুত্র প্রথম নারায়ন পাল রাষ্ট্রকূট ও প্রতিহার রাজাদের আক্রমণের সামনে পড়েন। রাষ্ট্রকূটরাজ
অমোঘবর্ষ (নিরুর লেখ) এবং প্রতিহাররাজ মহেন্দ্রপাল তাঁকে পরাজিত করেছিলেন। প্রতিহার রাজ
মহেন্দ্রপাল মগধ ও গৌড় অধিকার করে নিয়েছিলেন বলে পাটনা ও গয়ায় প্রাপ্ত কিছু
লেখ থেকে জানা যায়। তবে নারায়ণপাল তাঁর রাজত্বের শেষ দিকে মগধ ও গৌর
পুনরুদ্ধার করেছিলেন। নারায়ন পালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রাজ্যপাল ও পুত্র
দ্বিতীয় গোপালের সময়কালে পালরা মগধ ও গৌড়ে তাঁদের অধিকার বজায় রেখেছিলেন এবং
পশ্চিম দিকে বিক্ষিপ্ত কিছু আক্রমণ চালিয়েছিল। রাজ্যপালের
সমসাময়িক রাষ্ট্রকূট রাজ তৃতীয় ইন্দ্র প্রতিহার রাজ মহীপালকে পরাজিত করেছিলেন
এবং কনৌজ লুন্ঠন করেছিলেন। ৯১৬ খ্রিস্টাব্দের এই রাষ্ট্রকূট অভিযানের ফলে
গুজরাট প্রতিহারদের হস্তচ্যুত হয় এবং তারা দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। অন্যদিকে চান্দেল্ল,
কলচূরিদের আক্রমণে পালরাও ঘর সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তৃতীয় ইন্দ্রের পর
রাষ্ট্রকূট রাজারা দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে দশম শতাব্দীর প্রথম
ভাগে কনৌজকে কেন্দ্র করে ত্রিশক্তি সংঘর্ষের অবসান ঘটে।
পশ্চিম এশিয়ার জাতিগুলি যেমন ব্যাবিলনকে কেন্দ্র করে লড়াই
করেছিল, জার্মান জাতিসমূহ যেমন রোম নগরীকে দখল করার জন্য নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে
লিপ্ত হয়েছিল তেমনি পাল-প্রতিহার- রাষ্ট্রকূটরাও কনৌজকে দখলকে তাদের সাম্রাজ্যবাদের চরম
লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছিল। গঙ্গা-যমুনা দোয়াবে অবস্থিত কনৌজের উর্বর মৃত্তিকা এবং উত্তর
ভারতীয় বাণিজ্য পথের মধ্যে অবস্থান কনৌজের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান ও এই অঞ্চলটিকে
টানাপোরেনের কেন্দ্রে পরিণত করেছিল। তাই কনৌজের তিন দিকে অবস্থিত এই তিন শক্তি বারবার
কনৌজ দখলের চেষ্টা করে যদিও ধারাবাহিকভাবে কনৌজকে দীর্ঘকাল ধরে দখল রাখতে কোন
শক্তিই সেভাবে সফল হয়নি। বরং নিরন্তর লড়াই চালাতে গিয়ে তিনটি রাজবংশই দুর্বল হয়ে
পড়েছিল প্রচুর সেনা পুষতে গিয়ে অর্থনীতিকে দুর্বল করেছিল। অধীনস্থ সামন্ত
শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় সামন্ত রাজাদের ক্ষমতা ও মর্যাদাও বৃদ্ধি
পেয়েছিল। রাষ্ট্রকূটরা কয়েকবার কনৌজ অধিকার করে সম্পদ লুণ্ঠন করলেও
তা খুব একটা কাজে লাগেনি কেননা দাক্ষিণাত্যে তাদের অবস্থানও ক্রমশ দুর্বল হয়ে
পড়েছিল এবং পরবর্তী চালুক্যরা সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কল্যাণকে কেন্দ্র করে
একটি বড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। দশম শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ থেকেই গুর্জর
প্রতিহারদের অবক্ষয় দ্রুততর হয় এবং প্রতিহারদের রাজ্যের মধ্যে অনেকগুলি ক্ষুদ্র
রাজ্য গজিয়ে ওঠে, যেমন - মালবের পরমার রাজ্য, বন্দেলখন্ড বা জেজাভক্তির চান্দেল্ল রাজ্য, মধ্যভারতের চেদি
রাজ্য, গুজরাটে চৌলক্য এবং সোলাঙ্কি রাজ্য ইত্যাদি। পূর্বভারতে পালরাও যথেষ্ট দুর্বল
হয়ে পড়েছিল এবং রাজনৈতিক অনৈক্যের এই বাতাবরনে ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিরা
কনৌজকে দখল করে নেয়।
উত্তর ভারতে মুসলিম আক্রমণের প্রাক্কালে সেখানকার রাজনৈতিক
অবস্থা কেমন ছিল তা জানার জন্য খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত
ইতিহাসকে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে। খ্রিস্টীয় দশম
থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত ববাংল-বিহারের একটা অংশে পাল বংশ তাঁদের শাসন বজায়
রেখেছিল। নালন্দা, বোধগয়া, ইমাদপুর, কুমিল্লা, বানগড়, বেলোয়া প্রভৃতি
স্থানে প্রাপ্ত লেখ থেকে পরিষ্কার যে দশম শতাব্দীর শেষ দিকে চান্দেল্ল ও কলচূড়ি
আক্রমণে বিপর্যস্ত পাল সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন প্রথম মহিপাল (৯৭৭-১০২৭খ্রিস্টাব্দ)। মহিপাল বরেনন্দ্রী, উত্তর রাঢ় এবং মগধ ও বারাণসী অঞ্চলের উপর পুনরায় অধিকার
স্থাপন করলেও তাঁর আমলেই দক্ষিণ ভারতের শক্তিশালী চোলরাজ রাজেন্দ্র চোলের বাহিনী
বাংলা অভিযান করেছিল, এছাড়াও কলচূরি রাজ গাঙ্গেয়দেব বাংলা আক্রমণ করে মহিপালকে
পরাজিত করেছিলেন। মহিপালের পর যথাক্রমে নয়পাল এবং তারপর তৃতীয় বিগ্রহপাল পাল সিংহাসনে বসেন। তৃতীয় বিগ্রহ
পালের সময় কলচূরি রাজ কর্ণ এবং কল্যাণী চালুক্যরাজ ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য
বাংলা আক্রমণ করে পালদের আরো কোণঠাসা করে তোলেন। তৃতীয় বিগ্রহপালের পরবর্তী দুজন রাজা হলেন
দ্বিতীয় মহীপাল এবং দ্বিতীয় শূরপাল। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত থেকে জানা যায় যে ১০৭০-৭২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই দুই রাজার শাসনকালে বরেন্দ্রী
অঞ্চলে কৈবর্তরা দিব্যর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেছিল। কৈবর্তরা জেলে অথবা কৃষক ছিল এ নিয়ে পণ্ডিতদের
মধ্যে মতভেদ আছে। দ্বিতীয় মহীপালের অপশাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সামন্তদের
ঐক্যবদ্ধ করে দিব্য কৈবর্ত বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং বরেন্দ্রী অঞ্চলে
স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। দিব্যর পর বরেন্দ্রীর রাজা হয়েছিল তাঁর ভাই রুদোক
এবং রুদোকের পুত্র ভীম। রামচরিত থেকে জানা যায় যে ১০৭২ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসে
মহীপালের ভাই রামপাল বীরগন, জয়সিংহ, বিক্রমরাজ, লক্ষ্মীশূর প্রমুখ সামন্ত রাজাদের সহায়তায় এবং
মথনদেব, শিবরাজদেবের সাহায্যে কৈবর্তদের পরাজিত করেন এবং ভীমকে হত্যা করেন। রামপাল
বরেন্দ্রী, গৌড়, কামরূপ ও উড়িষ্যায় নিজ প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং মধ্যদেশ থেকে
প্রেরিত গহড়বল আক্রমণ এবং সাম্রাজ্য মধ্যে কর্ণাট ক্ষত্রিয়দের উত্থানকে সাফল্যের
সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন। রামপালের পরবর্তী পাল রাজারা ছিলেন কুমারপাল, তৃতীয় গোপাল,
মদনপাল ও গোবিন্দপাল এরা কেউই তেমন উল্লেখযোগ্য রাজা ছিলেন না। কেননা ততদিনে
বাংলায় সেনরা যথেষ্ট শক্তি বৃদ্ধি ঘটিয়েছিল।
নৈহাটি, ব্যারাকপুর ইত্যাদি তাম্রশাসনে থেকে জানা যায় যে,
এই বংশের প্রথম দুই শাসক ছিলেন সামন্তসেন ও হেমন্তসেন পালরা কৈবর্ত বিদ্রোহ দমনে
ব্যস্ত থাকার সময় হেমন্তসেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেন বংশের শ্রেষ্ঠ
শাসক বিজয় সেনের (১০৯৫-১১৫৮খ্রি) কৃতিত্বের কথা জানা যায় ব্যারাকপুর লেখ, বল্লালচরিত ও দেওপাড়া প্রশস্তি
থেকে। বর্তমান নদীয়ার অন্তর্গত নবদ্বীপ বা বিজয়পুর বিজয়সেনের সময়কাল থেকে সেনদের
রাজধানী ছিল। উমাপতিধর রচিত দেওপাড়া প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে বিজয়
সেন নান্য বা মিথিলার কর্ণাট শাসক, গৌড়রাজ মদনপাল, কামরূপ রাজ এবং কলিঙ্গের রাজগণকে পরাজিত
করেছিলেন। বিজয় সেনের পুত্র বল্লালসেন বাংলা ও পূর্ব বিহারের উপর তার
নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন এবং মিথিলায় একটি অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। সেন বংশের শেষ
গুরুত্বপূর্ণ শাসক ছিলেন লক্ষণসেন (১১৭৯-১২০৬খ্রি)। ভাওয়াল ও মাধাইনগর
তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে তিনি গৌড়, কামরূপ, কলিঙ্গ ও কাশীর রাজাদের পরাজিত করেছিলেন, পুরী, বারাণসি ও এলাহাবাদে
জয়স্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন। তবে মিনাহাজউদ্দিনের তাবাকাৎ-ই-নাসিরী এবং ফুতাহা-উস-সালাতিন নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, ইখতিয়ারউদ্দিন-মুহম্মদ-বিন-বখতিয়ার খলজী নামক একজন তুর্কি
নেতা মগধ জয় করার পর মাত্র ১৮জন অশ্বারোহীকে নিয়ে নদীয়ায় আসেন এবং অতর্কিত
আক্রমণ চালিয়ে নদীয়ার রাজপ্রাসাদ দখল করেন, লক্ষণসেন পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি এবং
পরে তার উত্তরাধিকারী বিশ্বরূপ সেন এবং অন্যান্যরা ১২৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
রাজত্ব করেন। তারপর সেন বংশের পতন ঘটে। তবে মিনহাজ এর
বিবরণ ঐতিহাসিকরা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেননি কেননা অন্য কোথাও ইখতিয়ারউদ্দিন এর
নদীয়া জয়ের কথা লিপিবদ্ধ নেই। পাল সেন যুগে ভাগীরথীর পূর্ব দিকে বক্ষ-সমতটে চন্দ্র ও বর্মন বংশ রাজত্ব
করেছিল বলে সমসাময়িক ঐতিহাসিক উপাদান থেকে জানা যায়।
দশম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে মধ্য ও পশ্চিম ভারতে অনেকগুলি
রাজবংশ রাজত্ব করেছিল দশম শতক পর্যন্ত কাশ্মীরকে অধিকার রেখেছিল উৎকল রাজবংশ (যে বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন
অবন্তি বর্মন)পরে লোহর রাজবংশ, বুন্দেলখন্ড বা জেজভুক্তি শাসন করেছিল চান্দ্রেল্ল বংশ,
এলাহাবাদের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ত্রিপুরি অঞ্চলে রাজত্ব করত কলচূড়ি বংশ, মালব শাসন করত পরমার বংশ গুজরাটের
একটা অংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল চালুক্যবংশের হাতে তাদের রাজধানী ছিল আনহিলপাঠক জয়পুর নিকটবর্তী
রাজত্ব করত চাহমান বা চৌহান বংশ কাবুল উপত্যকায় রাজত্ব করত হিন্দুশাহি বংশ তাদের
রাজধানী ছিল উদভান্তপুর, কনৌজকে অধিকার করে রেখেছিল গহরওয়াল রাজবংশ। বলাবাহুল্, উপরিক্ত
রাজবংশগুলি নিজেদের মধ্যে কোনরূপ সদ্ভাব বজায় রাখেননি বরং পারস্পরিক সংঘর্ষেলিপ্ত
ছিল। রাজনৈতিক অরাজকতার এই বাতাবরণে ঘুর (গজনীর পার্বত্য অঞ্চলের ছোট রাজ্য) এর শাসক মইজুদ্দিন
মহম্মদ বা মহম্মদ ঘুরি দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ভারত আক্রমণ করেছিলেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন