সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ১১ বছরের স্বৈরাচার

 

ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ১১ বছরের স্বৈরাচার বলতে কী বোঝো?

 ১৬২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম জেমসের মৃত্যুর পর প্রথম চার্লস সিংহাসনে বসেন তাঁর পিতার আমলের মতো তাঁর সময়েও পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজার বিরোধ দেখা দেয় এবং ১৬২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬২৯ খ্রিস্টাব্দ এর মধ্যে এই বিরোধ তুঙ্গে ওঠে তিনি তিনবার পার্লামেন্ট ডেকে ভেঙে দেন এবং পর ১৬২৯ থেকে ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ বছর পার্লামেন্ট না ডেকে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন শুরু করেন প্রথম চার্লসের শাসনকালের এই ১১ বছর ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ১১ বছরের সৈরতন্ত্র নামে পরিচিত

১৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে পার্লামেন্টের অধিবেশন ভেঙে দেবার পর চার্লস পার্লামেন্ট ছাড়াই শাসন পরিচালনা শুরু করেন তিনি দেশের যাবতীয় বিষয় পার্লামেন্টের এক্তিয়ার থেকে নিজ হস্তে গ্রহণ করেন এই দীর্ঘ ১১ বছরে পার্লামেন্ট হীন শাসনকালে তিনি বিভিন্ন পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেন চার্চের ওপর নিজে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার কথা ভাবেন এবং তাঁর আদেশ অমান্যকারীদের তীব্র শাস্তি দিতে প্রস্তুত হন রাজার এই স্বৈরাচারী শাসনের মূল স্তম্ভ হয়ে উঠেছিল প্রিভি কাউন্সিল, হাই কমিশন আদালত এবং স্টার চেম্বার কোর্ট, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে র্ল অ স্ট্যাফোর্ড এবং ধর্মীয় আর্চ বিশপ লর্ড প্রথম চার্লস-কে দারুন ভাবে সাহায্য করেছিল। এই ১১ বছরের তথাকথিত Tyrannical রাজত্বে রাজশক্তি যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল তা কিন্তু নয়, স্থানীয় প্রশাসনের ওপর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছিল দরিদ্র মানুষের প্রয়োজনে রাষ্ট্র বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং রাজসভায় শিল্পী চিত্রকারদের কদর বেড়েছিল

 অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া চার্লস নানা প্রক্রিয়ায় পরোক্ষ কর বাড়াতে আগ্রহী হন যেমন চার্লস 'টানেজ''পাউন্ডেজ' নামক আমদানি রপ্তানি আদায়ের উপর জোর দিয়েছিল ব্রিটেনে এক সময় নিয়ম ছিল যে বার্ষিক ৪০ পাউন্ড আয় যাদের হবে এমন জমির মালিকদের 'নাইটহুড' উপাধি নিতে হবে অনেকেই এই উপাধি গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে মোটা টাকা জরিমানা আদায় করা হয় যে সমস্ত রাজকীয় বন ছিল সেখানে কারোর অনুপ্রবেশ ঘটলে একটা বড় অঙ্কের জরিমানা হিসেবে ধার্য করা হত। কোন অভিজাত বংশীয় ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার উত্তরসূরির ওপরে একটা মোটা নজরানা ধার্য করা হয়েছিল কিন্তু যেহেতু বহুদিন ধরে এগুলির কোন প্রয়োগ ঘটেনি তাই নতুন করে এই ধরনের জরিমানা প্রচলন করার চেষ্টা সাধারণের মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি করে

 চার্লস তাঁর ১১ বছরের পার্লামেন্ট হীন শাসনে অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা মেটাতে শিপমানি আদায়ের উপর নির্ভর করেন জাতীয় ভিত্তিতে Ship money আদায় করতে প্রবৃত্ত হন শিপমানি হল এমন একটি কর যা রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিকে দিতে হত রাজকীয় নৌ বাহিনীর ভরণপোষণের প্রয়োজনে রাজ্যের সর্বোচ্চ এই কর আদায় শুরু হলে রাজার আয় বেড়েছিল বহুগুণ কিন্তু মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়েছিল তারও বেশি

 আর্থিক নীতি পাশাপাশি ariminianism ছিল বিক্ষোভের আরেকটি কারণ অনেকেই ভেবেছিল চার্লস সচেতনভাবেই ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে এলিজাবেথীয় ধর্ম মীমাংসাকে ধ্বংস করতে চাইছেন পিউরিটাদের সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছিল যখন উইলিয়াম লর্ড (William Laud) নামে একজন আরিমিনিয়ান যাজককে ক্যান্টারবেরির আর্চ বিশপ হিসাবে নিয়োগ করা হল। লর্ডের অনুগামীরা আঞ্চলিক গির্জাগুলিতে ক্যাথলিক আচার অনুষ্ঠানের পুনঃপ্রচলন শুরু করলেন রানী হেনরিয়েটা মারিয়া ছিলেন ক্যাথলিক এবং তাঁকে কেন্দ্র করে রাজসভায় একটি ক্যাথলিক পোপবাদী গোষ্ঠীর উপস্থিতি পিউরিটানদের আতঙ্কিত করে তুলেছিল।

 স্কটল্যান্ডের রাজা হিসেবে তিনি পিউরিটানপন্থী স্কটল্যান্ডে ইংল্যান্ডের 'Prayer Book' প্রচলন করতে আগ্রহী হন ফলে স্কটল্যান্ডে একটা জাতীয় বিদ্রোহ ঘটে এই বিদ্রোহ দমনের জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল আর্থিক সমস্যার সমাধানের জন্য ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে এপ্রিল মাসে পার্লামেন্ট আহ্বান করেন এবং স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে

 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...