প্রাচীন
জাতি বর্ণগত বৈষম্যের মধ্যে সমাজ প্রতিনিয়ত নানা বাধা বিপত্তির মধ্য শ্রেণিগত
ঘটেছে ও ঘটে চলেছেন। এই বৈষম্য ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া এবং
জাতিগত দিক
থেকে নিম্ন বর্ণের মানুষ নিজেদের দাবি-দাওয়া, অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। তাদের এই প্রচেষ্টা
পরবর্তী সময়ে ঔপনিবেশিক যুগে ভারত তথা বিশ্বের অন্যান্য দেশে আন্দোলনের সূচনা
ঘটেছে। আফ্রিকার আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের সামাজিক সাধীকারের দাবিতে কয়েক
শতাব্দী ধরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ঘটেছে। বহু ক্ষেত্রে সাফল্য ঘটেছে আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা
এসেছে।। অনেক অত্যাচার, নিপীড়ন, নিগ্রহের শিকার হয়েছে কৃষ্ণাঙ্গরা, অনেকের প্রাণহানিও ঘটেছে। আমেরিকার
কৃষ্ণাঙ্গ সংগ্রামের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ড্রেট
স্কট প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু আমেরিকার
সুপ্রিম কোর্ট ড্রেট স্কট এর আবেদনের ভিত্তিতে ঘোষণা করে যে, আফ্রিকার বংশোদ্ভুত কোন
ব্যক্তির আমেরিকার নাগরিকত্বের অধিকার নেই, ফলে স্বাধীনতা পাবে না। ড্রেট স্কটের স্বাধীনতার প্রয়াস ব্যর্থ হয়। এর প্রায় দুই বছর
পর দাস প্রথার অবসানের প্রবক্তা জন ব্রাউন হার্পার ফেরিঘাটে হানা দেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল কেবলমাত্র
ক্রীতদাসদের মুক্তি দান নয়, তাদের সশস্ত্র করে তোলা। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা বেশি দূর এগোতে পারেনি। কারণ তাঁর এই পরিকল্পনা প্রকাশিত হলে গ্রেফতার হন
এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্তির জন্য তিনি শহিত হন ও অমরত্ব লাভ করেন। এর ঠিক দুই বছর পর আমেরিকাতে
সূচিত হয় অত্যন্ত তীব্র এবং রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ। আমেরিকার এই রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মূল কারণ
দক্ষিণের এগারটি ক্রীতদাস প্রথার সমর্থক প্রাদেশিক রাজ্য ক্রীতদাস প্রথার প্রশ্নের ইউনিয়ন থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের আমেরিকার কনফেডারেট স্টেট গঠন করে।
১৮৬০
খ্রিস্টাব্দে দাসত্ব বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী আব্রাহাম লিঙ্কন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দক্ষিণী প্রাদেশিক রাজ্যগুলিকে ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার
চেষ্টা করেন। ১৮৬৩
খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন দক্ষিণের
বিদ্রোহী রাজ্যগুলিকে দাপ্রথার অবসান ঘটানোর কথা বলে মুক্তির ঘোষণা বা এমানসিপেশন প্রোক্লেমেশন
জারি করে। শ্বেতাঙ্গ
কৃষ্ণাঙ্গ লড়াইয়ে প্রায় কুড়ি হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, অতীতের তুলনায় পরবর্তী সময়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মানবাধিকার ও
নাগরিকত্ব অর্জনের লড়াই অনেক বেশি গতিবেগ সঞ্চার করে। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে উদারচেতা নাগরিকেরা তাদের কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলনের
সমর্থনে এগিয়ে আসেন।
১৮৬৫
খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ১৩ তম সংশোধনী গৃহীত হয়। এরফলে সমস্ত রাজ্যে দাসপ্রথা আইনগতভাবে
নিষিদ্ধ করা হয়। আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার দানের
বিরোধিতা করে আসছিল। শ্বেতাঙ্গরা তক্কে তক্কে ছিল
আব্রাহাম লিঙ্কনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে। জন উইলকাস বুথ ওয়াশিংটনের ফোর্ট থিয়েটারে লিঙ্কনকে হত্যা করে। অবশ্য
লিঙ্কনের মৃত্যুর পূর্বে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটদানের
অধিকার দিয়ে যান কিন্তু লিঙ্কনের
উত্তরাধিকারী অ্যান্ডু জনসন কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার
বাতিল করে দেন। এর ফলে
দক্ষিণের প্রাক্তন বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজ্যগুলি প্রবল বর্ণবিদ্বেষী হয়ে ওঠে এবং 'কু ক্লাক্স ক্লান' সংগঠন
গঠন করে। এই পর্বে
আমেরিকার নাগরিক অধিকারের লড়াই তীব্রতর হয়ে ওঠে যা জনমতে তার প্রভাব প্রবলভাবে
পরিলক্ষিত হয়। আমেরিকার ১৫ তম
সংবিধান সংশোধনীতে জনগণের ভেটো উল্টে
দিয়ে ঘোষণা করা হয় যে জাতি বর্ণ বা পিতৃপুরুষের দাসত্বের জন্য কাউকে ভোটাধিকার
থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
আমেরিকার
কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের দাবির মধ্যে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় একটি যুগান্তরকারী
ঘটনা ঘটে, দক্ষিণ ক্যারোলিয়ান জোসেফ রেইনি
আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। তার এই নির্বাচনের ফলে সারাদেশে কৃষ্ণাঙ্গরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে মরণপণ লড়াই
করতে উদ্যোগী হন। ১৮৭৫
খ্রিস্টাব্দে 'সিভিল রাইটস অ্যাক্ট' পাশ করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকল আমেরিকাবাসীকে
রেস্তোয়া, থিয়েটার, সরকারি
পরিবহন ব্যবস্থায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমানাধিকার দেওয়া হয়। বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সংযোজন ঘটে কৃষ্ণাঙ্গদের জুরি সদস্য হওয়ার
বাধা দূর হয়ে যায়। তবে এই আইন
কার্যকর করা হলে চারদিক থেকে নানা প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। অন্যান্য প্রতিরোধ হলে হয়তো সহজে ঠেকানো যেত, কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট শ্বেতাঙ্গদের
প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখিয়ে এই আইনটিকে অসংবিধানিক বলে ঘোষণা করে। এর ফলে আমেরিকার সমাজে
বৈষম্য যা ছিল শুধু তাতে সীমাবদ্ধ না থেকে তা আরও তীব্রতর
হয়ে ওঠে। টেনেসী রাজ্য
শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিভাজন করার পক্ষে ভোট দেয়। এর পরবর্তী দুই দশক ধরে
দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্যগুলি প্রতিযোগিতায় একে অপরকে পেছনে ফেলে কৃষ্ণাঙ্গদের
প্রতি বৈষম্যমূলক নানা প্রকাশ আইন কানুন প্রণয়ন ও প্রয়োগ ঘটাতে শুরু করে। তা সত্ত্বেও কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের দমিয়ে রাখা সম্ভব
হয়নি বরং ক্রমশ তা কঠিন থেকে
কঠিনতর হয়ে ওঠে। নানা ক্ষেত্রে
তারা দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখেন। এমন একটি উদাহরণ দেখা যায় ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মেথু
হেনসন নামে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান অধিবাসী প্রথম উত্তর মেরুতে আমেরিকার পতাকা উড়িয়ে
ছিলেন।
আমেরিকায় বর্ণবিদ্বেষের নানা ঘটনা ঘটতে
থাকে। শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের উপর
জোর করে অন্যায় ভাবে বিচারের নামে প্রহসন করে শাস্তি বিধান করেন। এমনও অনেক উদাহরণ আমেরিকান সমাজে
পরিলক্ষিত হয়। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে আলবামায় এমন একটি কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধীতার ঘটনা ঘটে। ১৩ থেকে ২১ বছর বয়সী নয় জন কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর ও তরুণ আলবামার গ্রামের মধ্য দিয়ে
খোলা গাড়িতে চড়ে যাচ্ছিল। তাদের গ্রেফতার করে
অন্যায় ভাবে দুজন শ্বেতাঙ্গ মহিলার শীলতাহানি করা হয়েছে এমন অভিযোগে অভিযুক্ত
করা হয়। বর্ণবিদ্বেষী বিচারব্যবস্থায়
দ্রুত তাদের দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ঘোষণা করা
হয়। কিন্তু এই অমানবিক দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে
সুপ্রিম কোর্টে মামলা গেলে পূর্বের রায় বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ জুরিদের চাপের কাছে মাথা
নত করে পুনরায় বিচার শুরু হয় এবং ওই কৃষ্ণাঙ্গদের আবারো দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই ঘটনার পর সারা দেশে কৃষ্ণাঙ্গ
সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
শ্বেতাঙ্গদের কাছে কৃষ্ণাঙ্গরা হীন প্রতিপন্ন হলেও তাদের যোগ্যতা বা প্রতিভার
অভাব ছিল না। কৃষ্ণাঙ্গ
প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন অলিম্পিকে জেসি আওয়েন্স নামে
একজন কৃষ্ণাঙ্গ চারটি স্বর্ণপদক লাভ করেন। কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলন কখনো থেমে থাকেনি তাতে জোয়ার ভাটা এসেছে অবশ্য। কখনো কখনো ঘটনা বিশেষকে কেন্দ্র করে সারা আমেরিকা
জুড়ে বিপ্লব প্রতিবিপ্লবে উত্তাল হয়ে উঠেছে। যেমন ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে রোজা পার্কস্ নামে একজন
কৃষ্ণাঙ্গ বাসে ওঠে ভাড়া দিতে গিয়ে হাতের মানি পার্সটি পড়ে গেলে তিনি পার্সটা
তোলার জন্য শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত একটি আসনে বসলে বাস চালক অত্যন্ত ক্ষিপ্ত
হয়ে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেয় এবং খুব দ্রুতগতিতে বাস চালিয়ে চলে যায়।
১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ভার্জিনিয়া প্রদেশের প্রিন্স এডোয়ার্ড
কাউন্টির মোশান হাইস্কুলের শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র সম্প্রদায়ের
মধ্যে তুমুল বিক্ষোভ সঞ্চারিত হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের শ্বেতাঙ্গ ছাত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার বিরুদ্ধে
কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে
কৃষ্ণাঙ্গরা সব সময় তাদের অধীনে থাকবে, সেখানে প্রতিবাদ প্রতিরোধ কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। কৃষ্ণাঙ্গ নেতারা
ছাত্রদের বুঝিয়ে প্রতিবাদের পথ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেন তবে তা ফলপ্রসু
হয়নি। কৃষ্ণাঙ্গ সমাজের the National association
for the advancement of Colored people (NAACP)
নেতৃত্ব ছাত্রদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।
১৯৫১
খ্রিস্টাব্দে T R M Howard এর নেতৃত্বে
Regional Council of Negro Leadership (RCNL) মিসিসিপিতে গ্যাস
স্টেশনগুলির বিরুদ্ধে এক সফল বয়কট আন্দোলন সংগঠিত করেন। কারণ তারা কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করতে অস্বীকার
করেছিল। একের পর এক
কৃষ্ণাঙ্গ শ্বেতাঙ্গ বিরোধ সুপ্রিম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য করেছিল। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই মে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট
গ্রাউন্ড বনাম বোর্ড অফ এডুকেশন অফ টোপেকা কনসাস মামলার রায়দান করে বলেন যে
স্কুলের শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের মধ্যে বিভাজন অসাংবিধানিক। এই রায়ে বলা হয়েছে যে, সরকারি
স্কুলে এই বৈষম্য কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের পক্ষে সত্যিই খুবই ক্ষতিকারক। এই রায়ের ফলে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই
করে এবং বিভিন্ন স্কুলে ঘটে চলা বর্ণবৈষম্যের অনেক সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে
আদালতের সামনে প্রেস করে। কৃষ্ণাঙ্গদের এই জয় অবশেষে আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এক
সুদুর প্রসারী প্রভাব বিস্তার করে।
কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের অধিকার আদায় করে নেবার বিষয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণাঙ্গ
রমণী রোজা পার্কস্ আলবামার মন্টেগোমারিতে বাসের আসনে বসেন। শ্বেতাঙ্গ যাত্রী উঠলে তিনি আসন ছেড়ে দিতে অসম্মত হয়। তার উপর প্রবলভাবে চাপ
সৃষ্টি করা হলেও তিনি তার আসনে বসে থাকেন। বর্ণবিদ্বেষী মন্টেগোমারিতে ১৯০০
খ্রিস্টাব্দে নগরে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাসে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ বৈষম্যমূলক আসন ব্যবস্থা চালু করা
হয়। কন্ডাক্টরদের বাসে আসন নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার দেওয়া হয়। কন্ডাক্টররা বাসের প্রথমদিকের চারসারি শ্বেতাঙ্গদের
জন্য সংরক্ষিত করে রাখত, কৃষ্ণাঙ্গদের
জন্য বিশেষভাবে রঞ্জিত সামান্য কিছু আসন থাকত। তবে শ্বেতাঙ্গ যাত্রী না থাকলে কৃষ্ণাঙ্গদের বসার সুযোগ
দেওয়া হত। কিন্তু
এক্ষেত্রে দেখা যায় যে যাত্রীদের তিন চতুর্থাংশ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের ভুক্ত, তা
সত্ত্বেও শ্বেতাঙ্গদের দিয়ে সামনের আসনগুলি পূরণ করা হত, তবে তা পূর্ণ না হলে কৃষ্ণাঙ্গ যাত্রী মাঝামাঝি আসনে বসার
সুযোগ পেত। আবার শ্বেতাঙ্গ
যাত্রী বেশি হলে কৃষ্ণাঙ্গদের পেছনের আসনে সরে যেতে হত। এমনও দেখা যায় যে শ্বেতাঙ্গ যাত্রী সামনের আসনে থাকলে কৃষ্ণাঙ্গ
যাত্রী সামনের দরজা দিয়ে উঠে বাস ভাড়া দেবার পর নেমে গিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে
বাসে প্রবেশ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে
চলে আসা এই প্রথা কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে অনৈতিক মনে হলেও তাদের প্রতিবাদের সাহস ছিল না।
শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের আমেরিকা থেকে
একেবারে উৎখাত করে দেবার যে দৃঢ় সংকল্প করেছিল তাকে বাস্তবায়িত করার নানা
ফন্দিফিকির করেও যখন সফল হতে পারল না তখন নানা বৈষম্যের বোঝা তাদের উপর চাপাতে
চাইল, যেমন ট্রেনে বাসে যাতাযাতের ক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভৃতি। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল গার্লস মেন
আরাকান এর লিটল রকে নয় জন কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রের ভর্তি
রুখে দেয় শ্বেতাঙ্গরা। সারা
দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয় এবং গভীর সংকট সৃষ্টি হয়। এইরূপ পরিস্থিতিতে আরাকানসের গভর্নর অর্ভাল ফ্যেবুয়াস ৪ ঠা সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল গার্ডকে ডেকে নজন আফ্রিকান আমেরিকান
ছাত্রকে স্কুলে ঢুকতে বাধা দিতে বলেন। কারণ এই নজন লিটল রক সেন্ট্রাল হাই স্কুলে
নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য মামলা করেছিল। এরা প্রত্যেকে তাদের মেধায় ও যোগ্যতায় ওই স্কুলে পড়ার
সুযোগ পেলেও শ্বেতাঙ্গরা তা ভালো চোখে দেখেনি। বিদ্যালয়ের প্রথম দিন কৃষ্ণাঙ্গ এক ছাত্রী স্কুলে গেলে
শ্বেতাঙ্গ প্রতিবাদীদের নিগ্রহের শিকার হন। অন্যান্যরা আগে খবর পেয়ে সতর্ক হয়ে গিয়েছিল যার কারণে
বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়নি। মেয়েটিকে
পুলিশ সুরক্ষার জন্য নিয়ে যায় তিন সপ্তাহ পর সামরিক পহরার মধ্যে বিদ্যালয়ের পঠন
পাঠন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি আইসেন আওয়ার গভর্নরের ন্যাশনাল গার্ডকে আদেশের কথা
শুনে অসন্তুষ্ট হয় এবং তিনি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে বলবৎ করার জন্য ন্যাশনাল গার্ডকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার
নির্দেশ দেন। ওই ৯ জন শিক্ষার্থীর সুরক্ষার
জন্য ১০১ নম্বর এয়ারবর্ন ডিভিশনকে পাঠান। সরকারি সহায়তায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে সক্ষম হলেও
প্রতিনিয়ত শ্বেতাঙ্গ সহপাঠীদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়, গায়ে থুতু সহ্য করতে হয়, নিত্যদিনের এই হায়রানি সহ্য করে ক্লাস করা
তাদের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে। ওই
শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেবার নানা কৌশল প্রয়োগ করা হয়। তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় শ্রেণিকক্ষে কোন এক
শ্বেতাঙ্গ সহপাঠীর উদ্দেশ্যে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়েছে। আবার পরবর্তীতে একজনের বিরুদ্ধে অন্য সহপাঠীকে তিরস্কার
করেছে এই অভিযোগে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ৯ জন কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত আর্নেস্ট গ্রীন
নামে একজন স্নাতক হতে পেরেছিল। এই
বৈষম্যভিত্তিক আন্দোলনের মধ্যে 'সাদার্ণ ক্রিশ্চান
লিডারশিপ কনফারেন্স' মার্টিন লুথার কিং
এর সভাপতিতে স্থাপিত হয়েছিল। তিনি
গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অহিংস গণআন্দোলনের পথে নাগরিক অধিকার আদায়ের
লড়াই শুরু করেছিল।
মার্টিন
লুথার কিং এর অহিংসতার নীতি কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র সমাজের আলোড়ন ফেলেছিল। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ উত্তর ক্যারোলিনায় গ্রীমস
বোরোতে উলসওয়ার্থ স্টোরের সামনে ছাত্ররা অবস্থান সত্যাগ্রহ করলে অধিকার রক্ষার
আন্দোলনে গতিবেগ সঞ্চারিত হয়। এই বছর
১লা ফেব্রুয়ারি চারজন ছাত্র ওই স্টোরের সামনে কৃষ্ণাঙ্গদের লাঞ্চ কাউন্টারে
বৈষম্য করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ধরনায় বসেছিল। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের সিভিল রাইটস অ্যাক্ট অনুসারে সমস্ত আমেরিকাবাসী বর্ণ নির্বিশেষে রেস্তোয়া,
থিয়েটারে প্রবেশে সমান অধিকার পাবে। ফলে
কৃষ্ণাঙ্গরা স্টোর থেকে কিছু জিনিস কিনে রসিদটা রেখে
দেয়। তারপর লাঞ্চ
কাউন্টারে তাদের খাবার পরিবেশনের দাবি করে। শ্বেতাঙ্গ স্টোর মালিক খাবার পরিবেশন করতে অস্বীকার
করলে তারা রশিদ দেখায় এবং জানতে চায় টাকা দিয়ে স্টোরের জিনিস যেখানে কেনা যায়
সেখানে তাদের খাবার কেন পরিবেশন করা হবে না। তাদের এই ধরনা আমেরিকার
অন্যান্য স্থানে যেমন- জর্জিয়া, টেনেসী, রিচমন্ট, মসভিলে, আটলান্টা প্রভৃতি স্থানে ধরনা আন্দোলন
কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের উৎসাহিত করে।
কৃষ্ণাঙ্গদের এই ধরনা আন্দোলন অনেক জায়গায় পুলিশি অত্যাচারের সম্মুখীন হয়। পুলিশ বিক্ষোভ কারীদের দমন করে। লাঞ্চ কাউন্টারে শুরু হওয়া ধরনা আন্দোলন ওই স্থানের
সীমাবদ্ধ না থেকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে পার্ক,
থিয়েটার, লাইব্রেরী, সংগ্রহশালা, জাদুঘর
এবং অন্যান্য প্রকাশ্যস্থানে ছড়িয়ে
পড়ে। কৃষ্ণাঙ্গ
বিক্ষোভকারীরা উত্তর ক্যারোলিয়ান শ ইউনিভার্সিটিতে
মিলিত হয়ে স্টুডেন্ট নন ভায়োলেন্ড কো
অডিনেটিং কমিটি (Student non violent co-ordinating Committee) গঠন করে।
১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণাঙ্গরা শুরু করে
নাগরিক সম্মানের দাবি। এই আন্দোলনের
মুখ্য বৈশিষ্ট্য ছিল সুপ্রিম কোর্ট বাসে বৈষম্য বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে বয়ন্টন
বনাম ভার্জিনিয়া ৩৬৪ ইউনাইটেড স্টেট যে রায় দেয় তার কার্যকারিতা পরীক্ষায় এই আন্দোলন শুরু করে 'কোর' নামক একটি সংগঠন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে প্রথম
বাসযাত্রা শুরু হয় ওয়াশিংটন ডি সি থেকে যা ১৭ই মে নিউ আরলিয়েন্স পৌঁছানোর কথা। তবে কিন্তু পরিকল্পনা করা হয় ওই বাস যাত্রাগুলি
বর্ণবৈষম্যে জর্জরিত দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ এই রাজ্যগুলিতে বর্ণবিদ্বেষ চরম পর্যায়ে
পৌঁছেছিল, ফলে বাস-যাত্রীদের কাছে এই যাত্রা
প্রতিমুহূর্তে ছিল বিপদজনক। অ্যানিস্টনে একটি বাসে আগুন
নিক্ষেপ করা হয়। ব্রিমিংহামে
কুখ্যাত শ্বেতাঙ্গ সংগঠন 'কু ক্লাক্স ক্লান' এর সদস্যরা স্বাধীন বাস যাত্রীদের আক্রমণ করে। তবে এখানে কৃষ্ণাঙ্গরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় শেষ
পর্যন্ত পুলিশ এসে আক্রমণকারীদের ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। সাময়িকভাবে অ্যানিস্টন এবং ব্রিমিংহামে
বাস যাত্রা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। মন্টেগোমারীতে শ্বেতাঙ্গদের আক্রমণ ছিল অত্যন্ত তীব্র। কৃষ্ণাঙ্গদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের উপর নির্মম উৎপীড়ন করা হয়। অস্বাস্থ্যকর ঘুপছির মধ্যে রেখে গরমে পোড়ানো হত,
যথার্থ পরিমাণ খাবার দেওয়া হত না, আবার যদিও বা দেওয়া হত তাতে
অধিক পরিমাণে লবণ মিশিয়ে অখাদ্য করে পরিবেশন করা হত। এছাড়া ছিল নিত্যদিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
কৃষ্ণাঙ্গরা সকল অত্যাচার সহ্য করে নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে
অনর থাকে। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ভোটার নথিভুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে
মিসিসিপি রাজ্য সংবিধানে ভোটার রূপে নাম নথিভূক্তরণের জন্য বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা
হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল পোল ট্যাক্স বা নির্বাচনী রাজস্ব, বাসস্থানের
প্রমাণপত্র এবং সাক্ষরতার পরীক্ষা। যার কারণে কৃষ্ণাঙ্গদের নাম নথিভূক্ত করা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। শ্বেতাঙ্গরা
নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য কৃষ্ণাঙ্গদের বঞ্চিত করার এই অভিনব বিধিনিষেধ
আরোপ করে তবে শ্বেতাঙ্গদের এই প্রচেষ্টা দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব হয়নি। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে student non violent coordinating committee র সংগঠক রবার্ট মোজেস একটা পরিকল্পনা করেন যাতে কৃষ্ণাঙ্গদের নাম নথিভুক্ত করা যায়। এরফলে শ্বেতাঙ্গরা ক্রুদ্ধ
হয়ে তেড়ে আসে। শ্বেতাঙ্গদের দুটি সংগঠন
white citizan Council এবং
ku klux klan হিংসাত্মক নিপীড়ন শুরু করে। কৃষ্ণাঙ্গদের
মারধর, গ্রেফতার, শারীরিক অত্যাচার নিত্যকার বিষয় হিসেবে
প্রতিপন্ন হতে থাকে। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাধিকারের লড়াকু কর্মী হার্বাট লি কে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পরবর্তী
সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ স্বাধীনতার আন্দোলনকারীরা অনুভব করেন যে নাগরিক অধিকারের সব
সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। অন্যথায় সাফল্য লাভ করা কখনোই সম্ভব হবে না। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে
ফেব্রুয়ারি মাসে student nonviolent coordinating
committee এবং National association for the advancement of Colored people ঐক্যবদ্ধভাবে council of federated
organisation গঠন করে। পরবর্তী সময়ে সি ও এফ্ ও এর সঙ্গে
যুক্ত হয়েছিল Southern Christian leadership conference। ১৯৬২
খ্রিস্টাব্দের বসন্তে ভোটার রূপে নাম নথিভুক্তকরণের জন্য আন্দোলন শুরু করে। সাথে সাথে
শ্বেতাঙ্গরা আন্দোলনকারীদের উপর নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে গ্রেপ্তার, প্রহার, গুলি, লুঠতরাজ এবং খুনের মতো ঘটনা ঘটাতে
থাকে। যাদের উপর ভোটার নথিভুক্তি করনের দায়িত্ব তারা কৃষ্ণাঙ্গদের
সাক্ষরতার পরীক্ষা নিতে গিয়ে অন্যান্য কঠিন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের বাতিল
করে দেয়। কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকারের দাবির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে শ্বেতাঙ্গরা
তাদের অধীনে কর্মরত কৃষ্ণাঙ্গদের ছাটাই করতে থাকে। এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ ভাড়াটেদের বাড়ি
থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটার নথিভূক্তকরণ আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে দমন করা
সম্ভব হয়নি। ধীরে ধীরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণ-পশ্চিম জর্জিয়া, লুইসিয়ানা, আলাবামা এবং দক্ষিণ
ক্যারোলিনায়।
কৃষ্ণাঙ্গদের স্বাধিকার এবং স্বাধীনতার আন্দোলনে ভোটাধিকারের দাবি প্রধান অঙ্গ
হয়ে ওঠে। অবশেষে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে সিভিল রাইটস অ্যাক্ট পাশ হলে সকলের ভোটাধিকার
নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও শ্বেতাঙ্গরা বাধার সৃষ্টি করে। তবে ১৯৬৫
খ্রিস্টাব্দে ভোটিং রাইটস এর মাধ্যমে সকল প্রকাশ বাধাকে অপসারণ করা সম্ভব হয়েছিল।
একের পর এক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের নানা
নিপীড়নের হাত থেকে নিজেদের মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসেছিল। তাদের এই ঐক্যবদ্ধ
প্রচেষ্টায় কিছু সংখ্যক উদারচেতা শাসক মানবতাবাদের ভিত্তিতে কৃষ্ণাঙ্গদের
দাবি-দাওয়া প্রদানে এগিয়ে এসেছিল। এর সাথে আব্রাহাম লিঙ্কনের রিপাবলিকান পার্টি ওতপ্রত ভাবে যুক্ত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে
মার্টিন লুথার কিং এর মত একজন প্রতিভাবানের আবির্ভাব ঘটে। তিনি দেশকে প্রবলভাবে
নাড়া দেয়। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে লসএঞ্জেলস এর ওয়ার্ডস হাউসিং প্রজেক্টে একটি
রুটিন মাফিক মার্টিন কিং জান সেখানে পুলিশ এবং পথচারীর মধ্যে খন্ড যুদ্ধ বাদে। পরিণতিতে ৬ দিন
যাবত দাঙ্গা চলে মৃত্যু হয় ৩৪ জনের।
আমেরিকার গৃহযুদ্ধের অবসানের পর
কৃষ্ণাঙ্গরা বর্ণগত বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করে। কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার ভোটাধিকার স্বাধীনতার দাবি মেনে নেওয়া
হয়। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে নাগরিক অধিকার রক্ষার
আইনজীবী থারগুড মার্শাল প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ যিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। একই সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ রোবটস ওয়েভার্স গৃহ ও নগরোন্নয়ন
দপ্তরের সচিব নিযুক্ত হন। তবে তখনও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এমন স্বপ্ন দেখা সম্ভব ছিল
না যে কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হতে পারে। ১৯৬৮
খ্রিস্টাব্দে নাগরিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনের সবচেয়ে খ্যাত প্রবক্তা নোবেল প্রাপক
মাটির লুথার কিং জুনিয়র আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়, তবে
কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে। দেশের
নিরাপত্তা যাদের হাতে পরিচালিত হয় সেই সেনাবাহিনীতে উচ্চপদেও কৃষ্ণাঙ্গ নিয়োগ
করা হয়। ১৯৭১
খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল এল গ্রিভলি প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ
যিনি নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল নিযুক্ত হয়েছিল। আবার ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণাঙ্গ কলিন এল পাওয়েল প্রথম জয়েন্ট চিফ
অফ স্টাফ এর মত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হন।
কৃষ্ণাঙ্গদের
দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জায়গা দেওয়া হলেও শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গদের
বর্ণগত বিদ্বেষ অব্যাহত থাকে। ১৯৯২
খ্রিস্টাব্দে লসএঞ্জেলস এ কৃষ্ণাঙ্গ রডনি কিংকে চারজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার
প্রহার করে ভিডিও টেপ করা সত্ত্বেও দোষীদের জুরি অব্যাহতি দেন, এর প্রতিবাদে শহরে দাঙ্গা শুরু হয়। এই দাঙ্গা এত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যে তিন দিনে
প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয় এবং ৮০০০ ব্যক্তি গ্রেফতার হন।
আমেরিকার
বর্ণবিদ্বেষী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা
অব্যাহত রাখে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি
জর্জ বুশ আফ্রিকান আমেরিকানকে তার মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গ পাওয়েল হন সেক্রেটারি অফ
স্টেট, কন্দলিজা রাইস বিদেশ দপ্তরের পরামর্শদাতা এবং রভারিক পেইগ হন শিক্ষা সচিব।
কেবল কৃষ্ণাঙ্গরা আমেরিকার মন্ত্রিসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২০০৮ সালে
আমেরিকায় প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হন বারাক হোসেন ওবামা। তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য ২০১২
খ্রিস্টাব্দে পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এইভাবে আফ্রিকান আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের আন্দোলনের
মধ্য দিয়ে নিজেদের স্বাধীনতা আদায় সচেষ্ট হন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন