সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মেইজি জাপানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বেসরকারি উদ্যোগ


 

মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরবর্তী যুগে জাপানি রাষ্ট্র যে সমস্ত সংস্কার সাধন করেছিল তার মধ্যে নিঃসন্দেহে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অর্থনৈতিক সংস্কার মেইজি নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেছিলেন যে, বিদেশী আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে হলে পাশ্চাত্য শক্তিগুলির মত সমক্ষমতা অর্জন করা প্রয়োজন এবং জাপানের সঙ্গে পশ্চিমে দেশগুলির স্বাক্ষরিত অসম চুক্তিগুলি বিলোপ সাধন ঘটাতে হবে। পশ্চিমী শক্তিগুলির সঙ্গে জাপানকে সমকক্ষ করে তুলতে গেলে অবশ্যই আর্থিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে শক্তিশালী ও উন্নত হয়ে উঠতে হবে তাকাহাসির মতে এই সংস্কারগুলি আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থনীতি গড়ে তোলার পথ পরিষ্কার করেছিল জি. সি. অ্যালেন জাপানের অর্থনৈতিক ইতিহাস আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, জাপানের অর্থনৈতিক অবক্ষয় টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের পতন অনিবার্য করে তুলেছিল ফলে মেইজি শাসকরা অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগের উপর জোর দিয়েছিল

 সামন্ততান্ত্রিক ভূমি ব্যবস্থার অবসানের সূত্রধরে সরকারকে সামুরাই শ্রেণীর যে বিদ্রোহের মোকাবিলা করতে হয়েছিল তাতে মেইজি আর্থিক ব্যবস্থা অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল জাপান তার পশ্চাৎপ কৃষি অর্থনীতি নিয়ে শিল্পোন্নত পশ্চিমের সঙ্গে এক অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছিল প্রতিকূল বাণিজ্যিক ভারসাম্যের ফলে ধাতু মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যেতে থাকে বর্ধিত ব্যয় মেটানোর জন্য মেইজি সরকার প্রচুর পরিমাণে কাগজের নোট ছাপাতে শুরু করে যার অনিবার্য পরিণতি ছিল মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যবৃদ্ধি এই মুদ্রাস্ফীতি জাপানের যে অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করে তার মূল কারণ ছিল ধাতুমুদ্রার পরিমাণ হ্রাস পায়। এর সাথে বৈদেশিক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবার ফলে জাপানের হস্তশিল্প ভেঙে পড়েছিল অসম বিদেশী প্রতিযোগিতার কবল থেকে জাপানকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন দেশীয় বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও আমদানির পরিমাণ হ্রাস করে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা

 আধুনিক শিল্প গড়ে তোলার পূর্বশর্ত হিসেবে দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসা হয় পুরাতন ও জটিল মুদ্রাব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয় এবং মুদ্রা ব্যবস্থায় দশমিক পদ্ধতি চালু করা হয় বিদেশী পুজির অনুপ্রবেশ কিছুটা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় বেশ কিছু সুপরিকল্পিত সংস্কার সাধনও করা হয়জাপানে আমেরিকান ধাঁচে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম জাতীয় ব্যাঙ্ক স্থাপন করা হয় ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ব্যাঙ্ক অফ জাপান নামে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক গঠন করা হয় বৈদেশিক বাণিজ্যে মূলধন যোগান, বিনিময় নিয়ন্ত্রণের জন্য ইয়োকোহামা স্পিশি ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

 জাপানে শিল্পের অগ্রগতি ঘটাতে মেইজি সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল রাজনৈতিক স্থায়িত্ব প্রদান করে এবং সুস্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তুলে শিল্পোন্নয়নের উপযুক্ত পরিকাঠামো ও পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করে শিল্পের ক্ষেত্রে সরকার স্বয়ং পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিল্পগুলির বিকাশের পথ প্রশস্ত হয় মেইজি সরকারি নেতৃবৃন্দ রণকৌশলগত শিল্পের বিকাশের উদ্যোগ নেয়, যার উপর আধুনিক সামরিক শিল্প দাঁড়িয়ে ছিলহাইযোগো বা বর্তমান কোবে অঞ্চলে একটি জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে তোলা হয় ফলে শোগুন যুগের নাগাসাকি ও ইয়োকোসুকা নিয়ে মোট তিনটি জাহাজ নির্মাণ কারখানার মালিকানা সরকারের দখলে আসে বিদেশী প্রযুক্তি নিয়ে বিদেশী মডেলে সমরাস্ত্র প্রস্তুত হলেও নিরাপত্তা জনিত কারণে বিদেশীদের এইসব কারখানায় নিয়োগ করা হত না

কিছু কিছু শিল্প কারখানা সরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠলেও সরকার প্রযুক্তিগত সাহায্য, সহজশর্তে ঋণ এবং ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তিগত শিল্প উদ্যোগকে উৎসাহিত করে কিন্তু পুঁজির অভাব উচ্চ সুদের হার জাপানীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব বিদেশী বিশেষজ্ঞদের উচ্চ বেতন জাপানী ব্যক্তিগত শিল্প উদ্যোগের প্রধান অন্তরায় ছিল সরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু শিল্প কারখানা গড়ে উঠলেও ১৮৮০ দশকে সেগুলি ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তরিত করা হয় ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ফুকুওয়াকা রেশম কারখানা সরকার মিৎসুই কোম্পানিকে বিক্রি করে। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ফুকাগাওয়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরি আসানো কোম্পানিকে বিক্রি করা হয় সিনাগাওয়া কাঁচ কারখানা ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইশিমুরা কোম্পানিকে হস্তান্তরিত করা হয় ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে সিমসাচি স্পিনিং মিলের মালিকানা সরকার মিৎসুই কোম্পানির হাতে তুলে দেয়

১৮৮০ দশকের গোড়ার দিকে জাপানে পুঁজিবাদী শিল্প অর্থনীতির পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল জাপানের সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করেছিল বস্ত্রশিল্পে মেইজি সরকার সাধারণ জনগণের এবং সৈন্যদের জন্য পাশ্চাত্য বস্ত্র পরিধানের নির্দেশ দিলে জাপানে প্রশম জাতীয় পোশাকের গুরুত্ব বাড়ে ১৮৭৭ - ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে সরকারি উদ্যোগে জাপানী প্রযুক্তিবিদদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত পশম মিলটি ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রধান পশম বস্ত্র উৎপাদকের ভূমিকা পালন করে কার্পাস বা তুলোর বস্ত্রের গুরুত্ব পশমের তুলনায় বেশি ছিল

জাপানের যন্ত্র চালিত রেশম গোটানোর কারখানাগুলির মধ্যে খুব স্বল্পসংখ্যকই সরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল এবং বাকি সব মিলগুলি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল। রেশম আমদানি ও ব্যাঙ্কিং বাণিজ্যে খ্যাত ওনো পরিবার ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে টোকিওতে একটি রেশন গোটানোর কারখানা স্থাপন করেন এবং ১৮৭২ - ৭৩ খ্রিস্টাব্দে আরও সাতটি কারখানা গড়ে তোলেন সরকারি পরীক্ষামূলক কারখানা স্থাপনের পর সুতীবস্ত্র শিল্পেও ব্যক্তিগত বিনিয়োগ লক্ষ্য করা যায় ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে সাতসুমা ক্ষেত্রে নির্মিত দুটি কারখানা একটি ব্যক্তিগত ফার্মকে বিক্রি করে দেওয়া হয় এরপর ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে সরকারি সাহায্য পাওয়া গেলে পরবর্তী সাত বছরে ১৫ টি প্রাইভেট কারখানা গড়ে ওঠে তাই মেইজি জাপানের সবচেয়ে বড় শিল্প সুতো কাটার কারখানাও পরবর্তীকালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিস্তার লাভ করে

জাপানের অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করেছিল পরিবহন শিল্পের অভূতপূর্ব অগ্রগতি ১৮৮০ এর দশকে রেলপথ নির্মাণের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছিল ১৮৮৬ থেকে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বেসরকারি ব্যক্তিগত বিনিয়োগে মোট ১৪ টি রেল কোম্পানি গড়ে উঠেছিল। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে নিপ্পন রেলওয়ে কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়এই কোম্পানিকে সরকার উদার হস্তে সরকারি ঋণ ও আর্থিক সাহায্য দেয়সরকারি আর্থিক সাহায্য সবথেকে বেশি দেওয়া হয়েছিল পরিবহন শিল্পে, বিশেষ করে জাহাজ শিল্প গড়ে তোলার জন্য মিৎসুবিসি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসাকি ইয়াতারোকে সরকারি সাহায্য দেওয়া হয় কিছুদিনের মধ্যেই মিৎসুবিসি কোম্পানি জাহাজ শিল্পের ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য লাভ করে খনি শিল্প ও জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলিও বেসরকারিকরণ হতে থাকে ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে নাগাসাকির বিখ্যাত জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থাটিকে মিৎসুবিসি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া হয় এবং কয়েক বছরের মধ্যেই ওই কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করে নেয়

 জাপানের শিল্পায়নে সরকারের সফল নেতৃত্ব এর সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে যৌথ সমন্বয় জাপানের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রগতি নিয়ে এসেছিল অ্যান্ডু গর্ডন বলেছেন "দ্রুত শিল্পায়ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনী শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলশিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কতগুলি যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানগুলি জাপানের শেয়ার বাজারের সংকট থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল জাপানের অর্থনৈতিক পুনঃগঠনের যুগে শিল্প উদ্যোগ গড়ে তোলার ব্যাপারে মৌলিক দুটি বৈশিষ্ট্য ছিল যথা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প পাশাপাশি গড়ে তোলা অন্যান্য শিল্পগুলি বেসরকারীকরণের প্রক্রিয়াকে সরকারি মদত দেওয়া হলেও সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিদেশী পুঁজির আওতায় বাইরে রাখার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল

সরকার রাজনৈতিক স্থায়িত্ব ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে সুস্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রদান করে শিল্পের পরিকাঠামো ও পরিবেশই শুধু রচনা করেনি, শিল্পক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে ব্যক্তিগত শিল্প বিকাশের পথ উন্মুক্ত করেছিল যদিও প্রথমদিকে অপরিচিত ও ঝুঁকিবহুল ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগ কিছুটা অনিশ্চিত ছিল তবুও ঐতিহ্যবাহী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুঁজির ঘাটতি ছিল না শিল্প বিকাশের সাথে অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন কৃষি, বাণিজ্য, এমনকি যে সমস্ত হস্তশিল্প পাশ্চাত্য সামগ্রী আমদানিতেও ধ্বংস হয়নি সেগুলিতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ছিল লক্ষণীয় অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই বিকাশের ফলেই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিল্পায়নে সাফল্য এনেছিল

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলতে পারি যে, অর্থনৈতিক বিকাশে সরকারের উজ্জ্বল ভূমিকার একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বেসরকারি তথা ব্যক্তিগত উদ্যোগ-পতিদের শিল্প বিকাশে উৎসাহিত করা অনুৎসাহী শিল্পপতিদের খোশামত করে ঝুঁকিবহুল নতুন শিল্প ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি করানো হয় এবং অনেক সময় বণিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহে সাহায্য করা হয়সরকারের এই উৎসাহ ও প্রচেষ্টায় সাড়া দিতে এগিয়ে আসেন বহু উদ্যোগ-পতি তাদের এই প্রয়াস স্বদেশ প্রেমের আদর্শের দ্বারাও উদ্বুদ্ধ হয়েছিল তাঁরা দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার কথা বিবেচনা করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে এগিয়ে আসেন যার বিনিময়ে তাঁরা জাপানবাসীর শ্রদ্ধা অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...