উনবিংশ
শতকের গোড়ার দিকে শোগুন যুগে সমাজ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। ১৮০৬ ও ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নিকোলাই রেজানভ নামে একজন পুরুষ সামরিক
অফিসার জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী হন। কিন্তু টোকুগাওয়া জাপানে অন্যান্য দেশের থেকে বিচ্ছিন্ন
করে রাখার নীতি গ্রহণ করার ফলে তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তখন রেজানভ কতগুলি জাপানি গ্রামের ওপর আক্রমণ করেন। প্রতিশোধ
গ্রহণের উদ্দেশ্যে জাপানিরা রেজানভের সহযোগী ও জাহাজের পরিচালক ক্যাপ্টেন ভ্যাসিলি
গ্যালোওনিনকে বন্দী করেন। গ্যালোওনিন তাঁর তিন
বছরের বন্দী জীবনের স্মৃতিকথা 'memories of captivity in Japan'
গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। আধুনিক ঐতিহাসিকরা স্মৃতিকথার প্রণাম্য
তথ্যের উপর ভিত্তি করে জাপানী সমাজ
ব্যবস্থায় আটটি শ্রেণীর উল্লেখ করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল ডাইমিয়োরা।
টেরিটোরিয়াল
নোবল বা দেশের বিভিন্ন জমিদারীর ভারপ্রাপ্ত
উচ্চপদস্থ জমিদার, ফুজিয়ারা বংশের দুর্বলতা ও অযোগ্যতার সুযোগ
নিয়ে যেসব স্থানীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতা নিস্কর ভূ সম্পত্তি জবর দখল করেন তাঁরাই
ছিলেন প্রাক পুন:স্থাপন যুগের ডাইমিয়ো
সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষ। ডাইমিয়োদের
জামিদারীর আয়তন এবং সম্পত্তির পরিমাণ অনুযায়ী
তাদের স্তর বিন্যাস করা হত। যাদের জমিদারীর পরিমাণ একটি
প্রদেশের সমান হত, তাদের প্রদেশ পাল বলা হত। যে সমস্ত ডাইমিয়ো দুর্গ রাখার
অধিকার পেতেন তাদের দুর্গেশ্বর বলা হত এবং সর্বনিম্ন ছিল সাধারণ ভূস্বামী বা
রিয়সু ডাইমিয়োরা। ঐতিহাসিক হল তাঁর 'Japan
from pre history to modern Times' গ্রন্থে বলেছেন যে অষ্টাদশ শতকে জাপানে
প্রদেশপাল বা কুনিমোচি ডাইমিয়োর সংখ্যা ছিল ২০, জোসু
ডাইমিয়ো বা দুর্গেশের এর সংখ্যা ছিল ১৪০ জন এবং
সাধারণ ডায়মিয়োর সংখ্যা ১১০ জন।
টোকুগাওয়া
শোগুনেরা শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে ডাইমিয়োদের ওপর
নির্ভর করতেন। ডায়মিয়োরা নিজস্ব
এলাকাতে স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত বেশ কিছু অধিকার ভোগ করতেন। জনসাধারণের কাছ থেকে কর আদায় করতেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধীদের বিচার করার অধিকার তাদের ওপর ন্যস্ত ছিল। সর্বোপরি ডাইমিয়োদের নিজেদের
এলাকায় নিজস্ব সৈন্যবাহিনী রাখতে পারতেন। এই অধিকারগুলি
ভোগ করার বিনিময়ে ডাইমিয়োরা বেশ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন
করতে বাধ্য থাকতেন। তাদের শোগুনতন্ত্রের
প্রাধান্য স্বীকার করে তাঁদের
মৌলিক আইনগুলির প্রতি ডাইমিয়োদের চূড়ান্ত
আনুগত্য প্রদর্শন করতে বাধ্য থাকতেন। শোগুনের দাবী মাত্রই
ডাইমিয়োরা শোগুনকে অর্থ ও নজরানা পাঠাতে বাধ্য
থাকত। তাই ডাইমিয়োদের কাছ থেকে আসা অর্থ জনসাধারণের
স্বার্থমুলক কাজ ও দুর্গ নির্মাণের কাজে ব্যয় করা হত। ডাইমিয়োদের পদ ছিল
বংশানুক্রমিক, কোন ডাইমিয়ো নিজ এলাকা
শাসনের
ক্ষেত্রে অবহেলা প্রদর্শন করলে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে শোগুন তার
পদচ্যুতি ঘটাতে পারতেন।
প্রাক
পুন্:স্থাপন যুগে জাপানের একজন ডাইমিয়ো তার
বাসস্থান রাজধানী ইয়েডোতে স্থাপন করতে বাধ্য থাকতেন। এক বছর বা ছয় মাস অন্তর
তাদের নিজেদের এলাকায় যাবার অনুমতি দেওয়া হলেও তাদের পরিবারের সদস্যদের ইয়েডোতে
রেখে যেতে বাধ্য থাকতেন। যাতে ডাইমিয়োরা টোকুগাওয়া
শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠতে না পারে। কিন্তু যখন ডাইমিয়োগণ অর্থনৈতিক
সংকটের সম্মুখীন হলে টোজামা ডাইমিয়োগণ শোগুনের
বিপক্ষে আন্দোলনকারীর ভূমিকা গ্রহণ করেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন