উনবিংশ
শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বহিরাক্রমন এবং অভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণ চীন দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের
দুর্বলতার ইঙ্গিত স্পষ্ট করে। চিং
সরকারের দুর্বলতা, বিচক্ষণতার
অভাব দেশের সংকটকে আমন্ত্রণ জানায়। চীনের অভ্যন্তরে সামাজিক, অর্থনৈতিক,
রাজনৈতিক সমস্যা জর্জরিত করে তুলেছিল। এই
বহুবিধ সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান করতে চিং সরকার অপারক হওয়ায় বহিরাগত আক্রান্ত ও
অভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণ অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই অভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণ তাইপিং বিপ্লবের
রূপ ধারণ করে।
উনবিংশ
শতকের মধ্যভাগে যে সকল গণবিদ্রোহ চীনের মাঞ্চু শাসনের
ভিত্তিকে দুর্বল করেছিল তাদের মধ্যে উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, বিদ্রোহের ব্যাপকতা ও আদর্শ এই সবদিক দিয়ে বিচার করলে
দেখা যাবে যে তাইপিং বিদ্রোহ চীনের অভ্যন্তরীণ ইতিহাসে সবথেকে গভীর রেখাপাত করেছিল। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই জানুয়ারি
কোয়াংসি প্রদেশের জিন- তিয়েন গ্রামে
এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাইপিং বিদ্রোহের সূচনা হয়। এই অনুষ্ঠানে তাইপিং তিয়েনকুও বা মহতী শাস্তির স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করা হয়। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের হুং শিউ চুয়ান এর নেতৃত্বাধীন
ঈশ্বর ভক্ত সমিতি ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার জন্য বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির সদস্যরা
বিশেষত দক্ষিণ চীনের ট্রায়াড জাতীয় গুপ্ত সমিতির কর্মীরা ঈশ্বর ভক্তি সমিতিতে
যোগ দিতে থাকেন। তারা দুর্বল
দুর্নীতিগ্রস্ত পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণকারী মাঞ্চু শাসনের অবলুপ্তি ঘটিয়ে সম্পূর্ণ নতুন শাসনতন্ত্র
প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাইপিং
বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে প্রাক সর্বহারা নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটেছিল।
জাঁ শ্যেনো তাইপিং বিদ্রোহের মধ্যে কৃষক বিদ্রোহের উপাদান
খুঁজে পেয়েছেন। তাইপিং বিদ্রোহ
দক্ষিণ চীনে আরম্ভ হওয়ার পর বিদ্রোহীরা মধ্য চীন ধরে ইয়াংসি নদীর নিম্ন উপত্যকার দিকে
অগ্রসর হয়েছিল। তাইপিং
বিদ্রোহীরা সমর্থন করেছিল একের পর এক স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক বিদ্রোহকে। দরিদ্র কৃষকরা একটি বিষয়ে অবগত হয়েছিল যে তাইপিং শাসন
চীনে প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটবে। গণপ্রজাতান্ত্রিক চীনের মার্কসবাদী
ঐতিহাসিক তাইপিং বিদ্রোহের অভিজ্ঞতাকে আধুনিক চীনের ইতিহাসের প্রথম
কৃষি বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তাইপিং
বিদ্রোহের ক্ষেত্রে আধুনিকতার সুস্পষ্ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল। একদিকে কৃষক কল্পরাজ্য ও মাঞ্চু বিরোধী জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি প্রথাগত ধ্যানধারণার সঙ্গে
পাশ্চাত্যের আধুনিক ধারণা সংমিশ্রণ ঘটেছিল তাইপিং বিদ্রোহের মধ্যে। মহতী শান্তির
স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তারা একটি সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থা কায়েম করতে
উদ্যোগী হয়েছিল। তাইপিং ধর্মের
মধ্যেও খ্রিস্টধর্মের প্রভাব ছিল এবং তাইপিং নেতৃত্বের মধ্যে পশ্চিমীদের উৎকর্ষতার কারণ অনুসন্ধানের একটা তাগিদ ছিল। তাইপিংদের পৌত্তলিকতার তীব্র বিরোধিতা এবং নারী ও
পুরুষের সমান অধিকারের ঘোষণার মধ্যেও আধুনিকতার সুস্পষ্ট ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়। নারী ও পুরুষকে সমান মর্যাদার আসনে বসিয়ে তাইপিংরা
কনফুসীয় ঐতিহ্যের বিরোধিতা করেছিল। নতুন তাইপিং ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে তাদের
আধুনিক মনের পরিচয় দিয়েছিল।
তাইপিং
বিপ্লবীরা প্রাথমিক সাফল্যের পর নানকিং এ তাদের স্বর্গীয় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে The
land system of the heavenly Kingdom নামে দলিল প্রকাশ করেন। এই দলিলে তাইপিংদের মধ্যে সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে
তোলার ব্যাপারে একটি স্পষ্ট ধারণা ছিল। তাইপিং
স্বর্গরাজ্যে ব্যক্তি সম্পত্তি ও জমির মালিকানা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল যে 'স্বর্গের
নিচে সমস্ত জমি স্বর্গের নিচে একত্রিত হয়ে চাষ করবে'। এই ধর্মীয় সমতার বিষয়টির সাথে সমসাময়িক কালে সংঘটিত
আফ্রিকার কঙ্গো অঞ্চলের ব্ল্যাক খাইস্ট আন্দোলনের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Hi
উত্তরমুছুন