সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শিমনোসেকি সন্ধির শর্তগুলি কি ছিল

 


অরুণ কুমার গিরি

লি বিদেশী শক্তির সহায়তা নিয়ে কোরিয়ার সংকটের সমাধান করতে চেয়েছিলেন এবং রাশিয়া চীনকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখেনি, ইংল্যান্ড দূরপ্রাচ্যে কোন সংকটে জড়িয়ে পড়তে চাইনি এবং আমেরিকার শান্তির আবেদনেও কাজ হয়নি ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে জুলাই জাপান চীনের কাউশিং জাহাজ ডুবিয়ে দিলে ৯৫০ জন চীনা প্রাণ হারায় ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের লা আগস্ট দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ ঘোষিত হয় চীন স্থল ও নৌবহর যুদ্ধে কৃতিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি মাঞ্চুরিয়ার মধ্য দিয়ে জাপান পিকিং এর দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা নিলে চীন জাপানের সঙ্গে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল শিমনোসেকির সন্ধি করতে বাধ্য হয়ন্ধির শর্তানুসারে

i) জাপান ও চীন কোরিয়ার স্বাধীনতা স্বীকার করে নিয়েছিল কোরিয়া আর চীনের কতর রাজ্য হিসেবে থাকবে না ii) চীন জাপানকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০০ মিলিয়ান টায়েল দেবে iii) চীন জাপানকে লিয়াওটাং (দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া) উপদ্বীপ, ফরমোজা ও পেসকাডোরিস দ্বীপপুঞ্জ সমর্পণ করে iv) জাপানকে চীন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় সেই উদ্দেশ্যে চারটি চৈনিক বন্দর জাপানের বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করা হয় যথাশাসি, চুংকিং, হ্যাংচাও এবং সুচাও v) পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ জাপানের শক্তিমত্তার পরিচয় পেয়ে শোগুন যুগের সম্পাদিত বৈষম্যমূলক চুক্তিগুলির শর্তাদি রদবদল করতে সম্মত হন Vi) শিমনোসেকির সন্ধির ফলে জাপানে যে বিদেশী শক্তি সমূহ এতকাল অতি রাষ্ট্রিক অধিকার ভোগ করে আসছিলেন তার বিলুপ্তি হয় অতিরাষ্ট্রিক অধিকারের ভিত্তিতে তারা জাপানের আইনাধীন না হয়ে স্বদেশীয় আইনানুসারে বিচারের অধিকার ভোগ করতেন এখন অতিরাস্টিক সুযোগ-সুবিধার অবলুপ্তি ও ঘটে Vii) আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের উপর দেশের স্বার্থে শুল্ক নিয়ন্ত্রণের নিরঙ্কুশ অধিকার জাপান ফিরে পায় Viii) জাপান চীনে কারখানা স্থাপন করে শিল্পপণ্য উৎপাদন করার সুযোগ লাভ করে

 

শিমনোসেকির সন্ধির ফলে একদিকে যেমন জাপানের নব অর্জিত শক্তির পরিচয় দেয় অন্যদিকে তেমনি চীনের দুর্বলতা উদঘাটিত করে আত্ম মর্যাদায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে চীন যেন মগ্ন হয় আত্ম জিজ্ঞাসা জাপান পাশ্চাত্য সভ্যতায় দীক্ষিত হয়ে মধ্যযুগীয় দুর্বলতা জয় করে এবং আধুনিক যুগোপযোগী শক্তি সঞ্চয়ে সমর্থ হয় জাপানের পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে চীনের পক্ষে তা সম্ভব হতে পারে রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস

    মার্টিন লুথার ছিলেন লুথা রিয়ান মতবাদের প্রবক্তা । জার্মানির স্যাক্সসনিতে ইসলিবেন নামে একটি গ্রামে ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথারের জন্ম হয় । ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে ইউটে ম বা র্গ চা র্চে র দরজায় তিনি তাঁ র ৯৫ তত্ত্ব ঝু লিয়ে দেন । এটি ছিল পোপের স্বর্গীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ । সমস্ত জার্মানির শিক্ষিত মানুষেরা লুথারের তত্ত্বে র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল । এই ৯৫টি ছিল তাত্ত্বিক প্রশ্ন , এতে বাইবেল ও খ্রিস্টান দর্শন সম্বন্ধে তাত্ত্বিক গুরুগম্ভীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রশ্ন ছিল । উইলিয়াম ওকামের চিন্তাভাবনা দ্বারা মার্টিন লুথার প্রভাবিত হয়েছিলেন । ইউরোপের এই চিন্তা ধারা পরিণত ছিল nominalism নামে । নমিনালিস্ট চিন্তাধারায় উল্লেখযোগ্য ছিল বিশ্বাস ও নিবেদিতপ্রাণতা । নমিনালিস্টরা মনে করত বিশ্বাসই মুক্তি আনবে , তবে এই বিশ্বাস অর্জনের জন্য শাস্ত্র পড়তে হবে এবং গভীর আগ্রহের সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের বোধগম্য ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে হবে । লুথার এইমতে বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি বিশ্বাস করতেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারিত হওয়া উচিত এবং আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল রচনা করা একান্ত দরকার । তিনি খ্...