সুলতানি যুগে শাসক শ্রেণীর মধ্যে ইকতা ব্যবস্থার মাধ্যমে কী ভূমি রাজস্ব বন্টিত হত? ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে কী ইকতার সম্পর্ক ছিল?
ইসলামী
রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কৃষকদের উৎপাদনের উদ্বৃত্ত অংশের একাংশ রাষ্ট্রের প্রাপ্ত বলে
বিবেচিত হত। ইসলামীয় সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের
সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের উদ্বৃত্ত উৎপাদনের একাংশ সংগ্রহ করে তা শাসক শ্রেণীর মধ্যে
বন্টন করার জন্য ইকতা নামক ব্যবস্থার
উদ্ভব ঘটে। আক্ষরিক অর্থে
ইকতা বা অকতা বলতে অংশ বোঝায়।
বস্তুতপক্ষে ইকতা হল এক ধরনের ভূমি রাজস্ব বন্দোবস্ত যা একজন শাসক ও বিশেষ
ব্যক্তির মধ্যে সম্পাদিত হত। খালিসা জমি বা সুলতানের খাস জমি ব্যতি রেখে দ্বিতীয় এক ধরনের জমি সুলতান নির্দিষ্ট শর্তে ও কাজের
বিনিময়ে তাঁর সৈন্যধ্যক্ষ, সৈনিক বা
অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দিতেন। এই
জমিকে বলা হত ইকতা এবং ইকতার কথা বলেছেন – ক) ইকত – ই - ইস্তিখলাল বা সরকারি
অনুদান (গুরুত্বহীন এই ব্যবস্থা ভারতে বিকাশ লাভ
করেনি) এবং খ) ইকতা - ই - তমলিক যা ছিল ভূমি ব্যবস্থা ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুলতানি আমলে (১২০৬-১৫২৬) ভারতে
দ্বিতীয় ব্যবস্থাটাই বিকাশ লাভ করেছিল।
ইকতা ব্যবস্থার
প্রাথমিক কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের আভাস পাওয়া যায় নিজাম-উল- মূলক তুসীর
লেখা ‘সিয়াসৎনামা’ গ্রন্থে। ইকতার প্রাপক মুকতি নিয়মিত রাজস্ব আদায় ছাড়া প্রজাদের উপর অন্য কোন অধিকার
বা দাবি আরোপ করতে পারতেন না।
নির্ধারিত রাজস্ব প্রদান করার পর প্রজা তাঁর পরিবার পরিজন ও সম্পত্তির বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার
অধিকারী হতেন। জমি ও প্রজাদের
উপর অধিকার ছিল কেবলমাত্র সুলতানের এবং মুকতি ছিলেন
সুলতান নিযুক্ত অছি বা Trustee মাত্র। তুসীর লেখা থেকে জানা যায় যে, মুকতি সুলতানের
ইচ্ছানুসারে ইকতা থেকে আদায়ীকৃত রাজস্বের একাংশ ভোগ করতে পারতেন। বিনিময়ে তিনি একটি সেনাবাহিনী পোষন করতেন এবং
সুলতানের প্রয়োজনে এই বাহিনী দ্বারা তাঁকে
সাহায্য করতেন। অর্থাৎ মুকতি ছিলেন একাধারে রাজস্ব সংগ্রাহক ও সেনাবাহিনী পোষক ও
পরিচালক।
১২০৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে সুলতানি শাসন
শুরু হওয়ার সময় কোন সুনির্দিষ্ট রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। মহম্মদ ঘুরির ভারত অভিযানের পর ঘুরির
অনুগামী সেনাপতিগণ বিজিত অঞ্চল থেকে লুটপাট করে বা থোক নগদ অর্থ আদায় করে তাদের
ব্যয় নির্বাহ করতেন। বিজয়ী তুর্কীদের কাছে ইকতা ব্যবস্থা
পরিচিত ছিল। ফলে কালক্রমে সামরিক
নেতারা মুকতি বা ওয়ালি এবং অধীনস্থ অঞ্চল ইকতা বা বিলায়েত নামে পরিচিত হয়ে উঠল। পরে ধীরে ধীরে এই সকল স্বঘোষিত ইকতাদারদের ভূখণ্ড
প্রকৃত অর্থে ইকতার বৈশিষ্ট্য লাভ করতে থাকে। সুলতান ইলতুৎমিস ইকতা ব্যবস্থাকে ভারতে বৈধ প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেন। নিজামী লিখেছেন যে,
তদানীন্তন ভারতে প্রচলিত হিন্দু সামন্ততান্ত্রিক পরিকাঠামোকে পরিবর্তন এবং অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পন্ন নববিজিত ভূখন্ডের উপর দিল্লি সুলতানির
কর্তৃত্ব রক্ষার জন্য ইলতুৎমিস ইকতা নামক
প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেছিলেন। এই জন্য তিনি তার বিশ্বস্ত তুর্কী সেনাপতিদের মধ্যে নব বিজিত অঞ্চলগুলিকে ইকতা হিসাবে বিলি করে দেন
এবং ব্যবস্থাটিকে প্রাদেশিক শাসনের ভিত্তি হিসাবে গড়ে তুলতে চান। সমসাময়িক একটি উপাদান থেকে জানা যায় যে, ইলতুৎমিস তাঁর
কেন্দ্রীয় অশ্বারোহী বাহিনীর বেশ কিছু সৈনিককে (২০০০
থেকে ৩০০০) ব্যয় নির্বাহের জন্য কয়েকটি গ্রামদান
করেন যেগুলি পরবর্তীকালে ইকতা নামে পরিগণিত
হয়। দোয়াব অঞ্চলে প্রায় ২০০০ তুর্কী
সৈনিককে ইকতা প্রদানের পেছনে ইলতুৎমিসের
দ্বিবিধ লক্ষ্য ছিল। প্রথমত, সুলতানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় তুর্কী সৈনিকদের অবদানের পুরস্কার প্রদান এবং দ্বিতীয়ত, দেশের উর্বরতম অঞ্চলে সুলতানির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তাঁদের
নিয়োজিত রাখা। এই সকল ছোট
ইকতাদাররা কোন প্রশাসনিক দায়িত্ব ভোগ না করলেও রাজস্ব লাভের বিনিময়ে সুলতানকে
সামরিক সাহায্য দিতেন। ইলতুৎমিস
বিচক্ষণতার সঙ্গে ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ রোধ করবার উদ্দেশ্যে মুকতিদের বিভিন্ন ইকতায় বদলি
করার রীতি নিয়েছিলেন।
ইলতুৎমিসের
তীক্ষ্ণ নজরদারীর ফলে তাঁর রাজত্বকালে মুকতি এবং ইকতাদাররা
মোটামুটি ভাবে সুলতানির সহায়ক শক্তি
হিসেবেই কাজ করেছিলেন। কিন্তু
ইলতুৎমিসের মৃত্যু এবং বলবনের সিংহাসন আরোহণের মধ্যবর্তী কাল পর্বে অর্থাৎ ১২৩৬ - ১২৬৬
খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কেন্দ্রীয় শাসনের বিশৃঙ্খলার আবর্তে ইকতা ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বিপজ্জনক
দিকগুলি প্রকট হতে থাকে। মুকতিরা কেন্দ্রীয় সরকারকে অগ্রাহ্য করতে শুরু করে। চূড়ান্ত স্বৈরাচারী ও দৈব অধিকারে বিশ্বাসী
গিয়াসউদ্দিন বলবন তাই ইকতা ব্যবস্থার
ত্রুটিগুলিকে সংশোধন করতে উদ্যোগী হন। বড়
ইকতার মুকতিরা এমন ভাবে ইকতার আয় ব্যয়ের
হিসাব করতেন যাতে করে কখনই অর্থ উদ্বৃত্ত হত না। বলবন ইকতার হিসাব রক্ষা
ও কেন্দ্রের প্রাপ্য যথাযথ আদায়ের জন্য মুকতির সঙ্গে
খাজা নামে এক শ্রেণীর হিসাব পরীক্ষক নিয়োগ করেন। ইকতার উদ্বৃত্ত রাজস্ব দাবী করা এর ফলে সহজতর হয়। এছাড়াও দোয়াব অঞ্চলে
ইলতুৎমিস প্রদত্ত ইকতাগুলির ক্ষেত্রেও
বলবন কিছু পরিবর্তন করেন। যে সকল
সৈনিক বা তার বংশধররা অক্ষম হয়ে পড়েছিল বা সামরিক দায়িত্ব পালন করতে পারত না
তাদের ২০/৩০ টংকা পেনশন প্রদানের এবং সক্ষম
ব্যক্তিদের নগদ বেতন দানের বিনিময়ে বলবন সমস্ত ইকতা কেড়ে
নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বারানী লিখেছেন যে,
দিল্লির কোতোয়াল মালিক ফকরউদ্দিনের মধ্যস্থতায় দোয়াবে ইকতাগুলি পূর্ববৎ বজায়
ছিল। তবে ডঃ
হাবিবুল্লাহ মনে করেন যে, কোতোয়ালের অনুরোধের ফলে ইকতা
ব্যবস্থার মৌলিক চরিত্র ক্ষুন্ন না করে সেদিকে
সুলতান বলবন দৃষ্টি দিয়েছিলেন।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজীর সাম্রাজ্যবাদী নীতির ফলে সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি
পেয়েছিল। ফলে ব্যবস্থায়
পরিবর্তন আনা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।
দূরবর্তী অঞ্চলগুলিকে ইকতায় পরিণত করে
আলাউদ্দিন প্রশাসন ও রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করেন। দিল্লির নিকটবর্তী অঞ্চল মধ্য
দোয়াব ও রোহিলখন্ড অঞ্চল খালিসার অধীনে আসে। খালিসা থেকে সমস্ত আয় রাজকোষে জমা হয় এবং সৈনিকদের নগদ বেতন দেওয়ার
ব্যবস্থা করেন। সুলতানের অশ্বারোহী বাহিনীর সদস্যদের বেতন বাবদ ইকতা প্রদানের ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায় যা মহম্মদ বিন তুঘলকের
রাজত্বকাল পর্যন্ত বজায় ছিল। তবে
আলাউদ্দিন সেনাপতিদের ইকতা প্রদানের ব্যবস্থা
বলবৎ রেখেছিলেন পাশাপাশি ইকতার উপর আমলাদের
হস্তক্ষেপের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন। স্থির
হয় দেওয়ান – ই – উজিরৎ প্রতি ইকতার
রাজস্বের পরিমাণ স্থির করে দেবেন এই রাজস্বের একটি অংশ মুকতি বা ওয়ালির
অধীনস্থ সৈনিকের (যসম) বেতন (ময়াজিব) বাবদ ব্যয় হবে, রাজস্বের বাকি অংশ মুকতির ব্যক্তিগত খরচ ও প্রশাসনিক খরচের জন্য নির্দিষ্ট হয়। সেনাবাহিনীর ব্যয় ও মুকতির ব্যয় সংকুলনের পর উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় রাজকোষে জমা
দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। নতুবা
কঠোর শাস্তি দানের ব্যবস্থা করা হয়। বারানী জানিয়েছেন যে, আলাউদ্দিনের
রাজস্ব মন্ত্রী শরফ কাইনি জালিয়াতি ও গোপনীয়তা ধরার জন্য গ্রামের হিসাব রক্ষক
পাটোয়ারীদের হিসাবপত্র কঠোরভাবে পরীক্ষা করেন। এইভাবে কঠোর হাতে ইকতা প্রশাসন
নিয়ন্ত্রণ করে কাইনি কেন্দ্রীয় কোষাগারে আয় বৃদ্ধিতে সফল হয়েছিলেন। অন্যদিকে সামস –ই- সিরাজ আফিফ মন্তব্য করেছেন যে, শরফ কাইনি ইকতার
ধার্য রাজস্বের উপর বাড়তি কর চাপিয়েছিলেন সম্ভবত এই ধারণা থেকে যে ভূমির প্রকৃত
আর গোপন করা হয়েছে। এর ফলে সমগ্র
রাজ্যে দুর্গতি নেমে আসে।
গিয়াসউদ্দিন
তুঘলক ইকতা ব্যবস্থায় বড় ধরনের কোন মৌলিক
পরিবর্তন ঘটাননি বরং এই ব্যবস্থার দ্রুত
পরিবর্তনের ফলে যে সমস্ত ত্রুটি বিচ্যুতি ঢুকে পড়েছিল তিনি সেগুলি সংশোধন করতে
সচেষ্ট হন। পরিবর্তনগুলি
ঘটানোর ক্ষেত্রে যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তা হল -১)
দেওয়ান –ই- উজিরৎ রাজস্ব নির্ধারণের সময় লক্ষ্য রাখবেন যাতে বার্ষিক
বৃদ্ধি ১/১০ বা ১/১২
শতাংশের বেশি না হয়। ২) মুকতিগন
আদায়কৃত রাজস্বের (খারাজ) ১/১০ থেকে
৩/১১ শতাংশ অর্থ তাদের পূর্ব নির্দিষ্ট আয়ের উপর গ্রহণ করলেও কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে না। ৩) সামরিক
বাহিনীর খরচ বাবদ নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের রাজস্বের কোন অংশ মুকতি নিতে পারবেন না। ৪) মুকতিগণ ও তাদের অধীনস্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রাপ্য বেতনের অতিরিক্ত ১/২ বা ১ শতাংশ সংগ্রহ দন্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করবেন না।
মহম্মদ
বিন তুঘলকের রাজত্বকালে ইকতা ব্যবস্থার উপর
সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরও সম্প্রসারিত হয়। বারানী, ইসামী, ইবনবতুতা
প্রমুখের রচনা থেকে জানা যায় যে, মহম্মদ বিন
তুঘলক রাজস্ব সংগ্রহ ও সৈন্য বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দুটিকে সম্পূর্ণ আলাদা
করে দেন। ইকতার রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব ইজারা দেওয়া হয়। বারানী দেখিয়েছেন যে, বণিক নিজাম মাইন ও নসরত খান যথাক্রমে কারা ও বিদরের ইকতার রাজস্ব আদায়ের অধিকার পান। এজন্য তারা রাজকোষে এক কোটি কয়েক লক্ষ টাকা জমা দেন। শরন নামে এক হিন্দু গুলবর্গা ও
গোবার অঞ্চলের ইজারা নিয়েছিলেন। এদের সৈন্য রাখার কোন দায় দায়িত্ব ছিল না। ইবনবতুতা ওয়ালির যে
বর্ণনা দিয়েছেন তাতে দেখা যায় যে, তার
কাজ ছিল শুধুমাত্র রাজস্ব আদায়।
এখানকার ওয়ালি বা মুকতি ১৫০০ গ্রাম
থেকে প্রায় ছয় মিলিয়ন টাকা রাজস্ব আদায়ের অধিকার পান। আদায়ীকৃত
অর্থের ২০ ভাগের এক ভাগ তিনি নিজের জন্য রেখে বাকি অংশ রাজকোষে জমা দিতেন। মহম্মদ সৈনদের নগদ অর্থে বেতন দানের ব্যবস্থা
করেছিলেন যদিও 'মাসালিক – অল - অবসরে' থেকে জানা যায় যে ১০ হাজার সৈন্যের অফিসার 'খান' থেকে একশ সৈন্যের নেতা 'সিপাহশালার' সকলেই কেবল বেতন বাবদ এক খন্ড ইকতা ভোগ করত। অবশ্য
এদের যা বেতন ছিল তার থেকে কম আয় সম্পন্ন ইকতা এঁদের জন্য বরাদ্দ করা হত। কারণ
সুলতান মনে করতেন যে, এরা সর্বদাই
উৎপাদকের উপর জুলুম করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে অভ্যস্ত, বস্তুত পক্ষে খলজিদের সময় থেকে গিয়াসউদ্দিনের শাসনকাল
পর্যন্ত সৈন্য ও অফিসারদের বেতনের পুরোটাই আসত ইকতা থেকে। মহম্মদ বিন তুঘলকের সময়
থেকে ইকতার একটি নির্দিষ্ট অংশের আয় শুধু
অফিসারদের জন্য বরাদ্দ হত। ইকতার
বাকি অংশে শাসন ও রাজস্বের উপর ওই সকল অফিসার বা মুকতিদের কোন এখতিয়ার ছিল না। ইবনবতুতার বর্ণনা থেকে মনে করা হয় যে, বাকি অংশের আয় থেকে সৈন্যদের বেতন
মেটানো হত। সম্ভবত অভিজাতদের হাত থেকে ইকতা প্রশাসনের দায়িত্ব এবং একাংশের উপর শাসন শোষণের অধিকার কেড়ে
নেওয়ার জন্য পুরনো অভিজাতবর্গ বা আর্মি অফিসাররা মহম্মদের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। দাক্ষিণাত্যের সদাহ আমিরদের (আমিরান ই
সাদাহ) বিদ্রোহ ছিল এই ব্যবস্থার অন্যতম প্রতিক্রিয়া যা কালক্রমে ১৩৪৬ - ৪৭ এ বাহমনীতে একটি স্বাধীন সুলতানি সাম্রাজ্যের উৎপত্তিতে
সহায়তা করেছিল।
মহম্মদ
বিন তুঘলকের আমলে যে রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল সেই সংকটের মধ্য দিয়ে ফিরোজ
শাহ তুঘলক ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। এজন্য
অভিজাতদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তিনি তার শাসন শুরু করেন। আফিফ লিখেছেন যে, আল্লাহর নির্দেশে সুলতান
সাম্রাজ্যের রাজস্বকে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছিলেন। ইকতা ও পরগণাকে
অভিজাতদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ সৈনিকদের ইকতা দেওয়ার ফলে খালিশা জমির আয় কমে যায়। ফিরোজ ইকতার আর
বার্ষিক নির্ধারণের পরিবর্তে সমগ্র আমলের জন্য নির্দিষ্ট করে দেন। রাজত্বের চতুর্থ বছরে উজিরত দপ্তর ইকতার আয় ছয় কোটি ৭৫ লক্ষ
টংকা ধার্য করেন। ইকতার বার্ষিক আয় বৃদ্ধির নীতি
বন্ধ করে দেওয়ার ফলে মুকতিরা অতিরিক্ত আয়
সংগ্রহের ঝামেলা থেকে মুক্তি পায়। ইকতার উপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের শিথিলতার কারণে মুকতিগণ জমার উপর অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে থাকেন। মুকতিদের
ব্যক্তিগত সাম্মানিক হারও বাড়িয়ে দেওয়া হয় এছাড়া সেনাবাহিনীর ভরণপোষণের জন্য
নির্দিষ্ট ইকতার অংশ মুকতিরা ভোগ
করতে থাকেন। এছাড়া ফিরোজের
সময় থেকে ইকতাগুলি বংশানুক্রমিক হয়ে ওঠে। এই সময় থেকে একজন মুকতি মারা গেলে তার পুত্র ও কন্যা কিংবা জামাতা বা তার
ক্রীতদাস ওই ইকতার আধিকারী হতে পারতেন। ফিরোজের রাজত্বকালে উদার হস্তে ইকতা দানের ফলে খালিসা জমি
কমে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও খালিসার মধ্য থেকেও সৈন্যদের বেতনের জন্য জমি দেওয়া হত। ইকতার
উদ্বৃত্ত রাজস্ব থেকেও অনেক সৈন্যকে বেতন দেওয়া হত। আফিফ দেখিয়েছেন যে, ইকতা থেকে সৈন্যরা তাদের নির্দিষ্ট বেতনের মাত্র অর্ধেক পেত।
সৈন্যরা তাদের বেতনপত্র বা 'ইতলাক' ইজারাদারদের কাছে বেতনের এক ছয় তৃতীয়াংশ মূল্যে বিক্রয়
করে দিত। আর ইজারাদাররা
ইকতা থেকে বেতনের মাত্র অর্ধেক আদায় করতে
পারতেন। বলাবাহুল্য
ফিরোজ গৃহীত কোন নীতি সাম্রাজ্যের ভবিষ্যতের পক্ষে সুখকর হয়নি।
ফিরোজ শাহ তুঘলকের বংশধররা ইকতা ব্যবস্থার উপর কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব পুনর প্রতিষ্ঠা করতে
পারেননি। মোবারক শাহ এক
অভিজাতকে লাহোরের একটা দেন, যার অধীনে ২০০০
সৈন্য ছিল। ইয়াহিয়া সিরহিন্দ
লিখেছেন যে সৈয়দ সলিম খিজির খানের অধীনে ৩০ বছর ধরে কাজ করেন। মধ্য দোয়াবে বহু পরগণা ইকতা ও তবরহিন্ডা দুর্গ
তার অধীনে ছিল। মোবারক শাহ তাকে আরও সুরসুতির খন্ড জেলা এবং আমরোহার ইকতা দেন।
মৃত্যুর পর সৈয়দের ইকতা (১৪৩০) ও পরগনা তার
পুত্রদের দেওয়া হয়। লোদীদের
শাসনকালে ইকতা শব্দের স্থান নেয় সরকার ও পরগনা। প্রত্যেক সরকারের মধ্যে ছিল কয়েকটি পরগনা, সরকার
ছিল মুকতির সদর কার্যালয়। সরকার প্রধান তার সরকারকে খণ্ডে খণ্ডে ভাগ করে অধীনস্থ ইকতাদার বসাতেন।
অধীনস্থ ইকতাদার আবার
তার অংশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বন্দোবস্তু দিয়ে রাজস্ব আদায় করে সৈন্যদের বেতন মেটাত।
সুলতানদের মতই ইকতাদাররা বিদ্বান বা
ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে 'মিলক', 'ইনাম' বা 'ইদ্রার' ইত্যাদি নামে বংশানুক্রমিক ভাবে ভোগ করার জমি দান করতেন। অনেক সময় সুলতানরাও ইকতার
একাংশ এভাবে দান করে দিতেন। যার
ফলে ইকতাদারের আয় কমে যেত এবং নানা প্রকার
প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিত।
সুলতানি
যুগে ইকতা ব্যবস্থার প্রচলন ও বিবর্তনের ইতিহাসকে
বিশিষ্ট মার্কসবাদী ঐতিহাসিক তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সমগ্র সাম্রাজ্যের রাজস্ব সংগৃহীত প্রশাসকের মধ্যে
সরলীকরণে বিভক্ত ছিল। চতুর্দশ
শতাব্দীর প্রথমার্ধে (খলজী আমলে ও
তুঘলক সাম্রাজ্যের প্রথম যুগে) রাজস্ব দাবী এবং এর
পাশাপাশি ইকতার আয়েরও বিস্তৃতি ঘটে যখন ইকতার উপর সামগ্রিকভাবে চূড়ান্ত মাত্রায়
রাজকীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। সবশেষে
চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় থেকে (ফিরোজ শাহ থেকে
সমাপ্তি পর্যন্ত) ষোড়শ শতাব্দীর
সূচনাকাল অবধি ইকতার সংগঠনে আবার
সেই পুরনো সরল আকারটি ফিরে আসে, কিন্তু এক্ষেত্রে সম্ভবত একটি পার্থক্য রয়ে যায়, কৃষকের
উদ্বৃত্তের একটি বিরাট অংশ ইকতাদার স্বয়ং আত্মসাৎ করতে পারতো।
ইকতা ব্যবস্থার এই
পরিবর্তনের সঙ্গে আবার শাসক শ্রেণীর গঠনের পরিবর্তনেরও সম্পর্ক ছিল বলে হাবিব মনে
করেন। ইকতার প্রথম স্তরে শাসক শ্রেণীর বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি। শাসক শ্রেণী সীমাবদ্ধ ছিল যাযাবর তুর্কী বংশীয় রাজ ক্রীতদাস ও
তাদের পরিবারের মধ্যে (বারানীর শব্দবন্ধে
ইলতুৎমিসের চল্লিশচক্র ক্রীতদাস)। দ্বিতীয় স্তরে আলাউদ্দিন খলজীর রাজতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের সূচনা থেকেই শাসক শ্রেণীর
বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে।
সুলতানি আমলাতন্ত্রের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে এখন রইল কিছু ভূঁইফোঁড় ভারতবর্ষীয় তুর্কী
ভারতীয় দাস এবং বিদেশী অভিবাসী।
আলাউদ্দিন খলজী দুই দশকের
রাজত্বকালে সমসাময়িক বারানী তিনটি
অনুক্রমিক আধিকারিকের দল লক্ষ্য
করেছিলেন, যারা ক্রমান্বয়ে একে অপরের
স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। মহম্মদ
বিন তুঘলকের রাজত্বকালে ব্যাপক হারে বিদেশী হিন্দু
এবং ভারতীয় জনগোষ্ঠীর নিম্নতর শ্রেণী থেকে আধিকারিক নিয়োগ করা হয়েছিল। এর ফলে সামরিক শাসক শ্রেণীর গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন
আসে। ইকতা সংগঠনের এই দ্বিতীয় স্তরে রাজার হাতে কর্তৃত্বের
কেন্দ্রীভবন ঘটার ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীভবন ঘটেছিল। এই ব্যবস্থায় অভিজাত
শোষক শ্রেণী কখনই সন্তুষ্ট থাকতে পারে না এবং
স্বাভাবিকভাবেই দিল্লির সুলতানের মধ্যেও চিরস্থায়ী এবং আধা বংশানুক্রমিক স্বত্ব
নিয়োগের পক্ষে ভাবাবেগ জাগ্রত হয়। জনসমক্ষে পিতার পরে প্রশাসনিক পদে উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানের
নিয়োগের নীতি ঘোষণা করে অবশেষে ফিরোজ শাহ তুঘলক উপরোক্ত ভাবাবেগকে মর্যাদা দিয়ে
সম্ভ্রান্ত অভিজাতদের কৃতজ্ঞতা জিতে নেন। ফিরোজ
জন্মসূত্রে গৌরবময় নীতির প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন। লোদীদের আমলেই অভিজাতবর্গের সমস্যা তাদের অধিকারের
পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা অর্জন করে।
ইকতা ব্যবস্থা কতটা সামন্ততান্ত্রিক ছিল তার উত্তর খুঁজতে
গিয়ে ঐতিহাসিক মোরল্যান্ড ইকতার মূল বৈশিষ্ট্যগুলিকে বিশ্লেষণ করেছেন। ইন্দো-ফারসী সাহিত্য
অনুসারে ইকতা হল ভূমি রাজস্বের অধিকার দান, যার বিনিময় শর্ত হল সেবা। ইকতা দু ধরনের – ক) 'ক্যালব' এর সৈনিকরা
মাইনের বদলে ছোট ছোট ইকতা ভোগ করত, কোন প্রশাসনিক দায়িত্ব তাদের পালন করতে হত না, এরা হল ইকতাদার। খ) ইকতা মূলত প্রদেশ বা 'প্রশাসনিক
ইউনিট' যখন মুকতি তার শাসক/প্রশাসক এবং
রাজস্বের অধিকারী। এখন প্রশ্ন মুকতি আমলা না সামন্ত প্রভু?
বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মোরল্যান্ড কতগুলি
তথ্যের উল্লেখ করেছেন সেগুলি হল – ১)
মিনহাজ
এর তাবাকৎ- ই - নাসিরি
অনুসারে ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে যারা ইকতা লাভ
করেছেন তারা প্রথম জীবনে সকলেই রাজকীয় ক্রীতদাস ছিলেন। যেমন তাঘান খান (ইলতুৎমিসের
অধীনে বদায়ুন লক্ষৌতির মুকতি) সৈফুদ্দিন আইবক (সাবানা ও বরণের মুকতি) তুঘ্রিল
খান (সিরহিন্দ, লাহোর, কনৌজ ও অযোধ্যার মুকতি) প্রমূখ। এধরনের অভিজাতন্ত্রকে এশিয়ার রাজকীয়
আমলাতন্ত্রের চরিত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না, ১) যেখানে সামন্ত
রাজারা পদ ও মর্যাদায় প্রায় তার ভ্যাসালদের
সমান ছিলেন এবং তাদের উপর সামান্য প্রভুত্ব ভোগ করতেন। ২) মুকতির নিজস্ব কোন আঞ্চলিক বা ভৌম অধিকার ছিল না, সুলতানের মর্জি মাফিক লাহোর থেকে লক্ষনাবতী যত্রতত্র তিনি নিযুক্ত হতে পারতেন আবার পদচ্যুত হতে
পারতেন। বারানীর লেখা থেকে জানা যায় যে, সুলতান
গিয়াসউদ্দিন তুঘলক তার অনুচরদের মধ্যে ইকতা বন্টন
করেন যাদের পূর্বে ইকতার সঙ্গে কোন
সম্পর্ক ছিল না। এই ব্যবস্থা আর যাইহোক সামন্ত ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনীয় নয়। ৩) মুকতি তার অধীনস্থ ইকতার
শাসক চতুর্দশ শতকের লেখক আফিফ লিখেছেন যে আইন – উল - মূলক নামে একজন কর্মচারী রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন। রাজস্ব
বিভাগের মন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ হওয়ায় তিনি পদচ্যুত হলে সুলতান তাকে মুলতানের মুকতি পদটি
প্রদান করেন। আইন উল মূলক
সুলতানের মুকতি পদ নিয়ে
প্রশাসনিক কাজকর্ম চালাতে রাজি হন এই শর্তে যে তিনি রাজস্ব বিভাগের অধীনে থাকবেন
না। স্বয়ং সুলতানের কাছে তার কাজের জন্য
দায়ী থাকবেন। আফিফের এই বর্ণনা থেকে মনে করা হয় যে, মুকতি পদটি ছিল সম্পূর্ণ প্রশাসনিক। ৪) মুকতির সুলতানের জন্য
সেনা সংগ্রহ করে শিক্ষার ব্যবস্থা করত এবং সুলতানের প্রয়োজন মত তা সরবরাহ করত। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক অভিজাতদের ইকতা দিয়ে বলেছিলেন যে,
সৈন্যদের জন্য নির্দিষ্ট বেতনে তারা যেন হাত না দেয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে সুলতান ইকতার
সৈন্য সংখ্যা ও তাদের বেতন নির্দিষ্ট করে দিতেন। সৈন্যদের নির্দিষ্ট বেতন প্রদান করাই ছিল ইকতার সৈন্য সম্বন্ধে মুকতির
কর্তব্যের শেষ সীমা। বারানীর লেখা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, মুকতি অনুমোদিত ব্যয়
নির্বাহের পর বাকি টাকা রাজকোষে জমা দিতে বাধ্য থাকতেন। রাজস্ব বিভাগের কর্মচারী কর্তৃক ইকতার আয়
ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা করা এই ব্যবস্থার এক স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছিল। যদিও সুলতানের উপর হিসাব পরীক্ষার কঠোরতা নির্ভর করত। উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে মোরল্যান্ড সিদ্ধান্ত এসেছেন যে, ইউরোপীয় সামন্ত ব্যবস্থার সঙ্গে সুলতানি শাসনের ইকতা ব্যবস্থার কোন মিল ছিল না। বরং তিনি ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় হেনরি প্রবর্তিত আমলাতন্ত্রের সঙ্গে
ইকতা ব্যবস্থার তুলনা করেছেন।
তথাপি একটা জায়গায় ইকতা ব্যবস্থার সঙ্গে সামন্ততন্ত্রের মিল ছিল। ইকতা পরিকাঠামোর
মধ্যেই মুকতিরা মাঝে মাঝে বিদ্রোহ করতেন বা সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হলে এরা
প্রতিদ্বন্দ্বী রাজপুত্রদের পক্ষ নিতেন। বলবনের রাজত্বকালে বাংলার শাসক তুঘ্রিল খান বিদ্রোহ বা কারা ও অযোধ্যার
মুক্তি থাকাকালীন আলী গুসরাপ (পরবর্তীকালে আলাউদ্দিন খলজী) কর্তৃক
দেবগিরি জয় করার পর সুলতান ফিরোজ খলজীকে
হত্যা করে ক্ষমতা দখলের দৃষ্টান্ত এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। বস্তুতপক্ষে ফিউডাল
ব্যারনদের মতোই ভারতে সামরিক অফিসাররা বিদ্রোহ করত এবং এই একটি ব্যাপারই ইকতা সংগঠনকে দিল্লি
সুলতানের অস্তিত্বের পক্ষে প্রতিকূল করে তুলেছিল। বিশেষত ফিরোজ শাহ তুঘলক এবং তার পরবর্তী শাসকদের দুর্বল কেন্দ্রীয়
শাসনের সুযোগে।
এমন নয়
যে ইকতা
ব্যবস্থার শুধুমাত্র নঞ্চার্থক দিকই ছিল। প্রাথমিক পর্বে এই ব্যবস্থার শৈশব সুলতানি
প্রশাসনিক পরিকাঠামোকে বাধন দান করেছিল, তেমনি সামগ্রিকভাবে কয়েকটি আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রও ইকতা ব্যবস্থার প্রস্তুত করেছিল। ইরফান হাবিব দেখিয়েছেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পর্যায়ক্রমিক
স্থানান্তরের জন্য ইকতা মালিকরা কোন
বিশেষ গ্রামাঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণে এনে তাদের কর্তৃত্বের ভিত্তি স্থাপন করতে পারেনি। বেশিরভাগই তাদের স্বত্ব নিয়োগ
স্থান থেকে অনেক দূরে দিল্লি বা অন্য কোন নগরে বাস করত। কৃষকদের উদ্বৃত্তর একটি বিরাট অংশ
যেহেতু ভূমি রাজস্বের মধ্যে ছিল। তার ফলে গ্রাম
ও শহরের মধ্যে শুরু হয় বিশাল মাত্রার
বাণিজ্য। ফলে নগরের ভোক্তাদের জন্য চতুর্দশ
শতাব্দী থেকে শুরু হয় উচ্চ শ্রেণীর শস্য বা নগদ শস্যের উৎপাদন কারকনি এবং বানজারা নামক ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে শস্যদানা ও
অন্যান্য উৎপাদনের ব্যাপক রপ্তানিতে পুষ্ট হয়ে উঠল। দিল্লিস্থ মুলতানি ভারতীয় বণিক ও সুদখোর শাহুকাররা তুর্কী অভিজাতদের
তাদের ইকতার রাজস্বের উপর
হুন্ডিতে বিরাট পরিমান ঋণ অগ্রিম দিয়ে
সুবিশাল ধনী হয়ে উঠল। এইভাবে ইকতা ব্যবস্থা কোন না কোন উপায়ে
মধ্যযুগীয় বাণিজ্যিক বিকাশে গতি সঞ্চার করল। এর পাশাপাশি ইকতা মালিকদের রাজস্বের আকারে গ্রামীণ উৎপাদনের একটি
উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশের নিয়ত শহর মুখী
নির্গমন সুবিশাল নাগরিক জনসমষ্টি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, যার ফলে আবার নাগরিক কারুশিল্প ও জন্মলাভ করল। ইকতা ব্যবস্থার এই সকল আর্থিক তাৎপর্যকে কোন ভাবেই অস্বীকার করা
যায় না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন