সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি

 


 

মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি মুঘল ইতিহাসে এক অতি জটিল ও বিতর্কিত বিষয় মহান সম্রাট আকবর ভারতীয় রাজনীতিতে রাজপুত জাতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে মুঘল রাজপুত্র মৈত্রীর যে ধারার সূচনা করেছিলেন জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের আমলে তাতে কিছুটা ভাটা পড়লেও পরবর্তী শাসক ঔরঙ্গজেব পুনরায় রাজপুতদের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্কের পরিবর্তে যুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু বহু অর্থ ব্যয় করেও প্রাপ্তির ঝুলি থাকে শূন্য আচার্য যদুনাথ সরকার,. ঈশ্বরী প্রসাদ,. শ্রীবাস শর্মা,. ভিনসেন্ট স্মিথ,.লসলী হেগ,. পার্সিভ্যাল স্পিয়ার, ডঃ. শ্রীবাস্তব মনে করেন যে, ঔরঙ্গজেবের রাজপুতদের সঙ্গে মৈত্রীর নীতির পরিবর্তে ঐশ্লামিক ধর্মতত্ত্ব প্রতিষ্ঠার সংকীর্ণ নীতি গ্রহণ করে রাজপুতদের মুঘল সাম্রাজ্যের শত্রুতে পরিণত করেন উপরিউক্ত ঐতিহাসিকদের বক্তব্যকে নস্যাৎ করে সাম্প্রতিককালে সতীশচন্দ্র,.হম্মদ আতহার আলি,. ঘনশ্যাম দাস শর্মা,. ভার্গব বলেছেন যে, নিছক ধর্মীয় সংকীর্ণতা বা হিন্দু বিরোধী নীতি নয় রঙ্গজেবের রাজপুত নীতির পশ্চাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণ এবং রাজপুতদের অন্তর্দ্বন্দ্ব বিদ্যমান ছিল

ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি মূলত মারওয়া ও মেবার রাজ্য দুটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছিল মারওয়া ও মেবার ছিল রাজপুত রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী আকবরের অনুসৃত নীতির জন্যই মারওয়া মুঘলদের বন্ধু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল তবে মেবার বিনা প্রতিবাদে মুঘলদের অধীনতা স্বীকার না করলেও শেষ পর্যন্ত কিছুটা সম্মানের সাথে মুঘলদের অধীনতামূলক মিত্রতা স্বীকার করেছিল এই ধরনের সম্পর্কে ঔরঙ্গজেব সন্তুষ্ট ছিলেন না মাওয়াড়ের বশ্যতা ও মৈত্রী তাঁর কাছে মনে হয়েছিল মুঘলদের ন্যায় প্রাপ্য থেকে কম তাই মারওয়া দখলের ব্যাপারে তিনটি উপাদান তাঁর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল যথা মারওয়া এর ভৌগলিক অবস্থান ছিল ভারত সাম্রাজ্যের পক্ষে লোভনীয় এর মধ্য দিয়ে আগ্রা থেকে শিল্পসমৃদ্ধ শহর আহমেদাবাদ এবং ব্যস্ততম বন্দর কাম্বে যাওয়া ছিল সংক্ষিপ্ত ও নিরাপদ পথ একটি শক্তিশালী হিন্দু রাজ্য হিসেবে মারওয়াড়ের অবস্থান হিন্দু মুঘল সাম্রাজ্য এবং নিজের ধর্মনীতির পক্ষে বিপজ্জনক বলে ঔরঙ্গজেবের মনে হয়েছিল মারওয়া রাজ যশোবন্ত সিংহের মনোভাব এবং শাহজাহানের সঙ্গে ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান ক্ষুব্ধ করেছিল খানোয়ার যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে তিনি ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, আবার দেওরাই এর যুদ্ধে তিনি বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমেই ঔরঙ্গজেবকে সাহায্য করেছিল। যশোবন্তের উপর সন্তুষ্ট না হওয়ার কারণে তাকে দিল্লি থেকে বহুদূরে জামরুদে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রক্ষার কাজে নিয়োগ করেন ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে নভেম্বর রহস্যজনকভাবে যশোবন্তের মৃত্যু হয় ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে মারওয়া মুল বাহিনী বিনা বাধায় দখল করেন রঙ্গজেব ইন্দর সিংহকে মনোয়াড়ের রাজা এবং মুসলিম ফৌজদার, কিল্লাদার, কোতয়াল, আমিন প্রভৃতি কর্মচারী নিয়োগ করে মুঘল শাসন কায়েম করেন মারওয়াড়ের বহু মন্দির ধ্বংস করে হিন্দুদের উপর জিজিয়া কর আরোপ করেন

মহম্মদ আতাহার আলি তাঁর সম্পাদিত একটি প্রবন্ধে রাজপুত বিদ্রোহের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কিছু নতুন তথ্য তুলে ধরেছেন আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে রক্ষিত 'ওয়কাই আজমীর' এর পাণ্ডুলিপি থেকে দেখিয়েছেন যে, রাজপু সর্দাররা যে কোন শর্তে ইন্দর সিংহের অপসারণে রাজি ছিল যোধপুরের কিল্লাদার তাহির খাঁ রাজপুত নেতাদের সাথে পরামর্শক্রমে বাদশাকে জানিয়েছিলেন যে রাজপুত্ররা ইন্দর সিংহের নিয়োগ বাতিলের বিনিময় যোধপুরের সব মন্দির ভেঙে ফেলতে, ইসলামের বাণী প্রচার করতে এবং ইন্দর সিংহের থেকে বেশি পেশকশ দিতেও রাজি আছে। কিন্তু ঔরঙ্গজেব রাজপুতদের উপর আস্থা রাখতে পারেননি

যশোবন্ত সিংহের মৃত্যু কালে তাঁর দুই পত্নী সন্তান সম্ভবা ছিলেন স্বামীর মৃত্যুর দুমাস পরে তারা দুটি সন্তান প্রসব করলে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয় জন্মের কয়েক দিন পরে একটি সন্তানের মৃত্যু হয় এবং অপর পুত্র জীবিত থাকেন, তার নাম অজিত সিংহ যশোবন্ত সিংহের অনুগামী রাঠোর বংশীয় রাজপুত বীর দুর্গাদাস যশোবন্ত সিংহের দুই বিধবা পত্নী ও শিশুপুত্র অজিত সিংহকে নিয়ে দিল্লিতে উপস্থিত হয় এবং অজিত সিংহকে তার পিতৃ রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করার অনুরোধ জানায় ঔরঙ্গজেবের কাছে এর উত্তরে ঔরঙ্গজেব জানায় যে, অজিত সিংহ মুঘল হারেমে প্রতিপালিত হবেন এবং তিনি সাবালকত্ব অর্জন করলে তাকে মারওয়াড়ের সিংহাসনে বসানো হবে অপর একটি মতানুসারে বলা হয় যে, অজিত সিংহের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের শর্তে ঔরঙ্গজেব তাঁকে তাঁর পিতৃ রাজ্য ফিরিয়ে দিতে সম্মত হন কিন্তু দুর্গাদাস এই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে দিল্লি ত্যাগের উদ্যোগ গ্রহণ করলে রঙ্গজেব শিশু অজিত সিংহ এবং দুই রানীকে বন্দী করেন রাঠোর বীর দুর্গাদাস বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তাদের উদ্ধার করে রাজধানী যোধপুরে ফিরে আসেন ক্রুদ্ধ রঙ্গজেব এবার তাঁর তিন পুত্রের (আজম, মুয়াজ্জ, আকবর) নেতৃত্বে মারওয়াড়ের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী অভিযান শুরু করেন এবং তিনি নিজে আজমীরে উপস্থিত হন মুঘল বাহিনী যোধপুর সহ বড় বড় শহরে লুণ্ঠন চালায় এবং বহু মন্দির ধ্বংস করে সেগুলিকে মসজিদে পরিণত করেন শুরু হয় রাজপুতদের সাথে মুঘলদের নতুন সংঘাতের

মেবারের রানা রাজসিংহ এই সময়ে কয়েকটি কারণে নিষ্ক্রিয়তা ভঙ্গ করে সক্রিয়ভাবে মুঘল বিরোধের সিদ্ধান্ত নেন প্রথমত বিতর্কিত মারওয়া রাজ অজিত সিংহের মাতা ছিলেন মেবারের রাজকন্যা। ফলে তার আপৎকালীন তাকে সাহায্য করা মেবারের কর্তব্য বলে মনে করেন দ্বিতীয়ত ঔরঙ্গজেব কর্তৃক জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন মেবারের কাছে মর্যাদাহানিকর ও বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয় তৃতীয়ত ঔরঙ্গজেবের হিন্দু বিরোধী মানসিকতা এবং মারওয়াড়ের মৈত্রী মনোভাব সত্ত্বেও তার প্রতি মুঘলের আচরণ রাজ সিংহের কাছে এই সত্য স্পষ্ট করে দেখা দেয় যে, ঔরঙ্গজেবের আগ্রাসী নীতি থেকে তাঁর রাজ্যও দীর্ঘদিন দূরে থাকতে পারবে না মেবারের কোন প্রস্তুতির আগেই হাসান আলির নেতৃত্বে মুঘল ফৌজ মেবার আক্রমণ করে আকস্মিক আক্রমণে বিভ্রান্ত ও পরাজিত মহারানা গিরিকন্দরে আত্মগোপন করতে বাধ্য হয় গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে মুঘল বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন মেবারের সাথে আজমীরের যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে সক্ষম হন রানা রাজসিংহ ক্ষুব্ধ ঔরঙ্গজেব পুত্র আকবরকে তিরস্কার করে মেবার থেকে মারওয়াড়ে সরিয়ে দেন এবং মেবারের দায়িত্ব অর্পণ করেন অপর পুত্র আজমের ওপর

 পিতা ঔরঙ্গজেবের ব্যবহারে আকবর প্রচন্ড অপমানিত বোধ করেন তিনি বিদ্রোহী রাজপুতদের সঙ্গে যোগ দেন এবং রাজপুতদের সহায়তায় ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দে ১১ ই জানুয়ারি নিজেকে হিন্দুস্থানের বাদশা বলে ঘোষণা করেন পুত্র আকবরের বিদ্রোহে ঔরঙ্গজেব খুবই বিব্রত বোধ করেন এবং কূটকৌশলের মাধ্যমে রাজপুতদের সঙ্গে আকবরের বিচ্ছেদ ঘটাতে সচেষ্ট হন শিশোদীয় বংশীয় মহারানা রাজসিংহ এবং রাঠোর দুর্গাদাস একত্রে মহম্মদ আকবরকে সমর্থন জানান দুর্গাদাস নিজ দায়িত্বে আকবরকে শিবাজীর পুত্র শম্ভুজীর দরবারে পৌঁছে দেন। এরপর রাজপুতানার মোটামুটি একটি ব্যবস্থা করে আকবরকে শায়েস্তা করার জন্য রঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য যাত্রার উদ্যোগ করলে আকবর পারস্যে পলায়ন করেন এবং ১৭০৪ খিষ্টাব্দে ভগ্নহৃদয় সেখানেই প্রাণ ত্যাগ করেন 

বিদ্রোহী পুত্র মহম্মদ আকবরকে দমনের উদ্দেশ্যে বিব্রত রঙ্গজেব মেবারের সঙ্গে সন্ধির ব্যাপারে উদ্যোগী হন ইতিমধ্যে মেবার রাজ রাজসিংহের মৃত্যুর পর (১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ) তাঁর পুত্র জয়সিংহ মেবারের সিংহাসনে বসেন তিনি মুঘল ও মেবারের সংঘর্ষের অবসান চাইছিলেন এই অবস্থায় জয়সিংহ মুঘল সেনাপতি শাহজাদা আজমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন (১৬৮১) চুক্তির শর্তানুসারে মুঘল সেনাবাহিনী মেবার ত্যাগ করে জয়সিংহ মেবারের রানা বলে স্বীকৃতি পান এবং তাঁকে পাঁচ হাজারী মনসবদারের পদ দেওয়া হয় মেবার থেকে জিজিয়া কর প্রত্যাহার করা হয় এবং বিনিময়ে জয়সিংহ তিনটি পরগনা মুঘলদের ছেড়ে দেন যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ তিনি মুঘলদের তিন লক্ষ টাকা দিতে সম্মত হন তিনি কোনও বিদ্রোহী রাঠোরকে কোন প্রকার সাহায্য বা আশ্রয় দেবেন না প্রতিশ্রুতি দেন চিতোর দুর্গের মেরামত ও সংস্কার করতে পারবেন না তাতে সম্মতি দেন

 মেবার মুঘলদের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হলেও মারওয়া কিন্তু তার সংগ্রাম অব্যাহত রাখে মেবারের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করে বিদ্রোহী পুত্র আকবর এবং মারাঠাদের দমনের জন্য ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে রওনা হয় তাঁর পক্ষে আর উত্তর ভারতে ফেরা সম্ভব হয়নি সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পরবর্তী মুঘল বাদশা প্রথম বাহাদুর শাহ ১৭০৯ খ্রিস্টাব্দে এক চুক্তির ধারা অজিত সিংকে মারওয়াড়ের রানা বলে মেনে নেন এর ফলে ত্রিশ বছরব্যাপী মুঘল মাড়োয়াড়ের সংঘর্ষের অবসান ঘটে

রাজপুতদের সাথে ঔরঙ্গজেবের সংঘর্ষকে তার অদূরদর্শিতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায় আচার্য যদুনাথ সরকার ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতিতে 'চূড়ান্ত রাজনৈতিক অজ্ঞতা' বলে অভিহিত করে বলেছেন, এই ভ্রান্তির ফলে রাজপুতরা কেবল মুঘলদের শত্রুই হয়নি, মুঘল বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করে রাজপুতরা মুঘল বিরোধী হওয়ায় যোদ্ধা জাতিগোষ্ঠী থেকে দক্ষ সেনা সংগ্রহ বন্ধ হয়ে যায় . ঈশ্বরী প্রসাদ লিখেছেন যে, 'The Rajput was drained Aurangzeb's resources in men and money and lowered his prestige all over Hindustan'.

মহম্মদ আতাহার আলি, আচার্য যদুনাথ সরকারের অভিমতের সাথে এক হতে পারেননি তিনি লিখেছেন যে, সরকার অনুমান করেছিলেন যে ঔরঙ্গজেবের মারওয়া রাজ্যটিকে একটি নিষ্ক্রিয় পরাধীন রাজ্য বা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রদেশে রূপান্তরিত করতে চেয়ে ছিলেন সম্রাটের লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় উৎপীড়নের কর্মসূচির বিরুদ্ধে হিন্দু প্রতিরোধকে সম্ভাব্য দক্ষ নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করা 'ওয়কাই আজমীর' এর বক্তব্য থেকে আতাহার আলি মন্তব্য করেছেন যে 'যদি ধর্ম প্রচারই ঔরঙ্গজেবের লক্ষ হত তাহলে তিনি তা ভালোভাবে হাসিল করতে পারতেন রঙ্গজেব নিছক ধর্মীয় সংকীর্ণতা বা ধর্ম প্রসারের উদ্দেশ্যে তাঁর রাজপুত নীতি নির্ধারণ করেননি, এ কথা হয়তো সত্য, তবে এটাও সত্য যে তাঁর আচরণ ও কর্মসূচি একদা মুঘলের মিত্র এবং মুঘল সাম্রাজ্যের বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সেবক রাজপুতদের মূল অংশকে মুঘলদের শত্রুতে পরিণত করেছিল

. সতীশচন্দ্রের মতে রঙ্গজেবের সাথে রাজপুতদের বিরোধকে কেবল দুটি রাজনৈতিক শক্তির সংঘর্ষ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয় এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক বহু জাতি ও গোষ্ঠীর মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়া ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকে মদ যোগায় কেন্দ্রবিমুখ শক্তির জয়যাত্রা অতঃপর দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে মুঘল দরবারে প্রভাবশালী রাজপুত অভিজাত না থাকার ফলে দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের সাথে মুঘলদের কোনো সমঝোতার কাজে বিশ্বস্ত ও উপযুক্ত মধ্যস্থতাকারীর অভাব প্রকট হয়

 পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে মারওয়া ও মেবারের ক্ষেত্রে ঔরঙ্গজেবের উদ্দেশ্য ছিল নিছক রাজনৈতিক কিন্তু সামগ্রিকভাবে রাজপুতদের প্রতি তিনি যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন তাতে মাঝের মধ্যে ধর্মান্ধতার পরিচয় মেলে পার্সিভ্যাস্পিয়ার বলেছেন যে, সম্রাটের ব্যক্তিত্ব ধর্ম সহিষ্ণুতা ও সমদর্শী নীতি রাজপুত মিত্রতা এবং শক্তিসাম্য এই চারটি স্তম্ভের উপর মুঘল সাম্রাজ্য দাঁড়িয়ে ছিল ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা রাজপুত মিত্রতা ও শক্তিসাম্যকে নষ্ট করে সাম্রাজ্যের ভিত্তিটাকেই দুর্বল করে ফেলেছিল রাজপুতদের মিত্রতা হারিয়ে তিনি সাম্রাজ্যের র্থ-সামরিক শক্তিকে যেমন ধ্বংস করেছিলেন, তেমনি তিনি অভ্যন্তরীণ শক্তি সাম্যকে একেবারে শেষ করে দিয়েছিলেন রাজপুতানার যে আগুন তিনি জ্বেলে ছিলেন সেই আগুনের লেলিহান শিখা কিভাবে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে জীবন সায়াহ্নে অসহায় ভাবে সম্রাটকে তা দেখতে হয়েছিল

 

 

 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস

    মার্টিন লুথার ছিলেন লুথা রিয়ান মতবাদের প্রবক্তা । জার্মানির স্যাক্সসনিতে ইসলিবেন নামে একটি গ্রামে ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথারের জন্ম হয় । ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে ইউটে ম বা র্গ চা র্চে র দরজায় তিনি তাঁ র ৯৫ তত্ত্ব ঝু লিয়ে দেন । এটি ছিল পোপের স্বর্গীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ । সমস্ত জার্মানির শিক্ষিত মানুষেরা লুথারের তত্ত্বে র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল । এই ৯৫টি ছিল তাত্ত্বিক প্রশ্ন , এতে বাইবেল ও খ্রিস্টান দর্শন সম্বন্ধে তাত্ত্বিক গুরুগম্ভীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রশ্ন ছিল । উইলিয়াম ওকামের চিন্তাভাবনা দ্বারা মার্টিন লুথার প্রভাবিত হয়েছিলেন । ইউরোপের এই চিন্তা ধারা পরিণত ছিল nominalism নামে । নমিনালিস্ট চিন্তাধারায় উল্লেখযোগ্য ছিল বিশ্বাস ও নিবেদিতপ্রাণতা । নমিনালিস্টরা মনে করত বিশ্বাসই মুক্তি আনবে , তবে এই বিশ্বাস অর্জনের জন্য শাস্ত্র পড়তে হবে এবং গভীর আগ্রহের সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের বোধগম্য ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে হবে । লুথার এইমতে বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি বিশ্বাস করতেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারিত হওয়া উচিত এবং আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল রচনা করা একান্ত দরকার । তিনি খ্...