প্রথম
পানিপথের যুদ্ধের পর বাবর (১৫২৬) মুঘল
সাম্রাজ্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের (১৫৫৬) পর
মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটে ছিল। প্রথম
পানিপথের যুদ্ধে বাবর সুলতানি বংশের শেষ শাসক ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করেছিল, তার ত্রিশ বছর পর বৈরাম খাঁ নেতৃত্বে নাবালক সম্রাট আকবরের শাসনকালে আফগান সেনাপতি হিমুকে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে
দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ মুঘলরা জয়লাভ করে। হুমায়ুনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরই
আফগান সেনাপতি হিমু আগ্রা অভিমুখে অগ্রসর হয়ে ঐ শহর দখল করেন। এরপর হিমু দিল্লি অভিমুখে অগ্রসর হলে
মুঘল গভর্নর তরদি বেগ যুদ্ধ না করে পলায়ন করেন। হিমু বিনা বাধায় দিল্লি দখল করে 'রাজা বিক্রমাদিত্য' উপাধি
নিয়ে সিংহাসনে আরোহন করেন। হিমুর
আগ্রা ও দিল্লি অধিকারের ফলে আকবর তথা
বৈরাম খাঁকে বিচলিত করে। বৈরাম
খাঁ হিমুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন এবং আকবরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত
করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ১৫৫৬
খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর মাসে পানিপথে প্রান্তরে আকবর ও হিমুর মধ্যে যুদ্ধের সূচনা
হয়। প্রাথমিক পর্বে যুদ্ধে হিমু
সাফল্য লাভ করলেও তাঁর চোখে তীরবিদ্ধ হলে আফগান বাহিনী
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে শুরু করে। হিমুকে
বন্দী করে আনা হয় এবং বৈরাম খার নির্দেশে আকবর তাঁর
তরবারি দিয়ে হিমুকে হত্যা করেন।
মুঘল
ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ই নভেম্বর মুঘলরা আগ্রা দিল্লি দখল করেন। হিমুর পতন ও মৃত্যুর সাথে সাথে আফগান প্রতিরোধ ও চিরতরে নষ্ট হয়ে
যায় এবং আকবরকে ঠিক বাবরের মত আর যুদ্ধ
করতে হয়নি। হিমুর পত্নী
প্রচুর ধন-সম্পদ নিয়ে দিল্লি থেকে মেওয়াটে পালিয়ে আসেন, পীর মুহম্মদ
তাকে ধরতে পারেননি। তিনি দিল্লি
থেকে প্রচুর ধন-সম্পদ ও হিমুর বৃদ্ধ পিতাকে বন্দী করে আনে
এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়, তবে
তিনি তা অস্বীকার করেন। এর ফলে
হিমুর পিতাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়।
সিকন্দার শূর অমৃতসর জেলার চামিয়ারীতে খিজির খাঁজা খাঁকে পরাজিত
করে লাহোরের দিকে বিতাড়ন করলে বৈরাম খাঁ
খিজির খাঁজা খাঁকে সাহায্য করার জন্য ইস্কান্দার খান উজবেগকে পাঠিয়ে ছিলেন (১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ৭ই ডিসেম্বর)। বৈরাম খাঁ ও আকবর সিকন্দর শূরকে শায়েস্তা করার জন্য দিল্লি থেকে ডাহমিরির উদ্দেশ্যে
যাত্রা করেন। কিন্তু সিকন্দর
শূর শিবালিকে
পালিয়ে গিয়ে মানকোট দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বৈরাম খাঁ স ছয় মাস মানকোর্ট দুর্গ অবরোধ করে সিকন্দর শূরকে
পরাজিত করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত পলাতক অবস্থায় বাংলাদেশে তিনি মারা যান।
আফগান
শক্তিকে জাগরিত করে মহম্মদ আদিল শূর দিল্লি দখলের
পরিকল্পনা করেন। কিন্তু চূনারের নিকটে বাংলার খিজির খাঁ শূরের সঙ্গে আদিল শাহের যুদ্ধে
মৃত্যু (১৫৫৭), আলিকুলি
খাঁ কর্তৃক রুকন লোহানী ও জালাল খাঁর পরাজয়ে হতাশ হয়ে সিকন্দর শূর আত্মসমর্পণ করলে প্রথমে বিহার এবং পরে বাংলায় গিয়ে
দু'বছর পর মারা যান। শূর বংশীয় ইব্রাহিম শূর
উড়িষ্যায় আশ্রয় নেয় এবং দশ বছর পর সেখানে
মারা যান। আফগান শূর বংশীয় দাবিদারদের শেষ
প্রতিনিধির মৃত্যু হলে আকবরের পক্ষে রাজ্য পরিচালনা
সহজ হয়। পানিপথের
যুদ্ধে জয়লাভের দু’বছরের মধ্যে আকবরকে প্রতিহত করার মত আর
আফগান প্রতিদ্বন্দ্বি রইল না। মুঘল সাম্রাজ্য
বিস্তারের পথ উন্মুক্ত হয়। ভারতে
মুঘল কর্তৃত্ব স্থাপনের প্রশ্ন
সুনিশ্চিত হল। মুঘল
শক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি পেল। আকবর
ভারতবর্ষের সম্রাট বলে অভিনন্দিত হলেন। আর
মুঘলদের বিদেশি আক্রমণকারী বলে ভাবা সম্ভব ছিল না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন