সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুঘল আমলে জমিদারদের বিভিন্ন স্তর এবং মুঘল রাষ্ট্র ব্যবস্থার তাদের ভূমিকা

 

 

ভারতীয় কৃষি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক শ্রেণী হল জমিদার। আবুল ফজল 'জমিদার''বুমি' শব্দের দুটি সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করেছেনফার্সী 'বুম' এর অর্থ জমি অর্থাৎ জমির মালিক হলেন 'বুমি'। একইভাবে ফারসী শব্দ 'জমিদার' এর অর্থ হল যার জমি আছেমুঘল আমলে রাজস্ব সংক্রান্ত দলিলে জমিদার শব্দটির সঙ্গে 'মালেক' কথাটি ব্যবহার দেখা যায়, যার অর্থ 'সম্পত্তির অধিকারী' দলিলে জমিদারী কথাটি দুইভাবে ব্যবহৃত হতে পারে i) মিলকিয়াৎ- এর (মালিকের অধিকার) বিশেষ রূপ হচ্ছে জমিদারী, ii) জমির উপর সব রকমের মিলকিয়াৎ এর অধিকারের কথা জমিদার শব্দের মধ্যে ব্যক্ত আছে (গৌতম ভদ্র)আনন্দরাম মুখলিশ লিখেছেন যে, জমিদারের আক্ষরিক অর্থ হল - এমন লোক গ্রাম বা শহরের জমির কর্তা (সাহির- - জামিন) কিন্তু বর্তমানে যে লোক গ্রাম বা শহরের জমির অধিকারী এবং কৃষিকার্যে নিয়োজিত, তাকেই জমিদার বলা হয় অর্থাৎ কেবল জমি থাকলেই কেউ জমিদার হয়না যদি বিভিন্ন লোকের দখলীকৃত জমির উপর কারো ব্যাপক অধিকার থাকে সেইই হচ্ছে জমিদার। দলিলে জমিদারের সঙ্গে জমির চেয়ে গ্রামের সংযোগের কথা বারবার বলা হয়েছে খাজা ইয়াসিন লিখেছেন "জমিদারের বিভিন্ন অধিকার হল মালিকানা, নানকর, সির, যৌথ ইত্যাদি"। অর্থাৎ জমিদারীর সঙ্গে কতগুলি বিশেষ দাবি সংশ্লিষ্ট এবং সেগুলি একটি বিশেষ শ্রেণীর করায়ত্ত এই শ্রেণীটি কৃষকের থেকে স্বতন্ত্র এবং কৃষকদের উপরেই তাদের বিশেষ দাবিগুলি প্রয়োগ করে সার্বিকভাবে সেইসব অধিকার বা সব রকমের মিলকিয়াৎ এর অপর নাম জমিদারী

 গুপ্তযুগ থেকেই ভারতে ব্যাপক হারে 'অগ্রহার' বা 'নিষ্কর জমি' পুরোহিত সম্প্রদায় বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্দেশ্যে দান করার ফলে জমিতে স্বাভাবিক কারণেই এক মধ্যস্বত্বভোগীর উদ্ভব হয়েছিল যাদেরকে নারদ, বৃহস্পতি প্রভৃতি সমসাময়িক স্মৃতিগ্রন্থগুলিতে 'ক্ষেত্র স্বামী' হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছেরামশরণ শর্মা, ডি. এন. ঝা এবং বি. এস. যাদবের গবেষণা থেকে জানা যায় যে, ভূমিজ্ব গোষ্ঠী নানা কারণে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হয়ে উঠছিল। গুপ্তযুগের পর থেকে পাল, প্রতিহার, রাষ্ট্রকূট, চো, চালুক্য, সেন, চান্দেল্ল,চুরি ইত্যাদি আঞ্চলিক রাজবংশ ৬০০-১২০০ কালপর্বে রাজত্ব করেছিলযাদের রাজস্ব ছিল সীমিত (কেননা এলাকা সীমাবদ্ধ) অপেক্ষাকৃত বিকেন্দ্রীকৃত শাসনের আবর্তে এইসকল রাষ্ট্রের পক্ষে প্রাথমিক উৎপাদকের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ দুষ্কর হয়ে পড়ে ফলে গ্রামাঞ্চলে মন্ডলিক প্রভৃতি গ্রামীণ নেতার ক্ষমতা এই সময় থেকে বাড়তে থাকে বারানীর লেখা থেকে জানা যায় যে, আলাউদ্দিন ও 'খুৎ' এবং 'মুকদ্দম' রূপী মধ্যস্বত্বভোগীদের বাড়বাড়ন্তে যথেষ্ট বিরক্ত ছিলেন সুতরাং বলা চলে যে, মুঘল যুগের অনেক আগে থেকেই জমিতে অধিকার ভোগকারী একটি শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছিল যদিও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু উল্লেখ ছাড়া সুলতানি যুগ পর্যন্ত স্বতন্ত্র শ্রেণী হিসেবে 'জমিদার' এর উপস্থিতি বিশেষ একটা দেখা যায় না মুঘল যুগে এদের উত্থান হয় আকবরের সময় থেকে মুঘল জমিদারদের অর্থ দাঁড়ালো যে জমির উদ্বৃত্তের একাংশ পুরুষানুক্রমে ভোগ করবে মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এই অধিকার বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল দোয়াব অঞ্চলেখোতি, মোকাদ্দমি, অযোধ্যায় বিশ্বী ও সত্যারোহী, রাজস্থানে ভোমি এবং গুজরাটে বান্থা বা বাঁধ স্বত্ত্বের মালিকানা হল জমিদার। বান্থ, ভোমি ইত্যাদি স্বত্ত্বের অধিকারীদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও তাদের বিভিন্ন ধরনের অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যে একটি ঐক্যসূত্র ছিল ঐক্যসূত্রটি হল এসব স্বত্ত্বের মালিকানা, এগুলি বিক্র করতে পারত এবং সরকারকে রাজস্ব দিতে বাধ্য ছিল।

জমিদারদের অধিকার ও ভূমিকার প্রশ্নে যাওয়ার আগে মুঘল যুগের জমিদারদের স্তরবিন্যাসকে আলোচনা করা দরকার নোমান আহম্মদ সিদ্দিকী মুঘল যুগের জমিদারদের দুই ভাগে ভাগ করেছেন 'পেশকশী''মালগুজারি' নুরুল হাসান ও ইরফান হাবিব জমিদারদের তিন ভাগে ভাগ করেছেন – 'ওয়াতান', 'মধ্যস্বত্বভোগী''প্রাথমিক মালগুজারি' গৌতম ভদ্র এই তিন শ্রেণীর জমিদারের কথা বলেছেন i) ভূম্যধিকারী যারা স্থানীয়ভাবে স্বাধীন ক্ষমতার অধিকারী ছিল ii) অন্তবর্তী জমিদার এবং iii) প্রাথমিক স্তরের খুদে জমিদার তিনি আরো বলেছেন যে, বহু ক্ষেত্রেই তিনটি স্তরের মধ্যে সংমিশ্রণ ও সংযোগ ছিল তথাপি তিনটি স্তরের জমিদারদের বিষয়ে পৃথক আলোচনা করা যেতে পারে

ভূমধ্যধিকারী ওয়াতন শ্রেণীর জমিদাররা হলেন স্থানীয়ভাবে স্বাধীন ক্ষমতার অধিকারী সামন্ত রাজারা এদের কিলাচা (দুর্গ) এবং সৈন্য বাহিনী ছিল আকবর শাহী দরবারে উচ্চপদে বা মসনদ দিয়ে এই সকল রাজা, রানা, রায় উপাধিধারী জমিদারদের মুঘল প্রশাসনিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন অনেক সময় উত্তরাধিকার প্রশ্নে হস্তক্ষেপ করে সম্রাটরা তাঁদের উচ্চতর ক্ষমতা কায়েম করার চেষ্টা করেছিল জাহাঙ্গীর বিকানীরের রাজার মৃত্যুর পর ছোট ছেলের দাবিকে নাকচ করে বড় ছেলেকেই রাজা হিসেবে স্বীকার করেছেন আবার অনেক সময় এই সমস্ত রাজাদের অধীনস্থ প্রভাবশালী সর্দারদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের উচ্চতর মসনব দেওয়া হয়েছে মাড়য়ারের দুর্গাদাসের দৃষ্টান্ত এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে এই সমস্ত সামন্তরা রাজাদের অধিকাংশই ছিলেন পেশকশী জমিদার অর্থাৎ এদের ক্ষেত্রে অন্যান্য মালগুজারি জমিদারদের মত জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ধারণ করতে হত না একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব বা পেশকশ (Tribute) এরা রাজকোষে জমা দিতেনকিন্তু তা সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রেমুঘল সম্রাটরা তাদের জমিদারী অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে নানা রকম তথ্য সংগ্রহ করে বহু পেশকশী জমিদারকে মালগুজারী জমিদারে রূপান্তরিত করতে (যেমন বীরভূমের রাজা)ব্যবসা-বাণিজ্যের কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা ছাড়া এই পেশকশী জমিদাররা মোটামুটি ভাবে স্বাধীন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন এবং মুঘল রাষ্ট্রশক্তির প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে নিলে নিজস্ব ওয়াতন জায়গীরের উদ্বৃত্ত সম্পদের উপর এদের ক্ষমতা ছিল নিরঙ্কুশ ওয়াতন সর্দার অনেক সময় সম্রাটকে সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করত ওয়াতন সর্দার শাসিত অঞ্চলের কৃষকরা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ছিল বার্নিয়ে এই মত অধুনা ঐতিহাসিকদের নিকট পরিত্যক্ত হয়েছে

ওয়াতন জমিদার এবং প্রাথমিক স্তরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান ছিল মধ্যবর্তী বা মধ্যস্বত্বভোগী জমিদারদের। এরা প্রাথমিক জমিদার ও রাষ্ট্রের মধ্যে একটি যোগসূত্র রচনা করতেন অনেক সময়ই কোন বিশেষ জমিদারকে বেছে নেওয়া হত যারা নিজের জমিদারী ছাড়াও অন্যান্য জমিদারদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করে জায়গীরদারদের হাতে তুলে দিতেন দের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এই অধিকারের সঙ্গে জমির উপর কোন স্বতন্ত্র অধিকার বা স্বত্বের সম্পর্ক জড়িত ছিল না, এর সঙ্গে জড়িত ছিল সেবার সম্পর্ক, কাজের সম্পর্ক, মধ্যযুগীয় দলিলে যাকে বলা হয় 'খিদমৎ'। এই 'খিদমৎগুজারি' জমিদাররা রাজস্ব সংগ্রহ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাষ্ট্রকে সাহায্য করতেন এর বদলে তারা নানা রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত ও উদ্বৃত্ত সম্পদের একাংশ ভোগ করত চৌধুরী, মুখিয়া, মুকদ্দম, কানুনগো, দেশমুখ, দেশপান্ডে, তালুকদার ইত্যাদি নামে এই শ্রেণীকে অভিহিত করা হত গ্রামের প্রাথমিক জমিদারদের মধ্যে থেকেই মুকদ্দম বা মুখিয়া নিযুক্ত হত পরগনার ভিত্তিতে নির্বাচিত হত চৌধুরী কানুনগোর কাছিল জমি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও তার রক্ষণাবেক্ষণ ও জমি জরিপে সহযোগিতা করা দাক্ষিণাত্যে চৌধুরী ও মুকাদ্দমের অধিকারকেই দেশমুখ বা দেশপান্ডে বলে স্বীকার করা হত বাংলায় তালুকদার হল সেই সব ভূমধ্যধিকারী যারা জমিদারদের মাধ্যমে সরকারকে রাজস্ব দিত আবার অযোধ্যায় তালুকদার বলা হত তাদেরকে যারা অন্য জমিদারদের হয়ে সরকারকে খাজনা দিত এইসকল জমিদাররা সেবার বদলে নিজেদের রাজস্ব থেকে ছাড় আবওয়াবের অংশ, নিষ্কর জমি ইত্যাদি অধিকার বংশানুক্রমিক ভাবে ভোগ করত যদিও রাস্ট্র ইচ্ছা করলেই এদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারত ত্রিবেণী তীর্থযাত্রীদের উপর হামলা করার অপরাধে আকবর এলাহাবাদের চৌধুরীকে বরখাস্ত করেছিলেন আবার অনেক সময় মুঘল সম্রাটরা এই ধরনের জমিদারীও সৃষ্টি করেছেন আকবর আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য  ত্রিহুতে গোপাল দাসকে চৌধুরী ও কানুনগোর অধিকার দেন এবং তারই ফলে দ্বারভাঙ্গা রাজবংশের জন্ম হয় সুতরাং মধ্যস্বত্বভোগী জমিদারদের এই জাতীয় অধিকার মুঘল রাষ্ট্রশক্তির উপরই নির্ভরশীল ছিল

 জমিদারদের মধ্যে একেবারে নিচের স্তরে ছিল প্রাথমিক শ্রেণির 'মালগুজারি' বা 'মালওয়াজিব' জমিদাররা (অর্থাৎ রাজস্ব আদায়কারী মালগুজারি) জমির উপর দের একটি স্বতন্ত্র সত্তা ছিল এই 'মালিক কৃষক' হয় নিজের জমি চাষ করতেন বা অন্য কৃষকদের দিয়ে জমি চাষ করাতেন আবার অন্যদিকে গ্রামের উপরে মালিকানার অধিকারও তাদের ছিল এদের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষকদের কাছ থেকে ভূমি রাজস্ব আদায় করা হত পরিবর্তে এরা পেতেন পারিশ্রমিক, যাকে বলা হত 'নানকর' যা ছিল আদায়ীকৃত ভূমি রাজস্বের একটি অংশ, আবার কখনো বা রাজস্ব মুক্ত জমি প্রাথমিক জমিদারদের অধিকার ছিল বংশগত ও হস্তান্তরযোগ্য কৃষির সমপ্রসারণের জন্য প্রাথমিক জমিদারদের উৎসাহ দেওয়া হত ভূমি রাজস্ব ছাড়াও অনেক উপকর বা আবওয়াব আদায়ের দায়িত্ব ছিল প্রাথমিক জমিদারদের উপর, যার একটি বড় অংশ তাকে রাজস্বের সঙ্গে জমা দিতে হত।

জমিদারদের অধিকার কর্তব্য এবং ভূমিকা: মুঘল সাম্রাজ্যের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা পরিচালনায় জমিদার শ্রেণী অপরিহার্য বলে বিবেচিত হত সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে জমিদারদের ছিল দ্বৈত সত্ত্বা একদিকে সে ভূমিস্বত্বভোগী প্রজা, আবার অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী তাই মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বত্রই জমিদারদের উপস্থিতি ছিল বলে নুরুল হাসান সহ অনেকেই মনে করেছেন তবে শাহজানাবাদের এক প্রশাসনিক পুস্তিকায় গ্রামের জমিকে খুদকাস্ত এবং 'জমিন্দারা' বা জমিদারের নিজে চাষযোগ্য জমি এবং রায়তি জমি এভাবে ভাগ করা হয়েছে ইরফান হাবিব তাই মনে করেন যে, জমিদারী এলাকার বাইরে কোথাও কোথাও রায়তি এলাকা ছিল তথাপি মুঘল ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার মেরুদন্ড স্বরূপ ছিলেন জমিদাররা

  মুঘল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জমিদারদের অধিকারকে নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে অযোধ্যা থেকে প্রাপ্ত দলিল অনুসারে জমিদারদের দুটি দাবী আছে – i) রসুম- - জমিদারীii) হকুক - জমিদারী অর্থাৎ জমিদাররা কৃষকদের উৎপাদনের একটি অংশের দাবীদার যেটি রাজস্ব থেকে পৃথক অর্থাৎ জমিদারদের একটি বিশেষ মালিকানা বা স্বত্ব মুঘল রাষ্ট্র স্বীকার করেছিল বাংলাদেশের জমিদাররা রাষ্ট্রের জন্য রাজস্ব সংগ্রহকারী হিসেবে বিনা খাজনায় কিছু জমি দখল করতে পারত অর্থাৎ জমিদারদের অধিকারের দুটি স্বরূপ রয়েছে ১) জমিদারদের জমির উপর বিশেষ এক জাতীয় স্বতন্ত্র অধিকার এবং ২) জমিদারদের গ্রামে রাজস্ব সংগ্রহের অধিকার এই যৌথ অধিকার জমিদারদের কৃষক ও জায়গীরদারদের কাছ থেকে পৃথক করেছিল জমিদারদের অধিকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল যে, এই অধিকার বিক্রয়যোগ্য ছিল এবং বংশানুক্রমিক ব্যক্তিগত সম্পত্তির সমস্ত লক্ষণই এর মধ্যে ছিলজমিদারির অধিকার বিভাজ্য ছিল অনেক সময় এই অধিকার একাধিক উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত হত মনে রাখতে হবে যে জমিদার গ্রামের কৃষকদের জমির মালিক ছিল না তার নিজস্ব জমি সে নিজে বা ভাগচাষী দিয়ে চাষ করাতে পারত কিন্তু যে জমিতে কৃষক নিজে সেচ ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করেছে ,সেই জমিতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার সাধারণত জমিদারদের থাকত না বিদ্রোহী বা জোতল না হলে নিজস্ব অঞ্চলে জমিদাররা মোটামুটি স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করতেন দেহাত-তালুকে কৃষকদের অনুপস্থিতিতে জমি বন্দোবস্ত করা, গ্রামের নতুন কৃষক বসানো জমিদারদের বিশেষ অধিকারের মধ্যে ছিল অর্থাৎ নিজস্ব এলাকায় সব জায়গায় ঠিকমত চাষ হচ্ছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব ছিল জমিদারের

 স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থাকলেও মুঘল জমিদার যা খুশি তাই করতে পারত না উদ্বৃত্ত সম্পদ জমিদারদের অংশ আইন ও প্রথা অনুযায়ী নির্ধারিত ছিল, ইচ্ছামত তার হার জমিদার বাড়াতে পারত না জমিদার যখনই সেই হার বাড়াতে চেষ্টা করত তখনই তার বিরুদ্ধে সম্রাটের কাছে আবেদন করার রীতি ছিল এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারদের পাওনা উল্লেখ করা যেতে পারে - অযোধ্যা অঞ্চলে জমিদারদের পাওনা ছিল 'সতারোহী'-বিঘা প্রতি দশ সের উৎপন্ন শস্য ও একটি দামরাজস্থানের জমিদার বা ভূমিয়া আদায় করত ভোম নামে জমিদারী কর। গুজরাটের জমিদাররা বাঁ আদায় করত, যার পরিমাণ দাঁড়াত আদায়কৃত রাজস্বের ২৫% দাক্ষিণাত্যের যৌথ ও ছিল এরকম, (রিসালা--জিরাত নামক একখানি সমকালীন পুস্তকে বলা হয়েছে যে আদায়ীকৃত রাজস্বের এক টাকার মধ্যে ৯-৬ পাই (পয়সা) পেত রাষ্ট্র, জমিদার পেত ৫-৬ পাই, আর পাটোয়ারী বা তরফদার পেত এক আনা এই হিসাব যদি ঠিক হয় তাহলে জমিদার সংগৃহীত রাজস্বের ৩৩% ভোগ করতো এই হিসাবটি অবশ্য বাংলাকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে অন্যান্য অঞ্চলে জমিদারের মোট প্রাপ্য ৩-২০% এর মধ্যেই থাকত শিরিন মুভির সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা যায় যে মুঘল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রেই উদ্বৃত্ত সম্পদে জমিদারের অংশ ছিল প্রায় এক পঞ্চমাংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা 'জমিনদারার উমদার' ক্ষেত্রে এই অংশ আরো বেশি হওয়া স্বাভাবিক

মুঘল ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ এই জমিদার শ্রেণী আবার মুঘল রাষ্ট্রের পক্ষে বরাবরই ছিল এক বিরাট সমস্যা স্বরূপ জমিদারদের সামগ্রিক শ্রেণী চরিত্র বিশ্লেষণ করলে সমস্যাটা উপলব্ধি করা যেতে পারে প্রথমত, এই জমিদার শ্রেণী সশস্ত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিল আবুল ফজল লিখেছেন যে 'জমিদারদের সৈন্যবাহিনীর সংখ্যা ৪৪ লক্ষেরও বেশি এলাহাবাদের বিভিন্ন পরগনার প্রাপ্ত দলিল থেকে জানা যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমিদাররাও নিজেদের সশস্ত্র দল নিয়ে রাজস্ব আদায়ের জন্য ছোট ছোট মাটির কেল্লা তৈরি করত এবং তা সম্পূর্ণ আইনসম্মত ছিল দ্বিতীয়ত, বর্ণ বা গোত্র অনুযায়ী গ্রাম গঠিত হবার ফলে জমিদাররা নিজেদের জাতি বন্ধনের মাধ্যমেই সামরিক শক্তি গড়ে তুলত এই জাতি এবং গোষ্ঠীগত আনুগত্যের ভিত্তিতে তারা সৈন্য-সামন্ত ও (দলিলে উলুখ শব্দটি ব্যবহৃত) জোগাড় করতেন আবার অনেক সময় 'পাইকান' 'চাকরান' ইত্যাদি কর মুক্ত জমি দিয়ে অন্যান্য জাতি এবং গোষ্ঠী থেকেও সৈন্য সংগ্রহ করতেন। তৃতীয়ত, জমিদারদের আর এক ধরনের বিশেষ ক্ষমতা ছিল, তা হল স্থানীয় অবস্থার সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে জাতিগত যোগাযোগ জমির উৎপাদনক্ষমতা, স্থানীয় ঐতিহ্য সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা, আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়গুলি স্থানীয় বাতাবরণে জমিদারদের যথেষ্ট ক্ষমতাশালী করে তুলেছিল তবে জমিদারদের এই ক্ষমতা ছিল স্থানীয় ব্যাপক নয় স্থানীয় বলে এই ক্ষমতা বিচ্ছিন্নতাবোধের জন্ম দিয়েছে ফলে মুঘল-ই-আজম এর ব্যাপক ও কেন্দ্রীভূত শক্তির বিরুদ্ধে জমিদারদের স্থানীয় শক্তি দুর্বল বলে প্রতিভাত হয় বিপরীত ভাবে বিচ্ছিন্ন ও বিস্তৃত বলেই জমিদারদের বিদ্রোহকে দমন করা বা তাদের অবজ্ঞা করা কখনোই কেন্দ্রীভূত মুঘল শক্তির পক্ষে সম্ভব হয়নি

বস্তুতপক্ষে সমগ্র মুঘল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব নির্ভর করত এই স্থানীয় প্রভাবশালী জমিদারদের সহযোগিতা ও আনুগত্যের উপর কারণ রাজস্ব আদায় করা জমিদার শ্রেণীর সাহায্য ছাড়া সম্ভব ছিল না তাই আকবরের সময় থেকেই এই সমস্ত আধাসামরিক এবং প্রধানত অমুসলিম গ্রামীণ অভিজাত শ্রেণীর লোকদের আধা-সরকারি সহযোগী শ্রেণীতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা চলছিল অধ্যাপক রিচার্ডস এর মতে ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে এই চেষ্টার ত্রুটি দেখা দেয় যার ফলে তার মৃত্যুর পর এইসব স্থানীয় নেতাদের প্রধানত মধ্যবর্তী জমিদারদের আনুগত্যে ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে তবে মুজফফর আলম দেখিয়েছেন যে, মারাঠা আন্দোলনের সময় ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্যে ভূম্যধিকারীদের সহযোগিতা লাভের যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা অনেকাংশেই সফল হয়েছিল বাড়তি সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে এইসব দেশমুখ, দেশপান্ডে খুশি মনে মারাঠাদের বিরুদ্ধে মুঘলদের সাহায্য করেছিল অবশ্য প্রাথমিক জমিদাররা প্রথম থেকেই মারাঠাদের সহযোগিতা করেছিল

প্রথম থেকেই মুঘল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক স্বাভাবিক ও বাস্তব আর্থিক দ্বন্দ্বের বীজ লুকিয়ে ছিল - কৃষক কর্তৃক উৎপাদিত উদ্বৃত্তর ভাগকে বেশী লাভ করবে - রাষ্ট্রের পক্ষে জায়গীরদার না আঞ্চলিক দিক দিয়ে প্রভাবশালী জমিদার সম্পদের সিংহভাগ (/৫ অংশ) জায়গীরদাররা নিয়ে নেবার ফলে তাদের সঙ্গে জমিদারদের শত্রুতামূলক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটত। বলাবাহুল্য নিজস্ব সৈন্যবাহিনীর সাহায্য, সমজাতীয় কৃষকদের সমর্থন লাভ করে জমিদাররা রাজস্ব না দেওয়ার মাধ্যমে বিদ্রোহ প্রায় সমস্ত মুঘল দলিলেই জমিনদারান 'জোরতলব' এবং 'রাইয়তি সরকশথএর উল্লেখ আছে যার অর্থ বিদ্রোহী জমিদার ও কৃষকদের দলবল তবে প্রথম মলে বিদ্রোহগুলির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রধানত প্রাথমিক শ্রেণির জমিদাররা পরের দিকে সমস্ত শ্রেনীর জমিদারদের অসন্তোষ ও বিদ্রোহ এক ব্যাপক আকার ধারণ করে আকবরের রাজত্বকালে হিন্দু সামন্ত ও জমিদাররা প্রায় ২৯টি বিদ্রোহ করেছিল; মুসলিম পুরাতন শাসকশ্রেণী করেছিল ৭৯টি ১৬১৮ এর শোভন কুলির বিদ্রোহ, ১৬২০ এর কিসওয়ার বিদ্রোহ, শাহজাহানের রাজত্বকালে বুন্দেলাদের বিদ্রোহ, ১৬৬৯ ও ১৬৮৬ এর জাঠ বিদ্রোহ, ১৬৯০ এ বাংলায় শোভা সিং এর বিদ্রোহ ইত্যাদি অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়, যেখানে জমিদার বা কৃষকদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে মুঘল রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল মুঘল দলিলে প্রমাণ করে যে, খাজনা দানে অস্বীকার করে জমিদারদের বিদ্রোহী হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল সান্দিলা, বিজাপুর, মুজাফরগড় ইত্যাদি অঞ্চলের জমিদাররা মুঘল সৈন্যবাহিনী না পাঠালে রাজস্ব দিতেন না বরং অন্য জমিদারদের অঞ্চলে রাজস্ব লুট করতেন তবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই যে, রাষ্ট্রের শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে জমিদার ও কৃষকরা সর্বদায় ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করত আগ্রা ও আলিগড় জমিদার ও কৃষক একই সঙ্গে লড়াই করলেও আজমির বা থম্বোর অঞ্চলে কৃষকরা সরাসরি জমিদার বিদ্রোহের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ছিল

 পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল যুগে জমিদাররা সুস্পষ্টভাবেই ছিল একটি শোষক শ্রেণী যাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিল সমঝোতার এবং শত্রুতার আঞ্চলিক বাতাবরণে প্রভাবশালী হলেও জাতপাত ও স্থানীয় বন্ধনে তারা এত বেশী সংকীর্ণতায় বাঁধা পড়ে ছিল যে কখনই তারা একটি ঐক্যবদ্ধ শাসকশ্রেণীর রূপ নিয়ে সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পারেনি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস

    মার্টিন লুথার ছিলেন লুথা রিয়ান মতবাদের প্রবক্তা । জার্মানির স্যাক্সসনিতে ইসলিবেন নামে একটি গ্রামে ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথারের জন্ম হয় । ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে ইউটে ম বা র্গ চা র্চে র দরজায় তিনি তাঁ র ৯৫ তত্ত্ব ঝু লিয়ে দেন । এটি ছিল পোপের স্বর্গীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ । সমস্ত জার্মানির শিক্ষিত মানুষেরা লুথারের তত্ত্বে র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল । এই ৯৫টি ছিল তাত্ত্বিক প্রশ্ন , এতে বাইবেল ও খ্রিস্টান দর্শন সম্বন্ধে তাত্ত্বিক গুরুগম্ভীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রশ্ন ছিল । উইলিয়াম ওকামের চিন্তাভাবনা দ্বারা মার্টিন লুথার প্রভাবিত হয়েছিলেন । ইউরোপের এই চিন্তা ধারা পরিণত ছিল nominalism নামে । নমিনালিস্ট চিন্তাধারায় উল্লেখযোগ্য ছিল বিশ্বাস ও নিবেদিতপ্রাণতা । নমিনালিস্টরা মনে করত বিশ্বাসই মুক্তি আনবে , তবে এই বিশ্বাস অর্জনের জন্য শাস্ত্র পড়তে হবে এবং গভীর আগ্রহের সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের বোধগম্য ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে হবে । লুথার এইমতে বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি বিশ্বাস করতেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারিত হওয়া উচিত এবং আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল রচনা করা একান্ত দরকার । তিনি খ্...