সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ক্যালভিনপন্থী ধর্মসংস্কার আন্দোলন

 


 

১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথার যে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তাঁকে অনুসরণ করে পরবর্তী সময়ে সংস্কার আন্দোলনের ধারা অব্যাহত ছিল এই সংস্কারকদের মধ্যে একজন ছিলেন জন ক্যালভিন ফ্রান্সের প্যারিস শহরের উত্তর পূর্বে  য়ঁ নামক অঞ্চলে একটি উচ্চবিত্ত পরিবারের ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে জ ক্যালভিন জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন একজন আইনজীবী এবং স্থানীয় বিশপের বিষয়-আশয় দেখাশুনা করতেন মাতা ছিলেন একজন ধার্মিক ব্যক্তিত্ব ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে ক্যালভিন প্যারিসে স্কুলে যোগদান করেন এবং খানে মন্টেগু কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন তবে ওই কলেজে পড়াশোনা করার সময় ক্যালভিন ল্যাটিন সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি আইনজীবী হিসাবে উত্তীর্ণ হন কিন্তু সেই বছরই তাঁর মধ্যে এক আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হয় এবং তিনি ধর্মীয় জীবন যাপন করতে মনস্থির করেন প্রতিষ্ঠিত ক্যাথলিক ধর্মের প্রতি তিনি সন্ধিহান হয়ে পড়েন।তবে প্রতিষ্ঠিত ক্যাথলিক চার্চের সমালোচকদের পক্ষে তখন ফ্রান্সে নিরাপদ ছিল না ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে প্রোটেস্ট্যান্টদের সান্নিধ্যে আসায় ফ্রান্স ছাড়তে বাধ্য হয়। তিনি স্ট্রাসবুর্গ (Strasburg) এবং অবশেষে ব্যাসেল এ উপাসনার পদ্ধতি স্থির করে তার মনোমত ধর্মীয় ও নৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলেন

 ব্যাসেলে থাকাকালীন ক্যালভিন ফরাসি সংস্কারকদের প্রচারের উপযোগী লেখালেখি শুরু করেন এবং রাজা প্রথম ফ্রান্সিস তাদের বিরুদ্ধে যে অ্যানাব্যাপ্টিজুম এর অভিযোগ এনে ছিলেন তা খন্ডন করার চেষ্টা করেন প্রশ্ন-উত্তরের ভিত্তিতে ল্যাটিন ভাষায় লিখিত ক্যালভিনের ‘The institutes of the Christian religion’ মহান ধর্মীয় পুস্তকটি ১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে ব্যাসেলে প্রকাশ করেন এই পুস্তিকায় তিনি প্রথমে ধর্মতত্ত্বের ব্যাখ্যা নিয়ে লিখলেও পরবর্তী সংস্করণগুলিতে চার্চ সংগঠনের উপর বেশি জোর দেন।

 লুথারের মতের সঙ্গে ক্যালভিনের লেখার সাদৃশ্য লক্ষ করা যায় ক্যালভিন লিখেছিলেন যে ধর্ম বিশ্বাসের মতো বিষয়গুলির ভ্রান্তি থাকবে, একমাত্র বিশ্বাস দ্বারাই মুক্তিলাভ সম্ভব তিনি বলেন ঈশ্বরের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল এক অনমনীয় নিয়মের পর মানুষের জীবন নির্ভরশীল, ঈশ্বরের পরিকল্পিত এই নিয়ম মেনে চলা ছাড়া মানুষের সামনে আর কোন বিকল্প নেই তিনি প্রচার করেছিলেন যেহেতু বিশ্বাস হল ঈশ্বরের উপহার, সেহেতু ঈশ্বর সকল মানুষকে এই উপহার দেয়নি, এই উপহার দিয়েছেন তাদের জন্য যারা শাশ্বত জীবন প্রবাহের জন্য জন্মেছেন। ক্যালভিনবাদ ছিল সাধারণ জনগণকে বাদ দিয়ে কেবল মাত্র ধর্ম যাজক ও অভিযাতদের আঁতাত যা সাধারণভাবে উদারনীতি বিরোধী, অত্যাচারী এবং রক্ষণশীল জেনেভাতে প্রতিষ্ঠিক্যালভিনের নিজের সরকার এবং ম্যাসাচুয়েটস এর পিউরিটান সরকারের প্রকৃতি এমনই ছিল

 কোন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি ঐশ্বরিক নির্দেশের ব্যাপারে আশ্বস্ত না হয়ে ঈশ্বরের আঞ্জাপালন করার আশা করতে পারে না ঐশ্বরিক আশীর্বাদ প্রাপ্তির যে সকল ধর্মীয় আচার রয়েছে তার মধ্য দিয়েই ইহা সম্ভব ক্যালভিন কেবলমাত্র ব্যাপ্টিজম এবং ইউখ্যারিস্টকেই স্বীকৃতি দেন ইউখ্যারিস্ট শব্দের অর্থ ধন্যবাদ জ্ঞাপন। সমগ্র খিষ্টান বিশ্বে এটি ছিল একটি প্রধান আকা এবং পূজার প্রধান পদ্ধতি এটিকে রোমান ক্যাথলিক ধর্মের Mass বলা হত পরবর্তীকালে প্রোটেস্ট্যান্টরা একে বলতো lord Supper যিশুখ্রিস্টের শেষ আহা রুটি এবং মদকে তিনি তার শরীর এবং রক্তের সঙ্গে একাত্ম বলে চিহ্নিত করেছিলেনসেই জন্য খ্রিস্টীয় আচারে এই দুই জিনিসের উপস্থাপনাকে যিশুখ্রিস্টের প্রকৃত উপস্থিতি হিসাবে মনে করা হতো

ক্যালভিনের আইন সংক্রান্ত পড়াশুনা তাঁকে এই ধারণায় পৌঁছে দিয়েছিল যে ঈশ্বর হচ্ছে আইন প্রণেতা এবং সেই আইনকে মান্য করতে হবে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা শয়তানের কাজ এই বিশ্বে খ্রিস্ট্রীয় ধর্মাবলম্বীদের প্রধান কর্তব্য হল ঈশ্বরের আদর্শকে প্রয়োগ করা প্লেটোর প্রজাতন্ত্রের মত এমন একটি সংঘবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল সমাজ তৈরি করা যেখানে ঈশ্বরকে উপলব্ধি পরিবেশ থাকবে, থাকবে না মানুষের ভ্রান্ত হওয়া মুক্তির প। ফ্রান্সে তিনি যে ধরনের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও জেনেভাতে সে সুযোগ ছিল জেনেভা ছিল একটি স্বাধীন নগরী এবং সেখানকার নাগরিকরা নিজেরাই রাজকর্মচারী নিয়োগ ও আইন প্রণয়ন করত জেনেভাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫৩৫ সালে Mass বাতিল করে পরের বছরই পুনর্গঠিত ধর্ম গৃহীত হয় ১৫৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ক্যালভিন জেনেভাতে আসেন এবং তখন সেখানেই আধ্যাত্বিক পরিবর্তন সবে শুরু হয়েছিল

 ক্যালভিন Basle থেকে Strasburg আসার পথে আকস্মিকভাবে জেনেভাতে চলে আসে জেনেভা সংস্কারপন্থীদের মধ্যে তিনি পরিচিত ছিলেন সংস্কারপন্থীরা ক্যালভিন জেনেভাতে অবস্থান করে ধর্মসংস্কার সম্পূর্ণ করার জন্য আহ্বান জানালে তিনি সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেননি লুথারের মত ক্যালভিন বিশ্বাস করতেন না যে পার্থিব জগতের শাসকদের কেবলমাত্র জাগতিক শৃঙ্খলা রাখার দায়িত্ব রয়েছে আবার জুইংলি এর মত মনে করতেন না চার্চ এবং রাষ্ট্র বাস্তবে একই

 ক্যালভিন মনে করতেন চার্চ শাসিত এবং সাধারন রাজ্যগুলির সরকার ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই শাসন পরিচালনা করবেই। কিন্তু খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় জীবন নিয়ন্ত্রণের ভার কেবলমাত্র চার্চের হাতে থাকা উচিত চার্চকে নিজস্ব মত ও নৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া দরকার এবং সেইসঙ্গে যে সমস্ত ব্যক্তি অবাধ্য তাদের শাসন করার ব্যাপারে চার্চকে রাষ্ট্রশক্তির সহায়তা করা উচিত জেনেভার ধনী এবং সংস্কৃতিবান বুর্জোয়া সম্প্রদায় যারা ইরাসমাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তারা কেলভিনের প্রস্তাবিত পথে তাদের ক্ষমতা খর্ব করতে চায়নিতারা জুরিখের অনুসরণেই ক্ষমতার বন্টন চেয়েছিল ১৫৩৭ খ্রীষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল তারা কেউই ক্যালভিনকে সমর্থন করেনি বছরের এপ্রিল মাসে জেনেভার ম্যাজিস্ট্রেটরা ক্যালভিনকে শহর ছেড়ে চলে যেতে আদেশ দেয়  

 Strasburg এ নির্বাসিত থাকার সময়ে ক্যালভিন চার্চের সংগঠন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখে ছিলেনচার্চ এবং রাষ্ট্রের পৃথক অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে মার্টিন বুসারের সাথে সহমত প্রকাশ করেন তিনি মনে করতেন চার্চ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে জেনেভাতে যে সংস্কারপন্থী দল ক্ষমতায় এসেছিল তারা ক্যালভিনকে শহরে ফিরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে ক্যালভিন রাজি হয়েছিলেন এই শর্তে তিনি অবাধে জেনেভাতে তার সংস্কারের প্রকল্প রূপায়ণ করতে পারবেন ১৫৪১ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে তিনি জেনেভাতে বিজয়ীর মত প্রত্যাবর্তন করেন 

 জেনেভাতে প্রত্যাবর্তনের কিছুদিনের মধ্যেই শহরের ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতায় Feclesiastical ordinances রচনা করেন তিনি চার্চের সংগঠন ও শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করেন ক্যালভিন চার্চের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের চারটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেন এক্ষেত্রে জুরিখের সঙ্গে তফাৎ ছিল এই যে জেনেভাতে ম্যাজিস্ট্রেটরা নয় চার্চই এই দরবার নিয়ন্ত্রণ করত চার্চের মন্ত্রী পদের সদস্য প্রার্থীদের বাছাই করার দায়িত্ব ছিল অধিষ্ঠিত মন্ত্রীদের একটি কমেটি নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা উপস্থাপন করা হত প্রথমে নগর পরিষদকে এবং পরবর্তী পর্যায়ে জনগণের কাছে চার্চের উপাসকরা ভেটো প্রয়োগ করতে পারত, নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারত না চার্চের সদস্যদের দুর্বলতা জনসম্মুখে নিন্দা করার উদ্দেশ্যে synod অথবা চার্চের পরিষদের বৈঠক ডাকা হয় ক্যালভিন চেয়েছিলেন যে যাজকদের হাতে চার্চ থেকে বহিষ্কারের একক দায়িত্ব দেওয়া হোক কিন্তু জেনেভার ম্যাজিস্ট্রেটরা ব্যাপক বিরোধিতা করে তা রোধ করেন ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে ক্যালভিন চার্চের পরিষদের এই সদস্য দলের হাতে বহিঃষ্কারের দায়িত্ব অনুমোদন করে। এইভাবে সবশেষে চার্চ সম্পর্কিত ব্যাপারে চার্চই সর্বময় কর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

 লুথারের মত ক্যালভিন রোমানচার্চ এর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে বেরিয়ে এসে জেনেভাযর চার্চের স্বাধীনতা দাবি করেছিলেন কিন্তু কোনোভাবেই তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা অনুমোদন করেননি। ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে ক্যালভিন ধর্মীয় বিরুদ্ধাচারণ চিহ্নিত করতে তাঁর মত প্রকাশ করেন সময় মাইকেল সারভেটাস জেনেভায় উপস্থিত হয়ে যিশুখ্রিস্টের ঐশ্বরিকতা অস্বীকার করেন সারভেটাসের মতাদর্শে ক্যালভিন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কারণ ক্যালভিন বলেন যিশুখ্রিস্টের দ্বৈত প্রকৃতি পার্থিব জগতে উপস্থিতির ফলে ঈশ্বরের অসীম যোগ সম্ভব হয়েছে। ক্যালভিন সারভেটাকে খ্রিস্টীয় উপাসনায় যোগদান করতে বাধা দেয় এবং পরিষদের সামনে তার নিন্দা করেন ক্যালভিনের শত্রুরা সারভেটাসের স্বপক্ষে এগিয়ে আসে এবং অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে জেনেভাতে ক্যালভিন ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায় জেনেভার চার্চের পরিষদ ক্যালভিনের অনুমোদন পেয়ে সারভেটাসকে তৎক্ষণাৎ পুড়িয়ে হত্যা করে। এর ফলে ক্যালভিন শুধু তার আধিপত্য প্রমাণ করেনি তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নবগঠিত বা ক্যালভিনপন্থী চার্চ তার সংস্কার বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত

 ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ক্যালভিন জেনেভাতে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ধর্মীয় উদ্বাস্তুরা জেনেভাতে আশ্রয় নেওয়ার ফলে একইসঙ্গে ক্যালভিন প্রতিষ্ঠার চার্চের বিরুদ্ধবাদীদের বিতাড়নের ফলে জেনেভা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল ১৫৫৯ সালে ক্যালভিন একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জেনেভার প্রভাব আর বৃদ্ধি পায় এই একাডেমি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যালভিনপন্থী মন্ত্রী সভায় যোগদানের জন্য যোগ্যপ্রার্থী তৈরি করা ক্যালভিনের মৃত্যুর সময় একাডেমীর নিম্ন বিভাগে ১২ জন ছাত্র ছিল এবং স্নাকত্ব স্তরে ৩০০ জন ছাত্রের মধ্যে অনেকেই ছিল বিদেশি একাডেমি সমগ্র ইউরোপে প্রসৃদ্ধি লাভ করেছিল। এই একাডেমি প্রমাণ করেছিল কিভাবে রেনেসাঁ প্রবর্তিত ধ্রুপদী চর্চার পুনরুদ্ধার সংস্কারলব্ধ ধর্মবিশ্বাসের সহায়ক হতে পারে

 ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অন্যান্য সংস্কারকদের মতই ক্যালভিনকে হয়তো নিজের অজান্তেই স্ববিরোধিতা স্পর্শ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে সময় আর ঘটনার উথাল পাথাল সে সময় এত বেশি ছিল যে সংস্কার আন্দোলনের অনেক নেতাই অনেক ক্ষেত্রে স্ববিরোধী হয়ে পড়েছিলেন ক্যালভিন ও তার ছোঁয়া থেকে বাদ পড়েন নি যে ক্যালভিন রাজার স্বপক্ষে নিষ্ক্রিয় আনুগত্যের সোপান তুলে ধরেছিলেন তিনি দেশকালের ভিন্নতায় বিপরীত পরিস্থিতিতে ঠিক উল্টো বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের ক্যাথলিক রাজার অত্যাচারে যখন সেখানকার প্রোটেস্ট্যান্টরা বিতাড়িত হয়েছিল যাদের মধ্যে তিনি নিজেও ছিলেন, তখনই তার ধর্মপ্রাণ রক্ষণশীল মন প্রোটেস্ট্যান্টদের রক্ষার তাগিদে বিপরীত কথা বলতে বিলম্ব করেননি ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজকীয় কর্তৃত্ব প্রোটেস্ট্যান্টদের ওপর মারাত্মক অত্যাচার শুরু করেছে তখনই ক্যালভিনপন্থীরা ক্যালভিনের অপ্রতিরোধ্য তত্ত্বের ব্যতিক্রমী কথাগুলিকে সম্বল করেই রডিক্যাল হয়ে উঠেছে

পরিশেষে বলতে পারি যে ক্যালভিনের এই রেডিক্যাল ভাবধারা ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইনস্টিটিউট এর ল্যাটিন অনুবাদ প্রকাশ করেন পরের বছর বিষয়ে ফরাসি পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন ক্যালভিন প্রমাণ করেছিলেন যে ত্রুটিপূর্ণ ধর্মচর্চাকে আদর্শ ধর্মচর্চায় রূপান্তরিত করাই ছিল তার লক্ষ্য চার্চের সংগঠন সম্পর্কে ক্যালভিন এত নিখুতভাবে রচনা করেছিলেন যে তা শুধু জেনেভাতে সফল হয়নি বিশ্বের অন্যত্র সম্ভব হয়েছিল ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি যখন মারা যান তখন তাঁর বাণী ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল

 

 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...