সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রাক আধুনিক যুগে চীনের সামাজিক কাঠামো

 


 

 প্রাক্‌ আধুনিক চীনের সমাজের প্রকৃতি ঐতিহাসিক ও সমাজবিদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কিত বিষয় মার্কসবাদী ঐতিহাসিকরা যেমন- jean chesnaux ( জাঁ শেনো), I. Epstein, z. Bozan, Hu Hua চিং বা মাঞ্চু সমাজকে সামন্ততান্ত্রিক ও আমলাতান্ত্রিক ব্যাখ্যা করেছেন পাশ্চাত্য ঐতিহাসিক Fairbank, I. Cy. Hsu প্রমূখ সম্ভ্রান্ত Gentry বা পন্ডিত ভদ্রলোককে সামাজিক কাঠামোতে প্রাধান্য দিয়েছেন কেননা তাদের মতে Gentry বা পন্ডিত ভদ্রলোকরা ছিলেন চীনের শাসক শ্রেণী

 প্রাক্‌ আধুনিক চীনের সমাজ ছিল চিরাচরিত প্রথাভিত্তিক এবং কনফুসীয় নীতি ভিত্তিক চিনা সমাজ ছিল বহুস্তর বিন্যস্ত সমাজ ও তা ছিল প্রধানত গ্রাম্য কারণ জনসংখ্যা ৮০% ছিল কৃষিজীবী অবশিষ্ট ২০% বাস করত শহর অঞ্চলে পেশাগত বিভাজনের ভিত্তিতে এদের কয়েকটি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে যথা- কনফুসীয় শাস্ত্রে পন্ডিত ব্যক্তি (Scholarliterati), রাজকর্মচারী বা ভদ্রলোক শ্রেণী (Gentry), অনুপস্থিত জমিদার (Absentee Landlord), কারিগর, বণিক ও সামরিক শ্রেণি

 সামাজিক কাঠামোর সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন কনফুসীয় শাস্ত্রে পণ্ডিত, বুদ্ধিজীবী প্রমূখ এদের মধ্য থেকেই প্রধানত রাজকর্মচারীদের নিযুক্ত করা হত। প্রাক আধুনিক চীনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল চিনা জাতির রক্ষণশীলতা এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতি অধিক আস্থা সমাজের ভাবাদর্শগত ভিত্তি ছিল কনফুসীয় নীতি নির্ভর প্রাচীন বিদ্যা হান (Han) বংশীয় শাসনকাল থেকে (২০৬ BC- ২২০ AD) চাকরির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা প্রথা শুরু হয়েছিল Tang শাসনকালে (৬১৮ - ৯০৭ AD) পরীক্ষাপদ্ধতি শহর ও জেলা স্তরে সু প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব থাকলেও শিক্ষকদের স্বল্প বেতনে জীবন নির্বাহ করতে হত

 সমাজে স্তর বিন্যস্ত হলেও সামাজিক গতিশীলতা (Social Mobility) ছিলতার প্রমান হল জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণীভূক্ত মানুষ এমনকি দরিদ্র ব্যক্তি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাজকর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হতে পারতেন রাজকর্মচারীরা সামাজিক মর্যাদার অধিকারী ছিলেন কেননা চীনা শাসনতন্ত্রে সরকারি কর্মচারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল

 প্রাক্‌ আধুনিক চীনের সমাজে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণি ছিল gentry Gentry শ্রেণীভূক্ত ব্যক্তিরা রাজনীতি ও প্রশাসনের অংশগ্রহণ করতেন তারা জ্ঞান, ক্ষমতা ও জমি এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এর অধিকারী ছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ে কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই একজন ভদ্রলোক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারত কনফুসীয় ধর্মস্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যায়তনগুলোর তত্ত্বাবধান এবং পারস্পরিক বিবাদের মধ্যস্থতা, সে নির্মাণ, বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি কাজের সঙ্গে gentry রা নিযুক্ত ছিলেন। Gentry রা কিছু আইনগত সুযোগ সুবিধার অধিকারী ছিলেন এবং স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আমলারা (Mandarin) শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্যে gentry দের উপর নির্ভরশীল ছিলেন Gentry রা ছিলেন সম্ভ্রান্ত এবং সুবিধাভোগী শ্রেণী শহরের অনুপস্থিত জমিদারেরা ছিলেন প্রধানত ভদ্রলোক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত চৈনিক সমাজ জীবনের উপর ভদ্রলোকের শ্রেণীর প্রভাব এত গভীর ছিল যে তৎকালীন চীনা সমাজকে কিছু সমাজবিদ ও ঐতিহাসিকরা Gentry State বা ভদ্রলোকীয় রাস্ট্র আখ্যা দিয়েছেন 

এই ভদ্রলোক শ্রেণীর অস্তিত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায় যেমন I. Cy. Hsu, Clyde – Beers, Jean Chesnaux প্রমূখ ঐতিহাসিক Gentry কে শাসকশ্রেণী হিসাবে বর্ণনা করেছেন কিন্তু ঐতিহাসিক H. M. Vinacke প্রাক আধুনিক চীনের সামাজিক কাঠামোয় আলোচনায় Gentry শব্দটাই ব্যবহার করেননি তাঁর মতে সমাজের সর্বস্তরে ছিল শিক্ষিত পন্ডিত এবং দ্বিতীয় স্তরে ছিল কৃষক Gentry দের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার সমন্বয়কে সমাজবিজ্ঞানী Joseph Needham “আমলাতান্ত্রিক সামন্ততন্ত্র বলে বর্ণনা করেছেন  Clyde - Beers এর সঙ্গে একমত হয়ে বলা যায় যে, “Through their control of the land and through their monopoly on learning gentry speed the patterns of social, economic and political life”. ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে চীনে ভদ্রলোকরা সংখ্যায় ছিল 11 লক্ষ এরমধ্যে ২৭০০০ ভদ্রলোক ছিলেন রাজকর্মচারী। অর্থাৎ অধিকাংশ Gentry বিভিন্ন আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন

  শুধুমাত্র প্রাক-আধুনিক নয় কৃষিপ্রধান দেশ চীন বিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সামাজিক কাঠামোয় একটা গুরুত্বপূর্ণ স্তর ছিল কৃষক শ্রেণী কনফুসীয় ঐতিহ্য্য অনুযায়ী চিনা অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি অর্থনীতি কৃষি উৎপাদনে চীন ছিল একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ কৃষকদের গ্রামজীবন ছিল মন্দির কেন্দ্রিক কারণ মন্দিরকে ঘিরেই তাদের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন অতিবাহিত হত। অর্থ এবং উৎপন্ন ফসলের অংশের মাধ্যমে তাদের জমিদারদের পাওনা মিটাতে হত। যার কারণে কৃষকদের দৈনন্দিন জীবন ছিল দুর্বিষহ জমিদারদের বাধ্যতামূলক শ্রমদানের মাধ্যমে কৃষকরা বেগার খাটতজমিদাররা অধিকাংশই ছিলেন Gentry শ্রেণীভূক্ত এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন এই ভদ্রলোকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত

 প্রাক্‌ আধুনিক সমাজে কনফুসীয় রীতি অনুযায়ী কারিগররা ছিলেন তৃতীয় এবং চতুর্থ স্তরের ছিলেন বণিকরা শহরবাসী কারিগররা অধিকাংশই ছিলেন গিল্ডের সদস্য এবং বিভিন্ন হস্ত শিল্পের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। গ্রামাঞ্চলে যখন চাষের কাজ বন্ধ থাকত তখন গ্রামেও কারিগরেরা নানা ধরনের হস্তশিল্পে নিযুক্ত থাকতেন অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক হওয়ায় এবং কনফুসীয় রীতিতে বাণিজ্যকে নিরুৎসাহিত করায় বণিকদের অবস্থান ছিল সমাজের নিম্নতম স্থানেঅষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের যথেষ্ট সম্প্রসারণ ঘটায় অনেক বনিকই সমৃদ্ধি অর্জন করেন। তবে একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য যে সমৃদ্ধশালী বণিকেরা এসময় অনেকেই কনফুসীয় উপাধি বা ডিগ্রী কিনে সামাজিক মর্যাদা লাভ করতে সচেষ্ট হয়েছিল সামাজিক কাঠামোর সর্বনিম্ন স্তর ছিল সামরিক বাহিনী

 প্রাক্‌ আধুনিক চীনের সমাজ ছিল সামন্ততান্ত্রিক ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি ছিল পরিবার এবং সমাজের আদর্শ ছিল বৃহৎ যৌথ পরিবার গঠন পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পিতা ছিলেন পরিবারের কর্তা এবং সমাজে পূর্ব পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নীতি প্রচলিত থাকায় পুত্র সন্তানের জন্মকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত ঐতিহ্য মন্ডিত চৈনিক গ্রাম্যসমাজে কিছু বিশেষ পরিবারকে নিয়ে গঠিত গোষ্ঠী বা গোত্রের যথেষ্ট প্রাধান্য ছিল নী সদস্যরা গোষ্ঠীর দরিদ্র সদস্যদের আর্থিক সাহায্য দিতেন এবং এই কারণে অনেক সময় অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে উদ্ভূত শ্রেণিদ্বন্দ্ব গোষ্ঠীগত সংহতির দ্বারা প্রশমিত করা সম্ভব হত।

 এইভাবে প্রাক্‌ আধুনিক চীনের সামাজিক কাঠামো বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত সমাজকে সুবিধাভোগী ও সুবিধাহীন এই দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। বুদ্ধিজীবী, gentry ও রাজকর্মচারীরা ছিলেন সুবিধাভোগী শ্রেণী এবং কৃষক, কারিগর ও বণিকরা সুবিধাহীন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল দ্বিতীয়তঃ যদিও সমাজব্যবস্থা সামন্ততান্ত্রিক ছিল, কিন্তু তা ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে একটা বড় তফাৎ পরিলক্ষিত হয়েছিল ইউরোপে অভিজাতদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতিফলন ছিল মাত্র কিন্তু চীনে ভদ্রলোক রাজকর্মচারী পদে নিযুক্ত হয়ে আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল শুধু তাই নয়, এই শ্রেণী কনফুসীয় সমর্থিত প্রাচীন বিদ্যা অনুশীলন করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবং ডিগ্রি অর্জন করে সমাজে সম্ভ্রান্ত অধিকারী হয়েছিল এইভাবে ভদ্রলোক শ্রেণি চীনের প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষায় সহায়ক হয়েছিলেন তাই নয়, চীনের চিরাচরিত জীবন ধারার প্রতি এই শ্রেণীর তীব্র আকর্ষণের প্রতিক্রিয়ার স্বরূপই চীনে আধুনিকতার প্রবর্তনে বিলম্ব ঘটিয়েছিল

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...