সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পঞ্চদশ শতকের শেষভাগে ইউরোপের মানচিত্র নির্মাণের বিকাশ

 

সমুদ্র যাত্রা শুরুর প্রথম দিক থেকেই সমুদ্রপথ জানবার প্রচেষ্টায় যেমন ক্রমশ কম্পাস, অ্যাস্ট্রোল্যাব প্রভৃতি আবিষ্কৃত হতে শুরু করেছিল, তেমনি ইউরোপে মানচিত্র রচনা পর্যায়টি ও শুরু হয়েছিল নতুন করে মানচিত্র নির্মাণের ইতিহাস অতি প্রাচীন পর্তুগাল প্রথম এবিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে ক্রুসেডেরও আগে ইতালির নাবিকরা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে যে অভিযান করেছিল তাতে উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে পরিচিত হয়ে কয়েকটি মানচিত্র তৈরি করে

 পর্তুগালের রাজা প্রিন্স হেনরী দ্য ন্যাভিগেটর প্রথম নৌবিদ্যা শেখানোর যে স্কুল খুলেছিলেন ১৪১৬ খ্রিস্টাব্দে সেখানে মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল আরবিদের কাছ থেকে মানচিত্র রচনা সংক্রান্ত কাজ ইউরো গ্রহণ করে প্রিন্স হেনরী দ্য ন্যাভিগেটর ছিলেন ইউরোপে মানচিত্র নির্মানের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। আরবিদের কাছ থেকে ইহুদিরা এবং ইহুদিদের কাছ থেকে খ্রিস্টানরা মানচিত্র নির্মাণে উৎসাহ দেখিয়েছিল

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কনস্ট্যান্টিনোপলের পুরনো রাজ প্রাসাদের একটি কক্ষ থেকে চামড়ার উপর আঁকা একটি পুরানো মানচিত্র পাওয়া যায় ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কী নৌবাহিনী একজন অ্যাডমিরাল পীরি ইবন হাজী মহম্মদ এই মানচিত্রটি এঁকেছিলেন ষোড়শ শতাব্দীর অন্যতম মানচিত্র হিসেবে পীরি ইবনের আমেরিকা অঙ্কিত মানচিত্রটি বিখ্যাত ছিল রো লক্ষণীয় যে তাঁর মানচিত্রে নিখুঁতভাবে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকাকে পরস্পরের নির্ভুল আপেক্ষিক দ্রাঘিমায় অঙ্কন করা হয়েছেতিনি মানচিত্রের ভিতর লিখে গেছেন কুড়িখানা সামুদ্রিক চার্ট ও আটটি মানচিত্রে সাহায্য গ্রহণ করেছিল। রাইসের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ থেকে মানচিত্র রচনা ইতিহাস কত পুরানো তা বোঝা যায় কারণ তিনি পুরানো গ্রিক মানচিত্র ও চারজন পর্তুগীজ নাবিকের প্রস্তুত করা মানচিত্রের সাহায্য নিয়েছিলেন রাইসের মানচিত্র নিয়ে বিতর্ক উঠলেও একথা বলা যায় যে তার মানচিত্র নির্ভুল এবং তার আগেও দীর্ঘদিন ধরে বহু মানচিত্র ও চার্ট তৈরি হয়েছিল বহু অনামা নাবিকের দ্বারা এইসব মানচিত্র থেকে ভূমধ্যসাগর, মরুসাগর অঞ্চল, উত্তর দক্ষিণ মেরুর সীমানা প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়

 প্রাচীন মিশরীয় খসড়া মানচিত্র ঋকবেদে ৩১টি বড় নদী ও বিভিন্ন স্থানের মানচিত্র এবং ইন্ডিয়ানদের তৈরি অ্যাজটেক সভ্যতার মানচিত্র পাওয়া গেছেইউরোপীয়দের আঁকা মানচিত্রের পূর্বসূরী ছিলেন গ্রিক মানচিত্রবিদরা। টলেমি, প্লীনি, স্ট্রাবো, অ্যানিক্সোম্যান্ডার প্রমূখ ছিল উল্লেখযোগ্য। অ্যানিক্সোম্যান্ডার সর্বপ্রথম সমগ্র পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন অধ্যাপক আশীষ সরকার আলেকজান্দ্রিয়া ও সিয়েন নগরে কর্কট সংক্রান্তিতে সূর্যরশ্মি আপতন কোণের তারতম্য থেকে কিভাবে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় বিষম ব্যবধানে অঙ্কিত সাতটি ঋতু অক্ষরেখা ও সাতটি ঋতু মধ্যরেখাসহ পৃথিবীর কুমেনের মানচিত্র দেখিয়েছেনটলেমি তাঁর জিওগ্রাফিক গ্রন্থে একটি পৃথিবীর মানচিত্র ২৬টি আঞ্চলিক মানচিত্র এবং ৬৭টি স্থানীয় মানচিত্র অঙ্কন করেছেন অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ চিহ্নিত টলেমির মানচিত্র ইউরোপে সাড়া ফেলেছিল

 ১৪৮০ থেকে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরোপের নাবিকরা ও নৌবিদরা সারা পৃথিবীর মানচিত্র তৈরি করে ফেলেছিল অতীত ইতিহাস থেকে দেখা যায় কল্পনার আশ্রয় থেকে অনুমান নির্ভর যে মানচিত্র অঙ্কনের সূচনা হয়েছিল ইউরোপে তা প্রথম পুরাণের কল্পনাকে ভেঙে দেয় অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ অঙ্কনের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হতেই মানচিত্র তৈরির নতুন জগৎ আবিষ্কৃত হয়েছিল, পুরাকালের নানা অবাস্তব ধারণার অবসান ঘটিয়ে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...