সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আত্মশক্তি আন্দোলন

 


 তুংচি পুনরুদ্ধারের সীমাবদ্ধতা সত্বেও চীনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টায় তারা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন রক্ষণশীল তুং চি সরকার উপলব্ধি করেছিল যে ভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বৈদেশিক আক্রমণ থেকে চীনের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সামরিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয় আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে চীনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আত্মশক্তি আন্দোলনের সূচনা হয় তুংচি পুনরুদ্ধারের সময় থেকে উনিশ শতকের শেষ দিক পর্যন্ত আত্মশক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সংস্কার প্রবর্তন, আত্মশক্তি আন্দোলন নামে খ্যাত এই আত্মশক্তি আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সীমিত আধুনিকীকরণ

 আফিম যুদ্ধে বিদেশীদের কাছে পরাস্ত হওয়ায় রাজকুমার kung বিদেশীদের শক্তি ও অনুপ্রবেশের গুরুত্ব উপলব্ধি করে নতুন কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তৎপর হন তাই পাশ্চাত্য দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে Tsungli Yamen নামক বৈদেশিক দপ্তরের সৃষ্টি করা হয় ত্ত্বগতভাবে Tsungli Yanen বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করতে পারত না, গৃহীত নীতি কার্যকর করতে পারতTsungli Yamen পাঁচটি বৈদেশিক শক্তির দপ্তর নিয়ে সংগঠিত হয়েছিল Tsungli Yamen এর সঙ্গে অপর দুটি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ছিল,যথা- শুল্ক দপ্তর এবং বৈদেশিক ভাষা শিক্ষার দপ্তর ঐতিহাসিক হাস (Hus) বলেছেন চীনে পাশ্চাত্য শিক্ষার সূচনা ও সম্প্রসারণে Tung wen Kuan গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল

 আত্মশক্তি আন্দোলনের প্রথম পর্বে চীনে আধুনিকীকরণের ব্যাপারে Tsungli Yaman গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এই পর্বে আধুনিক অস্ত্র নির্মাণের জন্য চারটি নতুন কারখানা স্থাপন করা হয় আত্মশক্তি আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে প্রযুক্তিবিদ্যা ও কূটনীতিতে চীনাদের পারদর্শী করার উদ্দেশ্যে চীনে বেশকিছু বিদ্যালয় ও অনুবাদ কেন্দ্র খোলা হয়েছিল এই সময় পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্র নির্মাণ ও জাহাজ নির্মাণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা কেননা প্রথমদিকে আত্মশক্তির মূল লক্ষ্য ছিল সামরিক শিল্পের আধুনিকীকরণ কিন্তু এটা লক্ষণীয় যে এই ব্যাপারে যেসব বিদেশীদের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল তাঁরা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না দ্বিতীয়তঃ সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক শিল্পগুলোতে প্রাদেশিক নেতাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটেছিল অর্থাৎ এই সামরিক শিল্পগুলোতে আঞ্চলিকতা ও সামন্ততান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকট হয়ে ওঠে

 আত্মশক্তি আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় (১৮৭২-৮৫) জাহাজ নির্মাণ, রেলপথ, খনি, টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ইত্যাদি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এই সময় যৌথ উদ্যোগে অর্থাৎ সরকারি তত্ত্বাবধান এবং বণিকদের ব্যক্তিগত মালিকানার ভিত্তিতে বেশকিছু কারখানা গড়ে উঠেছিল বণিকদের ব্যক্তি পুঁজি এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা কারখানার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল China merchants steam, Navigation company, Shanghai cotton cloth mills, Imperial Telegraph, Administration ইত্যাদি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এই দ্বিতীয় পর্যায়ে চীনকে অর্থ ও সামরিক শক্তির দিক থেকে শক্তিশালী করতে চেয়ে ছিলেন

 আত্মশক্তি আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায় (১৮৮৫-৯৫ সামরিক নৌশিল্পের সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার সাথে সাথে অন্য মাঝারি শিল্প গড়ে তুলে দেশকে সম্পদশালী করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল এই সময় সরকারি ও বেসরকারি বণিকদের যৌথ উদ্যোগগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল kweichow Iron works এবং Hupeh Textile company এই কারখানায় সরকার বেসরকারি পুঁজিকে স্বাগত জানিয়েছিল কিন্তু শিল্পে বেসরকারি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা মেনে নেয়নি সুতিবস্ত্র শিল্প এবং তুলোবোনা শিল্প এই পথে গুরুত্ব লাভ করেছিল এই তৃতীয় পর্যায়ে আত্মশক্তি বৃদ্ধির জন্য গৃহীত পরিকল্পনার কয়েকটি হল পিকিং এ Board of Admirality উদ্বোধন, Tientsin এ একটি সামরিক শিক্ষা কেন্দ্রের প্রবর্তন, ক্যান্টনে টাকশাল স্থাপন, কয়লা খনি, কাগজ, লৌহ কারখানা স্থাপন ইত্যাদি

 আত্মশক্তি আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা

 ১৮৬১-৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চীনের আত্মশক্তি বৃদ্ধির জন্য গৃহীত ব্যবস্থার মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয় আত্মশক্তি আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল চীনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, বিদেশী অনুপ্রবেশ এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ মোকাবিলা করা তাই শিল্পোদ্যোগ প্রধানত আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাণ, জাহাজ ও যন্ত্রপাতি নির্মাণ, কারখানা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু চীনে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত যে সমস্ত রণতরী,ন্দু, কামান নির্মাণ করা হয়েছিল তা পাশ্চাত্যের তুলনায় নিকৃষ্ট মানের ছিল ঐতিহাসিক Jean Chesneaux বলেছেন বিদেশীদের থেকে চীনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পরিবর্তে চীন সামরিক শিল্পে বিদেশীদের উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল যেমন চীনা কর্তৃপক্ষ যুদ্ধ জাহাজগুলো বিদেশ থেকে আনিয়েছিলেন চীনের যন্ত্রবিদ্যা অনগ্রসরতার জন্যই মাঞ্চু সরকার বিদেশ থেকে যুদ্ধের সরঞ্জাম আমদানি করতে বাধ্য হয়েছিল

 আধুনিক ভাবে সামরিক বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কনফুসীয় নীতি ভিত্তিক থেকে গিয়েছিল সামরিক শিল্পগুলোর মধ্যে জাতীয় স্তরে কোন সমন্বয় ছিল না বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতা নিজ নিজ উদ্যোগে শিল্পগুলো গড়ে তুলেছিলেন বলে আঞ্চলিক ও সামন্ততান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকট হয়ে উঠেছিল এর ফলে জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে আঞ্চলিক স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছিল এর পরিণাম স্বরূপ রক্ষণশীল সমাজের আত্মশক্তি বৃদ্ধির আন্দোলন সাময়িক ভাবে সাফল্য পেলেও সম্পূর্ণ ভাবে সফল হতে পারেনি ১৮৮৪-৮৫ খ্রিস্টাব্দে চীন ফরাসি যুদ্ধের চীনের শোচনীয় পরাজয় এবং ১৮৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দে চীন জাপান যুদ্ধে চীনের বিপর্যয় বিশেষত সামরিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা প্রমাণ করে আত্মশক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতৃত্বের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয় আন্দোলনের সীমিত উদ্দেশ্যের মধ্যে যথা চীনকে বিদেশী আক্রমণ থেকে রক্ষা করা এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করা কিন্তু চীনকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা কোন বৃহত্তর পরিকল্পনা গৃহীত হয়নিযেমন- অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে চীনের আধুনিকীকরণের কোন প্রচেষ্টা করা হয়নি

 আত্মশক্তি আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা একটি অন্যতম কারণ ছিল স্ব-বিরোধীতা একদিকে আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ কনফুসীয় মতাদর্শ অনুযায়ী সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে শাসন পরিচালনা করতেন অন্যদিকে আধুনিক শিল্প ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে চেয়েছিলেন অর্থাৎ রক্ষণশীলতা এবং আধুনিকতা এই দুই ধারায় তাঁরা চলতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু এই স্ব-বিরোধিতা আত্মশক্তি আন্দোলনের দুর্বলতাকেই সুস্পষ্ট করেছিল এর পরিণাম স্বরূপ স্বাধীন বুর্জোয়া শ্রেণীর পরিবর্তে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্ততন্ত্রের পর নির্ভরশীল একটি বুর্জোয়া শ্রেণি গড়ে উঠেছিল

 আত্মশক্তি আন্দোলনের ব্যর্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল পুঁজির অভাব পুঁজির অভাব শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করেছিল বেসরকারি পুঁজির পরিমাণ ছিল সীমিত এবং সরকারি পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়েছিল কিন্তু সরকার কৃষি ক্ষেত্রে ও বাণিজ্যক্ষেত্রে কর বৃদ্ধি করে পুঁজি সংগ্রহ করতে তৎপর হলেও শিল্পের বিনিয়োগের হার বৃদ্ধি পায়নি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এই সত্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে কৃষি ও বাণিজ্যকে উপেক্ষা করে শিল্পায়ন সম্ভব নয় শাসকশ্রেণীর দুর্নীতি ও পুঁজির অভাবকে তীব্রতর করেছিল আত্মশক্তি আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তি বিধবা সম্রাজ্ঞী Tzu-His এবং Li-Hung Chang ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত আত্মশক্তি আন্দোলনকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অভাব আন্দোলনকে দুর্বল করেছিল এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা Li hung Chang এর নেতৃত্বে নির্মিত অস্ত্রাগার গুলোর উপর তিনি নিজেও কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। আঞ্চলিক রাজকর্মচারী দাও একই নীতি গ্রহণ করায় জাতীয় স্তরে কোন সমন্বয় সম্ভব হয়নি অর্থাৎ আত্মশক্তি আন্দোলন জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার পরিবর্তে আঞ্চলিক নেতাদের স্বার্থ রক্ষা করেছিল

উপনিবেশিকতা বাদ ও সাম্রাজ্যবাদ অনুপ্রবেশ ও চীনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদেশিদের উপস্থিতি আত্মশক্তি বৃদ্ধির পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল তাই নয়, পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছিল সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি ও ক্ষতিপূরণ দানের ফলে আর্থিক সংকট দেখা দেয় শিল্পায়ন ও আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়

আত্মশক্তি আন্দোলনের ফলাফল

 আত্মশক্তি আন্দোলনের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই আন্দোলনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ফলাফল উল্লেখ করা যায় প্রথমত তুং চি পুনরুদ্ধার এবং আত্মশক্তি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জেন্ট্রি শ্রেণীর ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটেছিল দ্বিতীয়তঃ এই আন্দোলনের ফলে চীনে বেশ কিছু শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছিল এইসব কারখানায় গ্রাম থেকে কৃষকরা এসে শ্রমিক হিসাবে যোগ দেওয়ায় শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং একটি আধুনিক শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল

আত্মশক্তি আন্দোলনে শিল্পায়নকে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে চীনের শহরে এক নতুন পেশাদারী শ্রেণী বা Entrepreneur শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার, ম্যানেজার প্রমূখ নিয়ে গড়ে ওঠা এই শ্রেণী বিদেশ থেকে প্রযুক্তিবিদ্যায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল শিল্পায়নের আরো একটি প্রত্যক্ষ পরিণাম ছিল নগরায়ন যেহেতু আগ্নেয়াস্ত্র, যন্ত্রপাতি, সুতিবস্ত্র, জাহাজ নির্মাণ ইত্যাদি কারখানাগুলো সমুদ্র ও নদীর তীরবর্তী শহরে গড়ে উঠেছিল তাই এই শিল্পায়নকে কেন্দ্র করে কৃষি প্রধান দেশ চীনে নগরায়নের প্রক্রিয়াটিও ত্বরান্বিত হয়েছিল সাংহাই, নানকিং, ফোচাও, টিয়েনসিং, হংকং, ইত্যাদি আধুনিক শহরগুলি গড়ে উঠেছিল

 সাংস্কৃতিক দিক থেকে এই আন্দোলনের গুরুত্ব হল এই যে, আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার সূচনা চীনে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই হয়েছিল অর্থাৎ এই সময় চীনে বুদ্ধিজীবীরা পাশ্চাত্য জ্ঞানের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিষয়ক গ্রন্থ অনুবাদ ও প্রকাশকে প্রাধান্য দিয়েছে। এর ফলে চীনের বৌদ্ধিক জগতের দিগন্ত সম্প্রসারিত হয়েছিল তবে এর প্রভাব শুধুমাত্র সমৃদ্ধ শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল

 এটা ঠিক যে আত্মশক্তি আন্দোলনের ফলে চীনের আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার প্রবর্তন হয়েছিল কিন্তু সামরিক ক্ষেত্রে আধুনিকতার অগ্রগতি সম্ভব হয়নি ১৮৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানের কাছে চীনের শোচনীয় পরাজয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশিত হয় তাই নয় আত্মশক্তি আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা ও উদ্‌ঘাটিত হয়েছিল ঠিক এইভাবে যদিও শিল্পায়নের ফলে চীনে একটি আধুনিক পেশাজীবী শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির যৌথ প্রভাবে এই নবসৃষ্ট শ্রেণি একটি স্বাধীনচেতা মধ্যবিত্ত শ্রেণীরূপে আত্মপ্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল অর্থাৎ আত্মশক্তি আন্দোলন চীনে কোন কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটিয়ে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হয়েছিল সাময়িক কিছু শিল্প ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়ে স্থিতাবস্থাকে সুদৃঢ় করেছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...