সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভৌগোলিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে পর্তুগালের ভূমিকা


 

১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিনোপলের পতনের সময় থেকেই ইসলাম ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল খুব দ্রুত তারা মিশর এবং সিরিয়া দখল করে নেয়। এভাবে ক্রমশ মধ্য ইউরোপের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে মধ্যকালীন ইউরোপের রাজনীতিতে খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে সামরিক ও ধর্মীয় শত্রুতা সবসময়ই এক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছিল পঞ্চদশ শতকের ইউরোপের বিবর্তনের ইতিহাসে পর্তুগিজদের সামুদ্রিক অভিযান ও নানা দেশ আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় ইউরোপের সমুদ্র যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রথমে পর্তুগিজ নাবিকদের জাহাজের পালের হাওয়ায় পর্তুগিজরা ছিল ইউরোপের পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত একটি দেশ

পর্তুগীজদের সামুদ্রিক অভিযানকে উৎসাহিত করেছিল কতগুলি বিষয়, যথা সমকালীন পর্তুগিজ রাজাদের পোষকতা, মানচিত্র অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার এবং সমুদ্র অভিযানের অন্যান্য যন্ত্রপাতি আবিষ্কার, রাজনৈতিক স্থিরতা, নৌবিদ্যায় পারদর্শীতা, সোনা, রুপা, মূল্যবান হাতির দাঁত, ক্রীতদাস প্রভৃতির জন্য পা বাড়িয়েছিল অন্যদেশের অনুসন্ধানে

 পর্তুগালের ভৌগলিক সম্প্রসারণের ইতিহাসে যার নাম সর্বাজ্ঞে উল্লেখ করতেই হয় তিনি হলেন রাজা প্রথম জনের কনিষ্ঠপুত্র রাজকুমার হেনরী (১৩৯৪-১৪৬০) প্রিন্স হেনরীকে বলা হয় হেনরী দ্য ন্যাভিগেটর। ইংরেজদের নিকট তিনি একজন নাবিক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন ১৪১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সমুদ্রবিদ্যা ও নৌবিদ্যা শিক্ষা দেবার জন্য স্যাগরেশ এ একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ১৪১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি পর্তুগিজ নাবিকদের ম্যাদেরিয়া দ্বীপপুঞ্জে উপনিবেশ স্থাপনের আদেশ দেন  ১৪১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি অ্যালভার্গের গভর্নর পদে নিযুক্ত হন এবং স্যাগরেশ উপত্যকায় তার প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন

হেনরীর ভৌগলিক অনুসন্ধানের অঙ্গীকার খ্রিস্টীয় সভ্যতাকে মুসলমান দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা থেকেই এসেছিল তাঁর জীবনের শেষ দিকে তাঁর উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন ভেনিশীয় নাবিক আলভাইস দ্য কাদামোস্তো। যিনি আফ্রিকার উন্মোচনে বিশেষ তৎপরতা দেখিয়েছিলেন পর্তুগিজদের ভৌগলিক অনুসন্ধান কেবলমাত্র হেনরীর ইচ্ছা থেকেই আসেনি। আফ্রিকার হাতির দাঁত, সোনা এবং ক্রীতদাসই ছিল প্রধান আকর্ষণ তবে একথা স্বীকার্য যে হেনরীর অর্থ লোকবল ও আধ্যাত্বিক বিশ্বাসের মাধ্যমে অভিযানে উৎসাহ দিয়েছিলেন তিনি দক্ষিণ সমুদ্রে প্রায় পাঁচশত মাইল অভিযান চালান ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিকরা Cape Bojador এ পৌঁছে আবিষ্কার করেন যে আফ্রিকার উপকূল দক্ষিণ পশ্চিম দিকে বিস্তৃত ১৪৩৬ খ্রিস্টাব্দে Cape Blance এবং ১৪৪৪ খ্রিস্টাব্দে সেনেগাল নদীর নিকট ও ১৪৪৫ খ্রিস্টাব্দে Cape Nardi দখল করেছিল এর ফলে পর্তুগিজ রাজা হেনরীর পশ্চিম আফ্রিকার ব্যবসায়ে একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় প্রিন্স হেনরী দ্য ন্যাভিগেটরের মৃত্যুর (১৪৬০) পর পর্তুগালের সামুদ্রিক অভিযানের কিছুটা ভাটা পড়ে ছিল

 হেনরীর মৃত্যুর পর পর্তুগিজদের সামুদ্রিক অভিযানে কিছুটা স্থিতি এসেছিল এরপর রাজা পঞ্চম আলফোন্সো সমুদ্র যাত্রা আবিষ্কার ও অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি কিছুকালের জন্য বণিক শ্রেণি ও পুঁজিপতিদের কাছে আবিষ্কৃত গন্তব্য পথের পাট্টা দিয়েছিলেন এরপর থেকে পর্তুগিজ রাজ সরাসরি কোন অভিযানে অংশগ্রহণ করেননি, ভাড়াটে রাজ্যের মত ব্যবসা বাণিজ্য ও অভিযানের অধিকার পাট্টার মাধ্যমে বিলি ব্যবস্থা করেন। কারণ অর্থের স্বল্পতা এবং ক্যাসিল প্রদেশের সঙ্গে যুদ্ধ বিগ্রহ হেনরীর পূর্ব নির্দেশানুযায়ী পর্তুগিজ নাবিকরা Sierra, Zeone তে পৌঁছে ছিল ইতিমধ্যে ১৪৬৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজশক্তি ও ব্যক্তিগত পুঁজির মধ্যে একটা সমঝোতা আসে  ১৪৭১ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিকরা ঘানার নিকট পৌঁছায় এবং আইভরি কোস্ট দখল করেন পশ্চিমে মূল্যবান মরিচ জাতীয় মলার সমাহার ছিল ও মোরাটানিয়া উপকূলে ছিল প্রচুর শীলমাছ

 হেনরীর পর যার পৃষ্ঠপোষকতায় পর্তুগিজ নাবিকরা সামুদ্রিক অভিযানে উৎসাহ-উদ্দীপনা লাভ করে তিনি হলেন রাজা দ্বিতীয় জন তিনি ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ রাজা হিসেবে সিংহাসনে আরোহন করে আবিষ্কারে উৎসাহ দেন ১৪৮২ খ্রিস্টাব্দে দিয়োগোক্যাম (Diego Cao) দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযান চালান এবং ১৪৮৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কঙ্গো নদীর মোহনায় পৌঁছান দ্বিতীয় জন একটা বড় জাহাজের পরিকল্পনা করে বার্থালোমিউ দিয়াজকে ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে লিসবনে পাঠান তিনি প্রথম ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করেন ও দুরন্ত সামুদ্রিক ঝড় তাকে আফ্রিকার উপকূল থেকে অনেক দূরে ঠেলে দেয় এবং অজ্ঞাত অবস্থায় আফ্রিকার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকেন ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি লিসবনে প্রত্যাবর্তন করেন এবং জায়গাটির নাম করেন Cape of Strom বা ঝড়ের অন্তরীপ এর পরবর্তী সময়ে নাম হয় Cape of good Hope বা 'উত্তমাশা অন্তরীপ। দিয়াজ ও দিয়োগের আবিষ্কার অবিস্মরণীয় ছিল, কারণ এর ফলে আর নব নব আবিষ্কারের দেখা দিয়েছিল তারপর দ্বিতীয় জন পূর্বদিকে অভিযানের পরিকল্পনা করেন

রাজা দ্বিতীয় জনের পর পর্তুগালের রাজা হন এমানুয়েল দা ফরচুনেটা তিনি দ্বিতীয় জনের অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব নেন পূর্বে প্রিন্স হেনরীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ইতিপূর্বে ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে পেড্রো দ্য কাভিল লেভান্ট থেকে ভারতের পথে পাড়ি দেন এবং গোয়া কালিকট হয়ে পর্তুগালে ফিরে আসেন তিনি ভারত মহাসাগরের উপকূল অঞ্চলের বাণিজ্যিক ও নৌসামুদ্রিক বিবরণ খুব নিখুঁতভাবে দিয়েছিলেন রাজা ইমানুয়েল দিয়াজকে ভাস্কো-ডা-গামা নেতৃত্বে প্রেরিত সামুদ্রিক অভিযানের পরিকল্পনা পরিদর্শনের জন্য আহ্বান জানান১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-ডা-গামা লিসবন থেকে যাত্রা শুরু করেন এই অভিযানে দুটি সশস্ত্র জাহাজ প্রেরিত হয়েছিল যথা সেন্ট গ্যাবিয়ল ও সেন্ট রাফেল প্রত্যেকটি ১০০ থেকে ১২০ টনের মতো ওজন বিশিষ্ট এবং একটি ছোট দ্রুতগামী নৌকা নিয়ে প্রেরিত হয়েছিল ডা-গামা দিয়াজ অনুষ্ঠিত পথে ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসের উত্তমাশা অন্তরীপ অর্থাৎ Cape of good Hope প্রদক্ষিণ করে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে পৌঁছান এবং সেখান থেকে এক আরব বণিকের সহায়তায় ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ মে ভারতের কালিকট বন্দরে এসে উপস্থিত হন এই জল যাত্রার জন্য সময় লেগেছিল দশ মাস

 

 ভাস্কো-ডা-গামা কলম্বাসের মত একটি অজানা আদিম মানুষের বসতিপূর্ণ জায়গায় পৌঁছাননি তিনি আবিষ্কার করেছিলেন কতগুলি সমৃদ্ধশালী জায়গা, যেখানে পূর্বে আরব ও পারস্য বণিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল সেখানে ভাস্কো-ডা-গামার সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয় মশলাপাতি এবং মূল্যবান পাথর বোঝাই মালবাহী জাহাজ নিয়ে ১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে লিসবনে ফিরে আসেন তিনি তার এই পুরো অভিযানে হারিয়েছিলেন প্রায় অর্ধেকের মতো জাহাজ এবং লোক কিন্তু নিঃসন্দেহে এই অভিযান প্রমাণ করেছিল যে ভারতে যাওয়ার জন্য একটি সামুদ্রিক পথ আছে ও খুব লাভজনকভাবে তা কাজে লাগানো যায় এরপর রাজা ইমানুয়েল পর্তুগিজ নাবিকদের আবিষ্কারের বিনিময়ে নিজেকে নানা উপাধিতে ভূষিত করেন, যেমন- Lort of the Conquest, Navigator at Ethiopia, Arabia, Persia এবং India।

ভাস্কো-ডা-গামার প্রত্যাবর্তনের পর বারো মাসের কম সময়ের মধ্যে Pedro Alvares Cabral নামক জনৈক পর্তুগিজ নাবিক ১৩টি যুদ্ধজাহাজ ও ১৫০০ লোক নিয়ে ভারতের দিকে দ্বিতীয়বারের মতো সমুদ্র যাত্রা করেন ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ উদ্দেশ্য ছিল পর্তুগীজদের ব্যাবসায়িক শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠ করা সম্ভবত দুর্ঘটনাবশত আবার অনেকের মতে ইচ্ছাকৃত ভাবেই তিনি পূর্ব ব্রাজিলে অবতরণ করেছিলেন এবং ব্রাজিল আবিষ্কার করেন সেখান থেকে পূর্ব দিকের পথ ধরে এগোতে থাকেন এবং ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান সেখানে তিনি একটি কারখানা নির্মাণ করে ব্যবসা শুরু করেন। ঐ জায়গায় আরব ব্যবসায়ীরা শত্রুভাবাপন্ন হয়ে বিদ্রোহ করতে থাকে এবং ঐ কারখানা পুড়িয়ে দেয় ও বেশ কিছু সংখ্যক পর্তুগীজদের হত্যা করেCabral কালিকট বন্দর পরিত্যাগ করে কোচিন এগিয়ে পুনরায় একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং একটি মালবাহী জাহাজে করে আদা ও মরিচ জাতীয় মলা ভর্তি করে ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে পর্তুগালে ফিরে যান

১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-ডা-গামা ২১টি সশস্ত্র জাহাজসহ ভারতে পাঠানো হয় তিনি মালাবারের আরবীয়দের পরাস্ত করেন ও কালিকটে প্রচন্ড আক্রমণ চালান। শত্রুভাবাপন্ন মুসলমান গোষ্ঠীর উপর আক্রমণ চালিয়ে পরাজিত করে পর্তুগিজদের শক্তি প্রদর্শন করতে বোমাবর্ষণ করেনএরপর ভারতে পর্তুগিজ বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে ভারতে পর্তুগিজদের শাসনকে সুদৃঢ় করার পূর্বে ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-ডা-গামার মৃত্যু হয়

 পর্তুগালের রাজপ্রতিনিধি ফ্রান্সিসকো-ডা-আলমিদা এর সময়ে তার পৃষ্ঠপোষকতায় ও উদ্যোগে পর্তুগিজরা ভারতের আরও বেশ কয়েকটি জায়গা দখল করে নেয় ১৫০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি কালিকট কোচিন ও কান্নোরে দুর্গ নির্মাণ করেন  ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি কতগুলি যুদ্ধজাহাজ Redsea তে পাঠান ও আরবের মাঝখানে এবং সোকার্তার (Socorta) অনুর্বর জমি অধিগ্রহণ করে ও হরমুজ দখল করে পর্তুগিজদের আধিপত্যের নমুনা রাখেন। আলমিদা শ্রীলঙ্কা অভিযান করেছিলেন যেখানে দারুচিনি উৎপন্ন হত।

 ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে আলমিদার পরিবর্তে  Alforse Da Albugueque রাজ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে তার নেতৃত্বে ১৫১০ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজরা গোয়া দখল করে এবং এখানে মিশনারীরা একটি বিখ্যাত মিশন স্থাপন করেন ক্রমশ গোয়া দমন দীউ পর্তুগালের উপনিবেশে পরিণত হয়। বহু মানুষকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হয় পরবর্তী ৯ বছর গোয়া পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে থাকে। গোয়া থেকে পর্তুগিজ নৌবাহিনী গোয়া থেকে পর্তুগিজ নৌবাহিনীর জাহাজ রক্ষা করত এবং ভারত মহাসাগরে ব্যবসা করত ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে আলবুকার্ক মালাক্কা ও সুমাত্রার মধ্যে এবং আন্দামান সমুদ্র ও দক্ষিণ চায়না সমুদ্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তা দখল করেন সেখানকার উৎপাদিত লবঙ্গ লাভের উদ্দেশ্যে মালাক্কা পর্তুগালের এলাকাভুক্ত হয় পৃথিবীর প্রধান মলা উৎপাদন ক্ষেতের উপর তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে তারা পূর্বদিকে বাণিজ্য করতে সক্ষম হয়১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে আলবুকার্ক অর্মুজ (ORMUZ) দখলের জন্য একটি অভিযান চালান এবং পারস্য উপসাগরের উপর পর্তুগীজদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু পর্তুগালের সীমিত রসদ এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে দেয়নি Zevant থেকে ভেনিসে আগত মলার পরিমান ছিল সবচেয়ে বেশি এবং উত্তমাশা অন্তরীপের মধ্য দিয়ে পর্তুগিজরা সমপরিমাণ জিনিস জাহাজে করে পাঠাত

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে পর্তুগীজদের এইরূপ অপ্রতিরোধ্য সামুদ্রিক অভিযান প্রত্যক্ষভাবেই ইউরোপের সঙ্গে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে পর্তুগিজ নাবিকদের আবিষ্কৃত জলপথকে অনুসরণ করে পরবর্তীকালে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলি অভিযানে বেরিয়েছিল তারা বানিজ্যের নামে একদিকে যেমন বৈদেশিক সম্পদ লুট করে আনে তেমনি পরোক্ষ ভাবে তাদের খ্রিস্টান ধর্মের ভাবধারা ও ছড়িয়ে দেন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...