সুলতানি যুগে ইকতা থেকে যারা রাজস্ব
সংগ্রহ করত তাদেরকে বলা হত ‘মুকতি’ এবং সাধারণভাবে
ইকতাদার কখনো কখনো এরা ‘ওয়ালী’ বা ‘উলিয়াৎ’ নামেও অভিহিত ছিলেন। নিজাম উল মুলক তাঁর ‘সিয়াসৎ নামা’ গ্রন্থে ইকতা প্রথার
গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে ইকতাদার
বা মুকতির কিছু কর্তব্যের উল্লেখ করেছেন। ইকতার প্রাপক মুকতি নিয়মিত রাজস্ব আদায় ছাড়া
প্রজাদের উপর অন্য কোন অধিকার বা দাবি আরোপ করতে পারতেন না। জমি ও কৃষকদের উপর মুকতির কোনো স্থায়ী অধিকার ছিল
না। তবে মুকতি সুলতানের ইচ্ছানুসারে ইকতা
থেকে আদায়ীকৃত রাজস্বের একাংশ ভাগ করতে পারতেন। বিনিময়ে তিনি একটি সেনাবাহিনী পোষণ
করতেন ও সুলতানের প্রয়োজনে এই বাহিনী দ্বারা তাকে সাহায্য করতেন। ডঃ ইরফান
হাবিব এর ভাষায় the Muqti was thus tax collected at army
paymasters also commanders ruled into one.
সুলতানি
যুগের ইকতা ব্যবস্থার বিবর্তনের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় মুকতি বা ইকতাদারদের
উপর কেন্দ্রের কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা অবলম্বন করতে আবার কখনো বিকেন্দ্রীকরণের ফলে
মুকতির স্বাধীনতা বৃদ্ধি ঘটত। ইলতুৎমিস তুর্কি সেনাপতিদের মধ্যে
ইকতা বিতরণ করেন ও এই ব্যবস্থাকে প্রাদেশিক শাসন এর ভিত্তিতে গড়ে তোলার চেষ্টা
করেন। মুকতিদের
ক্ষমতা যাতে না বৃদ্ধি পায় তার জন্য বিভিন্ন স্থানে বদলির ব্যবস্থা করেন। এছাড়া ইকতার নির্দিষ্ট রাজস্ব
ভোগের বিনিময়ে এঁরা সুলতানকে সামরিক সাহায্য দিতে বাধ্য থাকবেন। গিয়াসউদ্দিন বলবন ক্ষমতায় আসার পূর্বে কেন্দ্রীয়
নিয়ন্ত্রনের অভাবে মুকতিদের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। মুকতিরা বংশানুক্রমিকভাবে ইকতা ভোগ দখল
করেছিল। বলবন
এসে বৃদ্ধ ও অক্ষম ব্যক্তিদের ২০/৩০ টাকা পেনশন প্রদানের ও সক্ষম
ব্যক্তিদের নগদ মজুরির ভিত্তিতে সমস্ত ইকতা কেড়ে নেন।
‘খোরাজ’ নামক এক
শ্রেণীর হিসাব পরীক্ষক নিয়োগ করে মুকতিদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়। বলবনের মত আলাউদ্দিন খলজীও ইকতা ব্যবস্থার
ওপর কঠোর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপের উদ্যোগ
নিয়েছিলেন। যার কারনে মুকতিদের ক্ষমতা সংকুচিত হয়েছিল। আবার গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সময় মুকতিদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পায় এবং
মুকতিরা স্বাধীন হয়ে ওঠে। মহম্মদ
বিন তুঘলক ইকতা ব্যবস্থায় নিলাম প্রথা চালু করেন এবং আমীররা জোরপূর্বক ইকতাদারদের
কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন। সাধারণত
সৈন্যদের নগদ বেতন ও উচ্চপদস্থদের একখণ্ড ইকতাদানের ব্যবস্থা করেন। ফিরোজ শাহ
তুঘলকের সময় ইকতা ব্যবস্থায় বিকেন্দ্রীকরণ ঘটলে মুকতিদের দায়বদ্ধতা হ্রাস পায়
এবং তারা যথেচ্ছানুসারে বংশানুক্রমিকভাবে ইকতা ভোগ দখল করতে থাকে। এভাবে পরিস্থিতি সাপেক্ষে মুকতিদের
কর্তব্যকর্মের চরিত্র বদল ঘটেছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন