সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি

 


 রেনেসাঁ যুগে যে বুদ্ধিবিভাষার উত্থান ঘটেছিল লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ছিলেন তার পথ প্রদর্শক তিনি ১৪৫২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন এই সময়সীমায় তিনি ছিলেন একাধারে চিত্রকর, ভাস্কর, সঙ্গীতজ্ঞ, গণিতজ্ঞ, দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক

 শিল্প স্থাপত্যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি অসাধারণ শিল্পী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন তাঁর নকশার শক্তি আর বলিষ্ঠতা প্রকৃতি যাবতীয় খুঁটিনাটি উপাদানের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম উপস্থাপনার পাশাপাশি তাঁর শিল্পকর্মে দেখা গিয়েছিল রীতিনীতি সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান, সুষম বিন্যাসের স্পষ্ট ধারণা, পরিনিতিবোধ, মহ পরিকল্পনা আর স্বতস্ফূর্ত সৌন্দর্যবোধ তাঁর আঁকা চরিত্রায়নের সচলতা দেখলে মনে হয় যেন শ্বাস গ্রহন করছে আর ছাড়ছে তিনি বিশ্বাস করতেন যে একজন চিত্রশিল্পীর হাতের মুঠোয় ধরা আছে গোটা বিশ্ব জগত; যদি তিনি উপত্যাকা চান অথবা পাহাড় চূড়া থেকে আবিষ্কার করতে চান বিস্তীর্ণ সমভূমি আর তারও ওপারে দিকচক্রবালে সমুদ্র দেখতে চান, তবে সেসব তার আয়ত্তেই আছেতাঁর অঙ্কিত চিত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ভার্জিন অ দ্য রকস, ‘the Last supper’, ‘Monalisa’। ‘মোনালিসার চিত্রটি নিছক যেন জীবন্ত একটি প্রতিকৃতিতে থেমে থাকতে চান নি, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি যেন কোনো নির্দিষ্ট কালপর্বে চিহ্নিত করা যায় না এমন এক নিসর্গের আর সময়ের প্রেক্ষিতে তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন এক অদ্ভুতপূর্ণ রহস্যময়ীকে যার মধ্যে দিয়ে যুগে যুগে রমণীদের যত রকম দেখতে চেয়েছে মানুষ প্রকাশ্যে আর মনের গহীনে, তাদের ঘিরে যতভাবে গড়ে তুলেছে নিজেদের যাবতীয় স্বপ্ন, কল্পনা আর মনোভাব, বিস্ময়, মুগ্ধতা, প্রেমপ্রীতি, ভয়, অস্থিরতা, রাগ, ঘৃণা ফুটে উঠেছে সেই সবকিছুই চিত্রকর হিসেবে তিনি বহু আখ্যায় আখ্যায়িত হয়েছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘prince of the art’ .

 মধ্যযুগের পরবর্তীকালে রেনেসাঁসের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের উন্নতি সাধিত হয়েছিল চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে মানবদেহ ব্যবচ্ছেদ, অনুসন্ধান, মাপজোক, শারীরতত্ত্ব এবং বিকারতত্ত্ব প্রভৃতি বিভাগে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অবদান ছিললিওনার্দো গ্যালেন প্রবর্তিত এনাটমির বহু ভুল শুধরে দিয়েছিলেন। তিন জ্যামিতিক, বলবিজ্ঞান ও জলবিজ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন।

পরিশেষে বলা যায় লিওনার্দো দা ভিঞ্চির জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে রেনেসাঁস যুগের সম্ভাবনা ও ব্যর্থতা উভয় দিকটিই ধরা ড়ে তিনি কেবল ছবি এঁকে সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছবির বিষয়বস্তু অন্তনীল গৃঢ় চরিত্রটিকে বুঝতে যে আলোর মাধ্যমে তিনি কোন বস্তুকে দেখেছেন সেই আলোর প্রকৃতি জানতে সে কারণেই তিনি যুগপৎ আলোকবিদ্যা, শারীরস্থানবিদ্যা, প্রাণীকুল, গাছপালা এবং শিলা পাথর নিয়ে চর্চায় মেতে ওঠেন যদিও তিনি পথপ্রদর্শক হতে পারেননি, তবে অবশ্যই রেনেসাঁ যুগের প্রেরণা হয়ে উঠেছিলেন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস

    মার্টিন লুথার ছিলেন লুথা রিয়ান মতবাদের প্রবক্তা । জার্মানির স্যাক্সসনিতে ইসলিবেন নামে একটি গ্রামে ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথারের জন্ম হয় । ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে ইউটে ম বা র্গ চা র্চে র দরজায় তিনি তাঁ র ৯৫ তত্ত্ব ঝু লিয়ে দেন । এটি ছিল পোপের স্বর্গীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ । সমস্ত জার্মানির শিক্ষিত মানুষেরা লুথারের তত্ত্বে র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল । এই ৯৫টি ছিল তাত্ত্বিক প্রশ্ন , এতে বাইবেল ও খ্রিস্টান দর্শন সম্বন্ধে তাত্ত্বিক গুরুগম্ভীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রশ্ন ছিল । উইলিয়াম ওকামের চিন্তাভাবনা দ্বারা মার্টিন লুথার প্রভাবিত হয়েছিলেন । ইউরোপের এই চিন্তা ধারা পরিণত ছিল nominalism নামে । নমিনালিস্ট চিন্তাধারায় উল্লেখযোগ্য ছিল বিশ্বাস ও নিবেদিতপ্রাণতা । নমিনালিস্টরা মনে করত বিশ্বাসই মুক্তি আনবে , তবে এই বিশ্বাস অর্জনের জন্য শাস্ত্র পড়তে হবে এবং গভীর আগ্রহের সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের বোধগম্য ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে হবে । লুথার এইমতে বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি বিশ্বাস করতেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারিত হওয়া উচিত এবং আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল রচনা করা একান্ত দরকার । তিনি খ্...