সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আরবদের সিন্ধু বিজয়ের কারণ ও ফলাফল

 


সপ্তম শকতে শ্রেষ্ঠ সামরিক শক্তি হিসেবে ইসলামের আবির্ভাব বিশ্ব ইতিহাসের এক বিস্ময়কর ঘটনা। আরবদের সিন্ধুদেশ অভিয়ান সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমে দুটি বিষয় গুরুত্বসহকারে দেখা দরকার তা হল সিন্ধুদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অভিয়ানের আগে আরব জগতের অবস্থান। সপ্ত শতকে সিন্ধুদেশের রাজা  সাইসীর আমলে পারসিকদের সিন্ধুদেশ জয়ের চেষ্টা চালিয়ে শেষে ব্যর্থ হয় রাজপুত্র দ্বিতীয় সাইসি পরবর্তী সিন্ধুদেশের রাজা হন দ্বিতীয় সাইসীর মৃত্যুর পর তাঁর মন্ত্রী চার্চ সিংহাসনে বসেন। ফলে সিন্ধুদেশে বংশানুক্রমিক ক্ষমতালাভের ঐতিহ্যের পরিসমাপ্তি ঘটে চার্চের পর তার পুত্র দাহির সিংহাসনে বসেন এই সময় কতগুলো কারণেই সিন্ধুদেশের রাজনৈতিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে সিন্ধুদেশের সামন্তপ্রভুরা চার্চ ও তাঁ পুত্র দাহিরের নেতৃত্বকে মেনে নিতে পারেনি। ব্রাহ্মণ বংশোদ্ভূত দাহিরের দ্বারা নিম্নবর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধরা নিগৃহীত ও অত্যাচারিত হওয়া তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে কাশ্মীরসহ অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র তাঁর প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠেছিল এই রকমেরই একটি ফাটল ধরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরবরা সিন্ধুদেশ আক্রমণ চালিয়েছিল

 মুসলমান সমাজের ধর্মগুরু হজরত মহম্মদের (৬৩২ খ্রি:) মৃত্যুর পর প্রায় কুড়ি বছরের মধ্যে আরবরা খলিফাদের নেতৃত্বে নানা দেশ জয়ের পথে বাহির হয় হজরত মহম্মদের মৃত্যুর পর প্রথম ওমরের (Omar ) নেতৃত্বে (৬৩৪- ৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) আরবরা থানে (বোম্বাই), ভারুচ বন্দর, দেবল বন্দর দখল করে এই সাফল্যের মূলে ছিল শক্তিশালী নৌবাহিনী পরে স্থলপথে উত্তর-পশ্চিম ভারতের গিরিপথগুলি দিয়ে ভারতে প্রবেশের প্রচেষ্টা চালালেও পার্বত্য অধিবাসীদের প্রতিরোধের ফলে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি 

ওমরের পর আরব রাজনীতিক শাসনকর্তা হজ্জাজের নিকট সিংহ রাজা মুসলমান ধর্ম গ্রহণের পর আনন্দিত হয়ে একটি জাহাজ উপঢৌকন পাঠিয়েছিলেন পথের মাঝখানে সিন্ধুদেশের দেবল বন্দরে জলদস্যুরা বা হার্মাদরা জাহাজটি লুট করে নেয়। হজ্জাজ সিন্ধুদেশের রাজা দাহিরের নিকট ক্ষতিপূরণের দাবি জানায়, তিনি তা অস্বীকার করেন ফলে হজ্জাজ তাঁর দুজন বিশ্বস্ত সেনাপতি ওবেদুল্লা ও বুদাইলের নেতৃত্বে আক্রমণ চালিয়ে ব্যর্থ হন 

 

এই সময় হজ্জাজের আত্মীয় মুহাম্মদ বিন কাশিম ৭১১ খ্রিস্টাব্দে বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে সিন্ধুদেশ আক্রমণের প্রচেষ্টা চালান মাকরনের শাসক হরুন কাশিম সৈন্য নিয়ে মুহাম্মদ বিন কাশিমকে সাহায্য করেন ফলে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে দাহির এত বড় সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুহাম্মদ বিন কাশিমের হাতে বন্দী হন এবং পরে তাঁর মৃত্যু হয় দাহিরের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে না পেরে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেনচাচনামাকেমব্রিজ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া থেকে জানা যায় যে খলিফা জুনাইদ সিন্ধুদেশের রাজা দাহিরের পুত্র জয়সিংহকে পরাজিত ও নিহত করেন তারপর জুনাইদ রাজপুতানা জয়ের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়

 এইসময় দক্ষিণ ভারতে চালুক্য রাজবংশ ও অন্যদিকে প্রতিহার রাজবংশের দ্বারা আরবরা বাধা প্রাপ্ত হয়েছিল ফলে আরবদের অভিযান ও পরাক্রমশালীতা কিছুদিনের জন্য অবদমিত হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে এই সময় চালুক্য রাজবংশের রাজা দ্বিতীয় পুলকেশী ও প্রতিহার বংশের রাজা নাগভট্ট ছিলেন

 কিন্তু আব্বাসীয় রাজবংশের নেতৃত্বে আরবরা পুনরায় তাদের প্রাণশক্তি ফিরে পায় তারা উজ্জয়নীহ ভারতবর্ষের অভ্যন্তর ভাগে আক্রমণ চালিয়ে পশ্চিম ভারতের কয়েকটি প্রদেশে দখল করে নিয়েছিল একদা আব্বাসীয় বংশের পতন ঘটলে আরবদের অগ্রগতি ব্যাহত হয় মুলতান ও ব্রাহ্মণ্যবাদের আরব শাসনকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ বিসংবাদের ফলে সিন্ধুদেশে আরব শক্তির পতন ঘটে

 আরবরা সিন্ধুদেশ আক্রমণ করেছিলেন কেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে ঐতিহাসিক আরনল্ড বলেছেন যে, আরবদের ভারত আক্রমণের কারণ ধর্মীয় ছিল না, আরব বণিকরা পশ্চিম ভারতীয় উপকূলে দীর্ঘদিন বাণিজ্য করার ফলে ভারতের বিপুল সম্পদের প্রাচুর্য সম্পর্কে অবগত হয়ে তা লুন্ঠনের জন্যই আরবরা আক্রমণ চালায় ঐতিহাসিক হেনরি পিরেন আরবদের ভারত আক্রমণের কারণ দেখাতে গিয়ে বলেছেন যে ভূমধ্যসাগরে আরব আধিপত্য স্থাপিত হওয়ায় ভারতের সঙ্গে পশ্চিম ইউরোপের সরাসরি বাণিজ্যে বাধা দেখা দেয়। ভারত তথা প্রাচ্যদেশের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য আরবদের হাতে চলে যায় সুতরাং ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় বন্দরগুলি দখল করে আরবরা ভারতীয় রপ্তানি বাণিজ্যে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা চালায়। আবার কোন কোন ঐতিহাসিক আরবদের সিন্ধু আক্রমণের কারণ হিসেবে ধর্মীয় উদ্দেশ্যকে নির্দেশ করেছেন ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য নাকি অন্যান্য দেশের মত ভারত আক্রমণ করেছিল

আরবদের সিন্ধু অভিযানের প্রকৃত কারণ কি ছিল তা বিতর্কিত হলেও তাদের যে সাফল্য এসেছিল তা অনস্বীকার্য তবে কোন কোন কারণের জন্য তাদের এই সাফল্য আসে, এর উত্তরে বলা যায় - i) সিন্ধুদেশে অভ্যন্তরীণ অন্তর্দ্বন্দ্ব, ii) দাহিরের সামরিক দুর্বলতা, iii) নিম্নবর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধদের উপর অকথ্য অত্যাচার ও তার দরুন বিদ্রোহ, iv) সামন্তপ্রভুদের বিদ্রোহ ও v) মহম্মদ বিন কাশিমের পরাক্রমশালীতা ও সুদক্ষ রননৈপুন্যতা।

 আরবদের সিন্ধু বিজয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল আরবরা তিনশ বছর ধরে সিন্ধুদেশ শাসনে রাখলেও এর বাইরে ভারতের অন্যত্র তাদের আধিপত্য কায়েম করতে পারেনি অথচ আশ্চর্যের বিষয় আরবরা সিরিয়া, প্যালেস্তাইন, ইজিপ্ট, পারস্য প্রভৃতি রাজ্য জয় করেছিল ঐতিহাসিক লেনপুল আরবদের সিন্ধু বিজয়কে ইসলামের ইতিহাসে একটি বন্ধ্যা বিজয় কাহিনী বলে অভিহিত করেছেন অনেক ঐতিহাসিকদের দ্বারাও এই ম সমর্থিত হয়েছে এর কারণ দর্শাতে গিয়ে বলেছেন যে i) শাসন ক্ষমতায় আসীন শাসকরা ছিলেন অপটু ও পারস্পরিক বিসংবাদে লিপ্ত ছিল ফলে নিজেদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে ii) অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনুর্বর সিন্ধুদেশ অধিকারে রেখে লাভবান হয়নি বিজিত হিন্দুগণ শাসক জাতিকে স্বাভাবিকভাবেই সুনজরে দেখতে পারেনি দুর্গম মরুভূমি থাকায় পূর্বদিকে আরবগণ আর বেশিদূর এগোতে পারেননি তাছাড়া ছিল রাজপুতদের পরাক্রমশালীতা ও খলিফাদের প্রতিপত্তি হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে সুদূর সিন্ধুদেশে কেন্দ্রীয় শক্তি সাহায্য ও সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত হয় এই কারণেই আরবদের সিন্ধু বিজয়কে ফলাফলহীন ঘটনা বলে অভিহিত করা হয়েছে

 ঐতিহাসিক শ্রীবাস্তব সিন্ধু বিজয়ের গুরুত্বের কথা আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন আরবদের সিন্ধু অভিযানের মধ্য দিয়েই ভারতে ইসলাম ধর্মের বীজ বপন করা হয়েছিল এই অভিযানে ভবিষ্যতে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে আক্রমণকারীদের ভারত আক্রমণে উৎসাহিত করেছিল ঐতিহাসিক লেনপুলের মতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সিন্ধু বিজয় ব্যর্থ হলেও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরবগণ এই সর্বপ্রথম ভারতবর্ষের সংস্পর্শে এসে বুঝেছিল ভারতীয় কৃষ্টি ও সভ্যতা কত উচ্চমানেরআরবরা ভারতীয়দের নিকট শাসন কৌশল, হিন্দু দর্শন, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, সঙ্গীত ও চিত্রশিল্প প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেছিল এমনকি ইউরোপেও এই জ্ঞানচর্চার প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল ঐতিহাসিক তবরিরের লেখা থেকে জানা যায় যে বাগদাদের রাজসভায় পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতীয় চিকিৎসক ও দক্ষ কারিগরদের সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন গ্রী বিজ্ঞান ও দর্শন আরবীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানকে প্রভাবিত করেছিল ঐতিহাসিক হ্যাভেল তাঁ‘Aryan rule in India’ গ্রন্থে বলেছেন গ্রীক নয়, ভারতী ইসলামকে তার উন্মেষ কালে দর্শন, ধর্মীয় আদর্শবাদের ক্ষেত্রে শিক্ষা দিয়েছিল ও সাহিত্য, শিল্প স্থাপত্যের ক্ষেত্রে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল তবে আব্বাসীয় বংশের পতন ঘটল ভারতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তবে একথা অনস্বীকার্য যে, আরবদের প্রচেষ্টায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছিল এছাড়া পরবর্তীকালে দিল্লি সুলতানি শাসকদের আমলে হিন্দু মুসলিম সংস্কৃতির যে সমন্বয়ের ধারা লক্ষ্য করা যায় তাকে বহুলাংশে প্রেরণা যুগিয়েছিল সিন্ধুদেশের উদাস আরবীয় শাসনের কৃষ্টি ও ভাবধারা

 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...