সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ত্রিশক্তি দ্বন্দ্ব

 


প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বর্তমান উত্তরপ্রদেশের ফারুদাবাদ জেলায় অবস্থিত মহোদয় বা কনৌজ একদা সাম্রাজ্যবাদের আস ও প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। হর্ষবর্ধনের সময় থেকে কনৌজ রাজনৈতিক আধিপত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। হর্ষবর্ধন কনৌজে রাজধানী স্থাপন করলে তার রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে পরে মালবের মৌখরী বংশীয় জনৈক যশোবর্মনের আমলে গুরুত্ব ও মর্যাদা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায় চীনদেশীয় সূত্র থেকে জানা যায় যে তিনি সম্ভবত আরবদের আক্রমণ থেকে কনৌজকে রক্ষা করেছিলেনঅষ্টম ও নবম শতকে কনৌজের রাজনৈতিক গুরুত্ব অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় অষ্টম শতকে ভারতীয় রাজাদের এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল যে কনৌজ অধিকার সে সার্বভৌম সম্রাটের স্বীকৃতি পাবে। এই ধারনা থেকে বাংলার পাল বংশ, রাজপুতানার প্রতিহার বংশ এবং দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট বংশের রাজারা প্রায় দুইশত বছর ধরে কনৌজকে কেন্দ্র করে ত্রিশক্তি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছিল।  

 কনৌজের গুরুত্ব বৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ বিদ্যমান ছিল মৌর্য ও গুপ্ত যুগের রাষ্ট্রীয় আদর্শ ছিল সর্বভারতের সম্রাট অর্থাৎ 'একরাট' হওয়া। কিন্তু হর্ষবর্ধনোত্তর যুগে সমগ্র ভারতবর্ষে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব স্থাপনের পরিবর্তে শুধুমাত্র উত্তর ভারতে, দক্ষিণ ভারতে একছত্র আধিপত্য স্থাপনকেই তৎকালীন নরপতিরা লক্ষ্য হিসেবে স্থির করে নিয়েছিলেনহর্ষবর্ধনের পরবর্তী যুগে সাম্রাজ্যবাদী রাজাদের উত্তর ভারতের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপন একমাত্র লক্ষ্য ছিল পশ্চিম এশিয়ার যোদ্ধা জাতিদের কাছে যেমন ব্যাবিলন, টিউটনিক জাতি কাছে যেমন রোম অধিকার করা লক্ষ্যবস্তু ছিল তেমনি অষ্টম ও নবম শতকের ভারতীয় রাজবংশগুলির কাছে কনৌজ অধিকার ছিল চূড়ান্ত মর্যাদার প্রতীক। বাংলার পালরাজাদের তাম্রশাসন( খালিমপুর ও মুঙ্গের) ও বাদল স্তম্ভলেখ, প্রতিহার রাজাদের দৌলতপুর ও বরালেখ এবং রাষ্ট্রকূটদের সনজান ও সিরপুর লেখগুলিতে ত্রিশক্তি সংগ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। নৌজে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অর্থ ছিল গাঙ্গেয় উপত্যকার উপর অধিকার স্থাপন অর্থাৎ কনৌজ যার দখলে থাকবে তার পক্ষে গাঙ্গেয় উপত্যাকা অঞ্চলে উর্বর ভূমির সম্পদ আহরণ করা সহজসাধ্য হয়ে উঠবে এই কারণে অষ্টম শতকে কনৌজ দখলের প্রশ্নে এক দীর্ঘস্থায়ী ত্রিশক্তি সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। 

 অষ্টম শতকের শেষপাদে পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূটবংশ প্রতিপত্তিশালী হয়ে ওঠে এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে ক্ষমতা বিস্তারে উদ্যোগ নিলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে কনৌজ অধিকারকে কেন্দ্র করে উত্তর ভারতের পাল প্রতিহার শক্তির সংঘর্ষ অনিবার্য ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু দক্ষিণের রাষ্ট্রকূট শক্তি এই দ্বন্দ্বে যোগদান করে এর গুরুত্বকে বাড়িয়ে তুলেছিল।

 দীর্ঘস্থায়ী ত্রিশক্তি সংঘর্ষের ক্রমপরম্পরা নির্ণয় করা খুবই কঠিন প্রতিহার বংশীয় বৎসরাজ রাজপুতনা ও মধ্য ভারতের নিজ আধিপত্য বিস্তারের পূর্বে পূর্বদিকে রাজ্য বিস্তারের উদ্যোগী হন অপরদিকে একই সময় বঙ্গদেশের পালবংশীয় রাজা ধর্মপাল বাংলা ও বিহারে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হন এর ফলে উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে গাঙ্গেয় দোয়াব অঞ্চলের যুদ্ধে ধর্মপাল প্রতিহার রাজ বৎসের নিকট পরাজিত হন প্রতিহার রাজাদের জয়লাভ ও ক্ষমতা বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে রাষ্ট্রকূট রাজ ধ্রুব উত্তর ভারত অভিযান করেনবৎসরাজ রাষ্ট্রকূট রাজা ধ্রুবর হাতে পরাজিত হয়ে রাজপুতনার মরু অঞ্চলে পালিয়ে যান এবং ধ্রুব গাঙ্গেয় দোয়া অঞ্চল পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে বাংলার ধর্মপালকে পরাজিত করেন এইভাবে ত্রিশক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচনা হয়

এই ত্রিশক্তির যুদ্ধে প্রকৃত লাভবান হয়েছিল ধর্মপাল কারণ রাষ্ট্রকূট রাজা ধ্রুবর হাতে প্রতিহার শাসক বৎসরাজ পরাজিত হওয়ার ফলে কনৌজ ছেড়ে চলে যায় এবং রাষ্ট্রকূট রাজ ধ্রুব কনৌজ দখল করে দক্ষিণের ফিরে যায় এর ফলে কনৌজে যে শক্তি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল তার সুযোগ নিয়ে ধর্মপাল উত্তর ভারতের বহু স্থান অধিকার করেন নারায়ন পালের ভাগলপুর তাম্রলিপি থেকে জানা যায় যে ধর্মপাল কনৌজের সিংহাসন থেকে ইন্দ্রায়ুধকে বিতাড়িত করে তাঁর মনোনীত চক্রায়ুধকে শাসন ক্ষমতায় বসান ধর্মপালের সামন্তরাজা হিসেবে চক্রায়ুধ রাজত্ব করতে থাকেন তিনি দূরবর্তী অঞ্চলে অধীনস্থ সামন্তদের দ্বারা শাসনের নীতি গ্রহণ করেন খালিমপুর তাম্রলিপি থেকে জানা যায় যে ধর্মপাল কনৌজে এক দরবারের আয়োজন করলে উত্তর ভারতের নানা অঞ্চলের রাজারা উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতি বশ্যতা জ্ঞাপন করেন।

 ধর্মপাল রাজনৈতিক দূরদর্শিতার দ্বারা কনৌজের উপর যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল তা দীর্ঘকাল বজায় রাখা সম্ভব হয়নিরাজত্বের শেষের দিকে তাঁকে পুনরায় ত্রিশক্তি দ্বন্দ্বে ভাগ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় বৎসরাজের পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় নাগভট্টের নেতৃত্বে প্রতিহারগণ পুনরায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং কনৌজ অধিকারের জন্য অগ্রসর হয় নাগভট্ট প্রথমে সিন্ধু, বিদর্ভ, অন্ধ প্রভৃতি শক্তির সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন এবং আকস্মিক আক্রমণ করে ধর্মপালের প্রতিনিধি চক্রায়ুধকে বিতাড়িত করেন ধর্মপাল বেগতীত বুঝে রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দের সাহায্য প্রার্থী হন তবে রাষ্ট্রকূট হস্তক্ষেপের আগেই কনৌজ পুনরুদ্ধারের জন্য ধর্মপাল এগিয়ে যান বিহারের মুঙ্গেরে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয় এবং ধর্মপাল প্রতিহার রাজ নাগভট্টের নিকট পরাজিত হন।

 দ্বিতীয় নাগভট্ট তাঁর এই বিজয়কে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারেনিকারণ তাঁর জয়লাভের অব্যবহিত পরেই রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দ উত্তর দিকে অভিযান চালান তৃতীয় গোবিন্দ আক্রমণে প্রতিহার রাজ চূড়ান্তভাবে পরাস্ত হন ধর্মপাল বিনা যুদ্ধে রাষ্ট্রকূট রাজ তৃতীয় গোবিন্দের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে রাষ্ট্রকূট রাজ তৃতীয় গোবিন্দ দক্ষিনে ফিরে গেলে উত্তরে যে শক্তি শূন্যতা দেখা দেয় তার সুযোগে ধর্মপাল লুপ্ত ক্ষমতা পুন:প্রতিষ্ঠা করেন পাল শাসক ধর্মপালের আমলে যে ত্রিশক্তি দ্বন্দ্বের সূচনা হয়েছিল তা পুত্র দেবপাল উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করে দশম শতাব্দী গোড়ার দিকে কনৌজের কর্তৃত্ব ছিল প্রতিহার বংশের রাজাদের হাতে ৯১৬ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রকূটরা শেষবারের জন্য কনৌজ আক্রমণ করেছিল

 দীর্ঘস্থায়ী ত্রিশক্তি সংগ্রামের ফল ছিল সুদূরপ্রসারী এই যুদ্ধের ফলে তিনটি শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলা যায় যে সামরিক দিক থেকে তিনটি রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে যুদ্ধের ব্যয় ভার বহন করতে গিয়ে প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল কনৌজ দখলের জন্য লড়াইয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকার ফলে তিনটি শক্তির নৃপতিরা কেউই নিজ নিজ রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শাসনের দিকে তেমন নজর দিতে পারেননি যার ফলে শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল তিন রাজ্যের রাজাদের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে তাঁদের অধীনস্থ সামন্তরাজারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, ক্রমাগত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও সামন্তরাজাদের বিদ্রোহে উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপনের শেষ প্রচেষ্টাও ধুলিস্যাৎ হয়ে যায় পাল পতিহার ও রাষ্ট্রকূট রাজারা সেনাবাহিনীর ব্যয় ভার চালানোর জন্য রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে কৃষক ও অপরাপর সামাজিক শ্রেণী যারা সরকারকে কর দিত তাদের আর্থিক দুরবস্থা সীমা পরিসীমা ছিলনা যে কারণে আত্মক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত তিনটি রাজ্যের পতন ঘটিয়েছিল একই সময়ে এবং একই কারণে

ত্রিশক্তি দ্বন্দ্বের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি হল অনাবশ্যক শক্তিক্ষয়। আরব পরিব্রাজক মাসুদি দশম শতকের গোড়ার দিকে কনৌজে আসেন। তিনি বলেন যে কনৌজের প্রতিহার রাজা ছিলেন রাষ্ট্রকূটদের শত্রু। ভারতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নরপতিরা দুইপক্ষে যুদ্ধে যোগদান করেন, উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট করে। ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিরা কনৌজ অধিকার করে ধ্বংস করে দেয়। সারা ভারতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য স্থাপিত হয়, তারা আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করেছিল। ফলে কেবলমাত্র ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য নয়, সাংস্কৃতিক ঐক্যও বিনষ্ট হয়েছিল। আঞ্চলিক স্তরে ধর্ম, সাহিত্য, শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্থানীয় রীতিনীতি, আচার আচরণ গড়ে উঠেছিল। ভারতের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, সামরিক শক্তির অবক্ষয় এবং আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্যতাবোধের বিকাশ ঘটেছিল ত্রশক্তি সংঘর্ষের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য হিসেবে।  

 

 

 

 

------------------------০---------------------

----------------------০----------------------

 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...