সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিক্রম সম্বত

 


 

 বিক্রম সম্বত ৫৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু হয়। মধ্য ভারতে শকাব্দের পরিবর্তে বিক্রম সম্বত চলে আসছে কিংবদন্তি অনুযায়ী রাজা বিক্রমাদিত্য এই সম্বত প্রবর্তন করেন। যদিও বিক্রমাদিত্য বলতে গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তকে ধরা হয় তবে তিনি পঞ্চম খ্রিস্টাব্দে জীবিত ছিলেন সুতরাং ৫৮ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে তিনি একটি অব্দ প্রচলন করেন তবে তা সম্বত হতে পারে নাঅষ্টম খিষ্টাব্দে শকারি বিক্রমাদিত্যের কিংবদন্তি গড়ে উঠলে বিক্রম সম্বতের সঙ্গে তার নাম যুক্ত হয়ে যায়সুতরাং এই সম্বতের উৎপত্তি কিভাবে হলো তা জানার কোনও সুনিশ্চিত উপায় এখনো পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি

কিংবদন্তি অনুসারে বিক্রমাদিত্য নামে এক মহা ক্ষমতাশালী ও জ্ঞানী রাজা একদা উজ্জয়িনীতে রাজত্ব করতেন। তিনি সম্ভবতঃ এই সম্বতের প্রবর্তন করেছিলেন জৈন লেখক মেরুত্তুঙ্গের মতে বিক্রমাদিত্য শকদের বিজিত করে উজ্জয়নী অধিকার করেন এবং বিক্রম সম্বত চালু করেন। কিন্তু কিংবদন্তির এই বিক্রমাদিত্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না জৈন লেখক মেরুত্তুঙ্গ খুবই পরবর্তী যুগের লেখক ছিলেন, তাই এক্ষেত্রে তার সাক্ষ্য নির্ভরযোগ্য নয় বিক্রম সম্বতের প্রথম শতকে এই অব্দের সঙ্গে বিক্রমের নাম যুক্ত ছিল নাতখন শুধুমাত্র এই অব্দটি সম্বত বলে প্রচলিত ছিল পঞ্চম খ্রিস্টাব্দে এই অব্দের নাম মালবান্দ বা মাল সম্বছিল বিক্রম সম্বতের ৮৯৮ বছর থেকে এর সঙ্গে বিক্রমের নাম যুক্ত হয় সুতরাং বলা যায় না দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এই সম্বত প্রতিষ্ঠা করেন।

 ড: ডি সি সরকার বলেন যে, বিক্রম সম্বত সম্ভবত শক-পার্থিয় রাজা বোনোনেসের দ্বারা প্রচলিত হয় তিনি ড্রিঙ্গিয়ানার সিংহাসনে বসে এই সম্বত প্রবর্তন করেন শক রাজা মায়েসের তক্ষশীলা লিপিতে ৭৮ সম্বত উল্লেখ আছে ড: সরকারের মতে বোনোনেসের সম্বতের সনই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে মার্শালের মতে এ্যাজেস এই সম্বত ব্যবহার করেন, তবে তা প্রবর্তন করেন নি মাল উপজাতি আদিতে পাঞ্জাবে বসবাস করত তখন থেকেই তারা সম্বত ব্যবহার করতে শেখে পরে রাজপুতানা ও মধ্য ভারতে মাল উপজাতির মাধ্যমে এই সম্বত প্রচলিত হয়

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...