সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইন্দো রোমান বাণিজ্য

 


খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের শেষে এবং দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথমদিকে নগরাশ্রয়ী হরপ্পা সভ্যতার যুগে স্থলপথে তথা সমুদ্রপথে বৈদেশিক এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের যে সমৃদ্ধি ঘটেছিল ১৭৫০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ নাগাদ ওই সভ্যতার পতনের পর তা সম্পূর্ণ ভাবেই বিনষ্ট হয় ১৭৫০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মধ্যবর্তীকালীন সময়ে বাণিজ্য সেভাবে না চললেও খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের পর থেকে বৌদ্ধ ধর্মের তত্ত্বাবধানেই কৃষি উদ্বৃত্তকে ব্যবহার করে সুসংগঠিত রাজশক্তির তত্ত্বাবধানে পুনরায় বাণিজ্যের বিকাশ ঘতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যিক শক্তি হিসেবে মৌর্য রাজবংশের উত্থানে বিশেষত সম্রাট অশোকের রাজত্বকাল থেকেই সমুদ্রপথে ও স্থলপথে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ বাড়তে থাকে মৌর্যদের রাজনৈতিক তত্ত্বাবধানে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের যে সূত্রপাত ঘটে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দি থেকে দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন, গুজরাট ও নিম্ন সিন্ধু অঞ্চলের -ক্ষত্রপ এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে কুষাণদের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে তা দ্রুত গতিতে সমৃদ্ধি লাভ করতে থাকে স্থলপথে এবং সমুদ্রপথে খ্রিস্টীয় শতাব্দী নিকটবর্তী সময়ে বাণিজ্যের এই শ্রীবৃদ্ধির পশ্চাতে সমসাময়িক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও দারুণভাবে কার্যকরী হয়েছিল

 রোম ভারত বাণিজ্য সম্পর্কে জানার জন্য তথ্য পাওয়া যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে এর মধ্যে অন্যতম প্রধান উপাদান হল মুদ্রা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে দাক্ষিণাত্যে উৎখননের ফলে বিভিন্ন প্রত্ন কেন্দ্র ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত প্রচুর পরিমাণে রোমানমুদ্রা এ বিষয়ে সাহায্য করে থাকে সাহিত্যিক উপাদান বিশেষ করে বিদেশি সাহিত্য রোম ভারত বাণিজ্য বোঝার জন্য অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক হয় যেমন মিশরীয় গ্রিক নাবিক কর্তৃক খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর শেষ দিকে লেখা পেরিপ্লাস অফ দি এরিথ্রিয়ান সি, স্ট্রাবোর ভূগোল, প্লিনির ন্যাচারাল হিস্ট্রি গ্রন্থ ১৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ টলেমির ভূগোল গ্রন্থটিও রোম-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য অপরিহার্য এছাড়া চিনা লেখক ফ্যানই হৌ হান শু গ্রন্থটিও এব্যাপারে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে থাকে। 

খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক নাগাদ পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে পূর্বপ্রান্তে চীনের হান সাম্রাজ্যের মধ্যে নিয়মিত বাণিজ্য শুরু হয়রোমের ক্ষমতা বিস্তার ও এক বৃহৎ শাসকগোষ্ঠীর উদ্ভব হওয়ায় বিলাস দ্রব্য বিশেষত রেশমের চাহিদা রোম সাম্রাজ্যের তথা পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে বাড়তে থাকে রেশম কেবলমাত্র চীনে উৎপাদিত হতো চীনের এই রেশম স্থলপথে তুং হুয়াং, কাগর হয়ে তাকলামাকান মরুভূমি তিয়েনসান পর্বতমালার মধ্যে দিয়ে কোকন্দ, সমরকন্দ, ইরান ও পশ্চিম মালভূমি অতিক্রম করে অবশেষে পশ্চিম এশিয়ায় পৌছাত, সেখান থেকে রোমেও সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে শাসক ও বিত্তবান গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছত রেশমের গুরুত্ব ও দাম অত্যন্ত বেশি হওয়ায় এই পথকে রেশম পথ বা সিল্ক রুট বলা হয় কিন্তু এই পথে বাণিজ্য চলাচলে ক্রমশ নানা বাধার সৃষ্টি হয় এর মধ্যে অন্যতম প্রধান অন্তরায় ছিল ইরানের আর্সাকীয় শাসকদের বাণিজ্যের ওপর আরোপিত নিত্য নতুন নির্ধারিত নীতি রেশম পথের মধ্যবর্তী উল্লেখযোগ্য অংশ অপরিমিত শক্তির অধিকারী আর্সাকীয়দের অধিকারে ছিল ফলে সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে আর্স্কীয়রা রেশমপথের উভয় দিকের বাণিজ্যের উপর অত্যন্ত চড়া হারে শুল্ক আরোপ করেন এই শুল্কের হার এত বেশি ছিল যে চীনের রেশ ও রেশ জাত পণ্য মূল দামের বহুগুণ বেশি মূল্যে রোমের বাজারে বিক্রি হতে আরম্ভ করে ফলে স্বাভাবিক কারণে রোমচীন দুই সাম্রাজ্যের তরফ থেকেই একটা পরিবর্তন অন্তবর্তী শক্তির প্রয়োজন অনুভূত হতে থাকে-যাকে এমন জায়গায় অবস্থিত হতে হবে যাতে র্সাকীয়দের উপর নির্ভরতা কমে যায় খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী এবং খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর মধ্যবর্তী কালীন সময়ে কুষাণ বংশ বাল্লিক দেশকে কেন্দ্র করে মধ্য এশিয়া শক্তিতে পরিণত হয় এবং কুজুল কদফিসেস, বীম কদফিসেস এবং কনিষ্কের আগ্রাসী ও সফল রণনীতি ক্রমে তাদের পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল ভূখণ্ডের উপর প্রভুত্ব স্থাপন করতে সাহায্য করে এইভাবে এশিয়া পারস্য বা ইরানের বিকল্প এক অন্তবর্তী শক্তির উদ্ভব ঘটে

খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে ভারত মহাসাগরে মৌসুমী বায়ু চলাচল সংক্রান্ত যাবতীয় ধারণা সমকালীন বণিকদের জ্ঞাত হওয়ার দরুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল পেরিপ্লাসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে মৌসুমী বায়ুকে কাজে লাগিয়ে লোহিত সাগর ও আরব সাগরের সংযোগস্থলে এডেনের কাছাকাছি কোন বন্দর থেকে এপিফি বা জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করে জাহাজগুলি অপেক্ষাকৃত সহজে ও অল্প সময়ে আরব সাগর অতিক্রম করে ভারতীয় উপকূলে পৌঁছত হরপ্পা সভ্যতার যুগে সমুদ্র বাণিজ্য চলাচলেও তা মূলত উপকূলকে আশ্রয় করেই চলত কিন্তু খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে রোম ভারত বাণিজ্যে অংশ গ্রহণকারী জাহাজগুলি মাঝদরিয়ার মধ্যে দিয়েই চলাচল শুরু করে প্লিনির ন্যাচারাল হিস্ট্রি এবং স্ট্যাবল ভূগোল গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, চারটি ধাপে বা পর্বে এই সমুদ্র বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে, ) প্রথম পর্বে আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীর একটি অংশ জলপথে সিন্ধুর বদ্বীপ অঞ্চল থেকে পারস্যের রাজধানী সুসা গিয়েছিল, তাদের সময় লেগেছিল সাত মাস ) মৌসুমী বায়ু আবিষ্কৃত হওয়ায় জাহাজগুলি অনেক কম সময়ে ও সমগ্র সিন্ধু নদের মোহবায় অবস্থিত বারবারিকাম বন্দরে ভীড়ত) পরবর্তী ধাপে রোমের জাহাজ এসে পৌঁছত সিগেরিয়াস নামক বন্দরে ) চতুর্থ বা সবচেয়ে পরিণত পর্বে লোহিত সাগরের উপর বারেনিস বন্দর থেকে মৌসুমী বায়ুর আন্দাজ মত জাহাজ ছাড়লে মাত্র ৪০ দিনে ভারতের মালাবার উপকূলের বিখ্যাত বন্দর মুজিরিসে পৌঁছনো যেত। সমুদ্র বাণিজ্যের এই উন্নতির ফলে পশ্চিম থেকে প্রাচ্যে আসার জন্য স্থলপথের উপর নির্ভরতা অনেক কমে যায় এবং জলপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে

 ভারত রোম বাণিজ্যের সময়কাল অর্থাৎ এই বাণিজ্য শুরু হয়েছিল কবে এবং কতদিন বা তা স্থায়িত্ব লাভ করেছিল তা নিয়ে বিতরকের সৃষ্টি হয়েছে এতদসত্ত্বেও মুদ্রাগত তথ্য এই বিষয়টি বোঝার কাজে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে বিশ শতকের গোড়া রবার্ট সোয়েল রোমান মুদ্রাগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী রোম ভারত বাণিজ্যের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান কয়েনস ফাউন্ড ইন ইন্ডিয়া নামক একটি প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনার পর তিনি বলেন যে, কনসুলেটের আমলে ভারতের মধ্যে কোন বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল না খ্রিস্টপূর্ব ৩১ অব্দে রোম সম্রাট অগাস্টাসের সময় থেকে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুরু হয়েছিল এবং সম্রাট নীরোর আমলে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় সময় থেকে কারাকাল্লার সময় পর্যন্ত এই বাণিজ্যের ক্রমাবনতি স্পষ্ট কারাকাল্লার সময় থেকে বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় পরবর্তীকালে বাইজানটাইন সম্রাটদের আমলে স্বল্প পরিমাণে হলেও নতুন করে আবার তা শুরু হয় রবাট সোয়েলের প্রদত্ত তত্ত্বে বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন রমেশচন্দ্র মজুমদার তিনি দেখিয়েছেন যে খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে নীরোব মৃত্যুর পর থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত রোম-ভারত বাণিজ্য চলাচল করেছিল তিনি বলেন যে দক্ষিণ ভারতে মুদ্রাগুলি প্রাপ্তির ভিত্তিতেই এই বাণিজ্যকে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না তাঁর মতে স্থলপথে রোম ভারত বাণিজ্য চলেছিল খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত এই স্থল বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল পেত্রা ও পালমিরা বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে পেত্রার ধ্বংস ঘটেছিল ১০৫ খ্রিস্টাব্দে এরপর থেকে স্থান প্রিয়ালক্স দখল করে নেয় রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মকে জি বি প্রিয়ালক্স প্রাধান্য দিয়েছেন প্রিয়ালক্স তাঁদা ইন্ডিয়ান ট্রাভেলস অ এ্যাপোলোনিয়াস অব টিয়ানা অ্যান্ড দ্য ইন্ডিয়ান এমব্যাসিজ টু রোমনামক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন যে সেভেরাস তার পুত্র কারাকাল্লা এবং তাঁদেরও পরবর্তীকালে শাসকদের রাজত্বকালে আলেকজান্দ্রিয়া ও পালমিরা ছিল সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধশালী বন্দর এঁদের রাজত্বকালে রোমের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক যোগাযোগ সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছায় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন

 আরিকামেডুর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের আমদানি রপ্তানি দ্রব্য বন্দর প্রভৃতি দিকের উপর আলোকপাত করে তবে এক্ষেত্রে পেরিপ্লাসের বিবরণ ও টলেমির গ্রন্থ উপাদান হিসেবে যথেষ্ট কার্যকরী ও উপযোগী এই দুই গ্রন্থের খ্রিস্টীয় প্রথম দুই শতকে ভারতীয় উপকূলের প্রধান বন্দরের যে তালিকা পাওয়া যায় তার নাম প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই অনুরূপ পেরিপ্লাসের বর্ণনা অনুযায়ী সিন্ধু নদের সাতটির মধ্যে কেবলমাত্র মাঝের মুখটি নাব্য ছিল এবং তার উপর প্রসিদ্ধ বারবারিকাম বন্দর অবস্থিত ছিল, যার সঙ্গে সিন্ধু জলপথের মাধ্যমে পাঞ্জাব এবং গন্ধারের যোগাযোগ ছিল প্লিনীর বর্ণনা অনুসারে রোমের সঙ্গে জলপথে বাণিজ্য একসময়ে সিন্ধুর বদ্বীপ অঞ্চল থেকে চালু ছিল সে দিক দিয়ে বিচার করলে বারবারিকামের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায় হৌ-হান-শুর সাক্ষ্য ব্যবহার করে বতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় দেখিয়েছেন যে শেন তু বা নিম্ন সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলের সঙ্গে রোমের সমুদ্র বাণিজ্যে বণিকরা প্রচুর লাভ করতেন লিওনেল ক্যাসোন এবং হিমাংশুপ্রভারায় দেখিয়েছেন যে, খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে বারবারিকাম কেবলমাত্র একটি বন্দর ছিল, এখানে আগত সব বাণিজ্য দ্রব্যই সিন্ধুনদী পথে মিননগরে চলে যেত রায়ের মতে চীন থেকে স্থলপথে আগত রেশম ও অন্যান্য দ্রব্যের নির্গমন পথ হিসেবে এ গুরুত্ব ক্রমশ বেড়ে ছিল গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চল পেরিয়ে যে সুরাস্ট্রিন বন্দরের উল্লেখ টলেমি করেছেন তাকে আধুনিক সুরাটের সঙ্গে সনাক্ত করা হয় যা তখনও পরবর্তী কালের মত প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠেনি

 বারিগাজার দক্ষিনে পেরিপ্লাসের বর্ণনানুযায়ী কোঙ্কন উপকূলে যথাক্রমে সুপ্পারা, ক্যালিয়েনাসিমুল্লার নাম পাওয়া যায় সুপ্পারা মুম্বাইয়ের নিকটবর্তী বর্তমান সোপারা, সিমুল্লা বর্তমান চৌল, ক্যালিয়েনা অবশ্যই কল্যাণ পেরিপ্লাস এর বর্ণনা থেকে মনে হয় এই তিনটি বন্দর ছিল সাতবাহন রাজ্যভুক্ত এলডাসারাগানুস এর আমল পর্যন্ত ক্যালিয়েনা ছিল এক ব্যস্ত ও নিয়মিত বন্দর কিন্তু সান্তানে সিংহাসনে আসার পর ন্যাম্বানুস বা শক ক্ষত্রপ নহপানের সঙ্গে লড়াই লাগায় এই বন্দরের সমৃদ্ধি নষ্ট হয় নহপান এই বন্দরের ওপর অবরোধ জারি করেন কোন গ্রীক জাহাজ অবরুদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়লে পানের নৌবহর তাকে বলপূর্বক বারিগাজায় নিয়ে যেত সুতরাং অনুমান করা চলে যে খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর শেষ দিকে কল্যাণ বন্দরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছিল এই কারণে ১৫০ খ্রিস্টাব্দে রচিত ভূগোলে কল্যানের নাম উল্লেখ করেননি

 কোঙ্কন উপকূলের দক্ষিণাংশে পেরিপ্লাসের লেখক এবং টলেমির যেসকল বন্দরের নাম করেছেন সেগুলি হল ম্যান্ডাগোরা, প্যালিপাটমে, মেলিজিগারা, বাইজান্টিয়াম, টোগারম এবং ঔরান্নোবোয়াস বা তুরান্নোবোয়াস। তবে এই বন্দরগুলির গুরুত্ব বারুগাজা বা কল্যানের তুলনায় অনেক কম ছিল হিমাংশুপ্রভা রায়ের মতে কঙ্কন উপকূলের উত্তর ভাগের বন্দরগুলির বাণিজ্যিক গুরুত্ব বেশি ছিল কেননা উত্তর কঙ্কনের কৃষি সমৃদ্ধি দক্ষিণের তুলনায় বেশি

 কোঙ্কনের দক্ষিনে মালাবার উপকূলেও অনেকগুলি সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্রের নাম পেরিপ্লাস, টলেমির ভূগোল এবং সমকালীন সঙ্গম সাহিত্য পাওয়া যায় পেরিপ্লাসের লেখক এই অঞ্চলে তিনটি বন্দর এবং নগরের উল্লেখ করেছেন ট্রিন্ডিস, মুজিরিস এবং নেলকিন্ডা এদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মুজিরিস বন্দরের অবস্থান আধুনিক ক্র্যাঙ্গনোরের কাছাকাছি। প্লিনি বর্ণনানুযায়ী রোম ভারত বাণিজ্যের সবচেয়ে উন্নত পর্যায়ে বিদেশি জাহাজগুলির পক্ষে মুজিরিস বন্দরে পৌঁছাতে সবচেয়ে কম সময় লাগত

 পেরিপ্লাসের বর্ণনানুযায়ী নেলসিন্ডার পর অবস্থিত ছিল বেকারে নামে একটি বাণিজ্যিক বন্দর। খুব সম্ভবত আধুনিক আলেপ্পি কাছে পোড়াকাড়েতে ছিল এর অবস্থান পূর্বদিকে কোলকি ছিল পান্ডরাজ্যভুক্ত এবং এটি ছিল মুক্তা আহরণ কেন্দ্র কোরকাই ছাড়াও আরগরু নামে আরো একটি মুক্তা উৎপাদন কেন্দ্র ছিল কামারা পোডুকাসোপাতমা বাণিজ্যকেন্দ্রগুলি করমন্ডল উপকূলে অবস্থান ছিল এবং এই বন্দরগুলির সঙ্গে সংলগ্ণ ছিল মাসালিয়া যেখানে প্রচুর পরিমাণে মসলিন বস্ত্র উৎপন্ন হত

 বাংলার বন্দরগুলির সঙ্গে রোমের বাণিজ্যিক যো ছিল পরোক্ষ পেরিপ্লাসে গাঙ্গে বা গঙ্গা নামে একটি বন্দরের উল্লেখ আছেএর অবস্থান খুব সম্ভবত উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় দেগঙ্গা এলাকায় এবং গঙ্গার একশাখানদী যমুনার ওপর টলেমির ভূগোল এও গঙ্গাবন্দরের উল্লেখ আছে। তবে ভারত রোম বাণিজ্যে গঙ্গাবন্দরের দ্রব্যাদি সরাসরি রোম সাম্রাজ্যের পৌছাতো না পণ্যদ্রব্য প্রথমে দক্ষিণ ভারতে নিয়ে যাওয়া হতো এবং সেখান থেকে তা রোম সাম্রাজ্যের পেরিত হত গঙ্গা ছাড়াও পূর্ব উপকূলে তামেলিটিস নামে একটি বন্দরের উল্লেখ করেছেন টলেমি যা মেদিনীপুর জেলার বর্তমান তমলুক বা প্রাচীন তাম্রলিপ্তের সঙ্গে অভিন্ন

 প্লিনির ন্যাচার‍্যালিস হিস্টোরিয়া টলেমির জিওগ্রাফিকে হুপেগেসিস’, পেরিপ্লাস অ দ্য এরিথ্রিয়ান সি এবং অন্যান্য উপাদানের উপর ভিত্তি করে ভারত রোম বাণিজ্যের আমদানি এবং রপ্তানিকৃত পণ্যগুলি সম্বন্ধে একটা সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় প্রথমে আমদানিকৃত দ্রব্যের দিকেই নজর দেওয়া যাক ভারতবর্ষে কমপক্ষে ২৬ টি স্থানে খননকার্য চালিয়ে দুই হাতল বিশিষ্ট গ্রিক ও রোমান জার বা তার টুকরো পাওয়া গেছে কেবলমাত্র আরিকামেডুতে খননকার্য চালিয়ে প্রায় ৪০০ কাছাকাছি পানপাত্রের ভাঙ্গা টুকরো পাওয়া গেছে হুইলারের মতে ভূমধ্যসাগরীয় ধরনের এই পাত্রের বা জারের সাহায্যে সূরা এবং তৈল ভারতবর্ষে আমদানি করা হত তামিল সঙ্গম সাহিত্যে বলা হয়েছে যবনরা ভারতবর্ষে সূরা রপ্তানি করত পেরিপ্লাস থেকে জানা যায় যে, ইতালি ও সিরিয়ার লাওডিসীয়া থেকে সূরা আস বারিগাজা বন্দরে এছাড়াও আরব দেশ থেকে সূরা আমদানি হত তবে ইতালিয় মদের চাহিদা ছিল বেশি। ভারতে রোম থেকে যেসমস্ত পণ্য আমদানি করত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিভিন্ন ধাতু যেমন টিন, সীসা, তামা ও সোনা সাতবাহন শাসকদের দ্বারা ব্যবহৃত সীসা আস খুব সম্ভবত রোম সাম্রাজ্য থেকে ভারতে বিশেষকরে দাক্ষিণাত্যে প্রচুর পরিমাণ রোমান স্বর্ণমুদ্রার প্রাপ্তি থেকে বোঝা সম্ভব নয় যে বাণিজ্যিক বিনিময়ের মাধ্যম ছাড়াও স্বর্ণমুদ্রা এখানে আমদানি করা হত এছাড়াও খেজুর, কাপড় ছাপানোর কাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের রঙ, প্রবাল, কাঁচ ও কাঁচের তৈরি জিনিস সোনার পাত্র বিভিন্ন ধরনের পাথর, সূচীশিল্প সম্পন্ন বস্ত্র চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের মলম প্রভৃতি

অন্যদিকে ভারত থেকে রোমান সাম্রাজ্যে রপ্তানিকৃত দ্রব্যের তালিকা অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে চাল ও গম কোঙ্কনের বন্দর থেকে পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে রপ্তানি হত ভৃগুকচ্ছ এবং মালাবার উপকূলের বন্দর থেকেও চাল রপ্তানি হত এছাড়া তৈলবীজ এবং আঁখ রপ্তানি করা হত রোমের বাজারে ভারতীয় সুগন্ধীর ও মসলার বিশেষ চাহিদা ছিল গোলমরিচ এবং দারুচিনি মালাবারের বন্দরগুলি থেকে রপ্তানি হত খাদ্যশস্য ছাড়াও নানা ধরনের কাঠ রোমের বাজারে রপ্তানি হত রপ্তানিকৃত কাঠের মধ্যে সেগুন, চন্দন, মেহগনি প্রভৃতি মূল্যবান কাঠ ও রপ্তানি করা হত লোহা ও ইস্পাতের তৈরী ছুরি-কাঁচিও রোমে রপ্তানিকৃত বাণিজ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল পেরিপ্লাসের লেখকের বর্ণনানুযায়ী বেশ কিছু মূল্যবান এবং আধাদামী পাথর রোমে রপ্তানি করা হত এগুলির মধ্যে অকীব্ব, কার্নেলিয়ান, লালমনি এবং নীলকান্তমণি ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য রোমান আধিপত্য সম্পন্ন এলাকায় রোম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার আগেই ভারত থেকে ক্রীতদাসরা প্রেরিত হয়েছিল

 রোম সাম্রাজ্য তথা পাশ্চাত্যের সঙ্গে এই দীর্ঘস্থায়ী ও সমৃদ্ধশালী বাণিজ্যের ফলে মৌর্যত্তর ভারতে কুষাণ ও সাতবাহনদের মুদ্রাব্যবস্থা বহুলাংশে প্রভাবিত হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যে মুদ্রাব্যবস্থার দ্বারা কুষাণ সম্রাট বিম কদফিসেস রোম সাম্রাজ্যের অনুকরণে স্বর্ণমুদ্রার প্রবর্তন ঘটিয়েছিলেন তাঁর একশ্রেণীর মুদ্রা পাওয়া গেছে যার ওজন রোমান মুদ্রার সমতুল্য এবং যা তৈরি হয়েছিল রোমান স্বর্ণমুদ্রার ধাঁচে পাশ্চাত্যের দূরবর্তী দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগকে শুদৃঢ় করে তোলার তাগিদে দাক্ষিণাত্যের সাতবাহন শাসকেরাও মুদ্রা ভিত্তিক অর্থনীতির ওপর জোর দিয়েছিলেন জোগালথেম্বির মুদ্রাভান্ডার থেকে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী সময়ে নয় হাজার সাতশ কুড়িটি রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া গেছে যেগুলো ছিল শক শাসক নপানের মুদ্রার পুন:প্রচলন

রোম ভারত বাণিজ্যের সুবাদে সাতবাহন শাসনাধীন দাক্ষিণাত্য এবং কুষাণদের শাসনাধীন উত্তর ভারতের এক বিরাট অংশে বেশ কিছু নগরের উদ্ভব ঘটেছিল। দক্ষিণ ভারতের অমরাবতী, ধবনীকোট, নাগার্জুনকোন্ড, সোপারা, কাবেরীপত্তনম প্রভৃতি এবং উত্তরে মথুরা, বারানসী, কৌশাম্বী প্রভৃতি সমৃদ্ধশালী নগর হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। বাণিজ্যিক সংযোগের সূত্র ধরে উভয় দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ঘটেছিল। রোমান সাম্রজ্য প্রতিষ্ঠার পর যেরূপ শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছিল সেইরূপ উত্তরে কুষাণ ও দক্ষিণে সাতবাহনদের নেতৃত্বে ও শান্তি সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শিল্পের ওপর গ্রীক রোমান চিন্তাধারার যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল। ভারতীয় মনিমুক্তার কারুকার্যের ওপরেও রোমান শিল্পের প্রভাব পড়েছিল। ভাষাগত দিকের ওপর ও এই বাণিজ্যের পরোক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের আক্রমণের সূত্র ধরে ভারতের যে ভৌগোলিক দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল পাশ্চাত্যের সঙ্গে এই পর্বের বাণিজ্যিক সংযোগ তাকে অনেক বেশি প্রসারিত করেছিল। ভারতবর্ষের সমাজ ব্যবস্থায় কিছু সমস্যাও নতুনত্ব সৃষ্টি হয়েছিল মৌর্যত্তর যুগে বহিঃবাণিজ্যের সূত্র ধরে। রোম ভারত বাণিজ্যিক সংযোগের ফলশ্রুতি হিসাবে রোম তথা পাশ্চাত্য জগত ও ভারতের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। ভারতীয় মুদ্রাব্যবস্থা যেমন পরিবর্তিত হযেছিল, তেমনি প্রচুর পরিমাণে রৌপ্য ও স্বর্ণমুদ্রা এদেশে আসায় রোমের মুদ্রার ক্ষেত্রেও কিছু সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। বাণিজ্যিক সংযোগের সূত্র ধরে ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত ধারনা পাশ্চাত্য জগতে প্রবেশ করেছিল।

খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতক পর্যন্ত সময়কাল বাণিজ্যিক ইতিহাসের দিক দিয়ে দারুণভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশের বাণিজ্যিক ক্রিয়া আন্তজার্তিক চরিত্র লাভ করল। খ্রিস্টীয় শতকের শেষের দিকে  রোম সাম্রাজ্যের পতনোন্মুখ অবস্থা এবং প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্যে রোমের ক্রমবর্ধমান অনীহার ফলেই এই বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি তথা সম্পর্ক বিনষ্ট হয়।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা

       ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাই মুঘলদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল বলে মনে করেন শিরিন মুসবি । শিল্প বাণিজ্য থেকে আয়ের পরিমাণ সামান্য । ভূমি রাজস্ব হল ‘ মাল ’ বা ‘ খারাজ ’ । মুঘলরাষ্ট্র সামন্তরাজাদের কাছ থেকে কর পেত । তাছাড়া রাষ্ট্র পেত যুদ্ধে লুণ্ঠিত দ্রব্যের এক পঞ্চমাংশ ( খামস ); স্থানীয় আবওয়াব জিহত , শয়ের - ই - জিহত , ফুরুয়াত , অমুসলমানদের উপর স্থাপিত কর জিজিয়া এবং মুসলমানদের দেয় কর জাকাত ।         আকবরের আমলে সরকারের মোট রাজস্ব পরিমাণ ছিল ১২ , ৮২ , ৮৩ , ৮২৫ টাকা , সুজন রায়ের মতে , ঔরঙ্গজেবের আমলে ৩২ , ৬৮ , ১৬ , ৫৮৪ টাকা , এই রাজস্বের ৬ % ভাগ বাণিজ্য শুল্ক থেকে এবং ৪ % ঔরঙ্গজেব জিজিয়া থেকে পেতেন । বাকি সব রাজস্ব কৃষি খাতে আদায় হত ।       বাবর ভারতবর্ষ জয় করে অধিকৃত অঞ্চলের সমস্ত জমি ইক্তা হিসেবে অভিজাতদের মধ্যে বন্টন করে দেন । দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজস্ব ধার্য ও সংগৃহীত হত । হুমায়ুন এ ব্যাপারে কোন পরিবর্তন ঘটাননি । মুঘলদের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা গঠন করেন আকবর । আকবরের আগ...