সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আগ্নেয়াস্ত্র বিপ্লব সমকালীন সমাজ ও অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর কী প্রভাব ফেলেছিল

 

 

 ১৪৫০ থেকে ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই একশত বছরের মধ্যে যুদ্ধের রণকৌশল কারিগরি বিদ্যার প্রয়োগে যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল তা বিশ্বের ইতিহাসে ইতিপূর্বে পরিলক্ষিত হয়নি এই একশত বছরে যুদ্ধের রীতি-নীতি এবং কৌশল বদলে গিয়েছিল বারুদের সাহায্যে ছুঁড়তে পারার প্রযুক্তির ফলেএই নতুন যুদ্ধ প্রক্রিয়া ইউরোপের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন ধারায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল ঠিক যেমনভাবে বুদ্ধিমত্তার জগতে প্রভাব ফেলেছিল মুদ্রণশিল্পের আবিষ্কার

 বৈজ্ঞানিক রজার বেকন (আনুমানিক ১২১৪-১২৯২ খ্রিস্টাব্দ) একটি লেখায় বারুদের প্রথম উল্লেখ করেছিলেন যার থেকে অনুমান করা হয় যে, ত্রয়োদশ শতকের মধ্য ভাগেই পশ্চিম ইউরোপে বারুদের পরিচয় ঘটেছিল বেন সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছিলেন যে সোরা, গন্ধক আর অঙ্গার বা কাঠ কয়লার মিশ্রণে বারুদ তৈরি করে অস্ত্র নিক্ষেপ করা হতো মনে করা হয় যে, একাদশ শতকের গোড়ার দিকে চীনে বারুদ আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং তা আরবীয়দের হাত ঘুরে কাগজ তৈরি ও কাঠের ফলকে ছাপার কারণ কৌশলের মতোই তা পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপে

 ১৩২৬ খ্রিস্টাব্দে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে প্রাপ্ত একটি পুঁথিতে বারুদ ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায় বলা হয় যে দু'জন সামরিককর্মী ফ্লোরেন্সের প্রজাতন্ত্রের দুর্গগুলি ও গ্রামগুলিকে রক্ষা করতে কামান বন্দুকের সাহায্যে অস্ত্র নিক্ষেপ করতে বারুদের ব্যবহার করেছিল চতুর্দশ শতকের শেষদিকে সমগ্র ইউরোপেই আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হতে থাকে ২৪ পাউন্ড আর ২৬ পাউন্ড ওজনের সীসারগুলি ও তীর নিক্ষেপের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বানানো হত পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই সব আগ্নেয়াস্ত্র সম্বলিত গোলন্দাজ বাহিনী মধ্যযুগের পাথর নির্মিত দুর্গগুলি ও শহরের প্রাচীরগুলি আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিল ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কি রাজা দ্বিতীয় মাহমুদ কনস্টান্টিনোপল আক্রমণের সময় বারুদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে ভারী কামান ও ছিল জার্মান ও হাঙ্গেরির নির্মাতাদের দ্বারা আগ্নেয়াস্ত্র বানিয়ে দ্বিতীয় মাহমুদ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সৈন্যবাহিনীকে বিধ্বস্ত করেছিল শতবর্ষের যুদ্ধের শেষ লগ্নে গোলন্দাজ বাহিনীর জোরেই ফরাসীরা নর্মাদি দখল করে ছিল ইংরেজদের হাত থেকে

আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে মধ্যযুগের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ অশ্বারোহী বাহিনী তুলনায় পদাতিক ও গোলন্দাজ বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে ক্লেসীয় যুদ্ধে ইংরেজরা ঙ বো বা হাতে কাটা পালক লাগানো তীর ছোড়ার ধনুক “the sky over a battlefield was stick with missiles” ব্যবহার করে ইংরেজ পদাতিক বাহিনী ফরাসীদের উন্নত অশ্বারোহী বাহিনীকে পরাস্ত করে ছিল পঞ্চদশ শতকের শেষের দিকে নিখুঁত হাত বন্ধুক পদাতিক বাহিনী ব্যবহার করতে শুরু করে ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে স্পেনীয়রা মাসকেট এর মতো বন্দুক ব্যবহার করে মাসকেট আবিষ্কারের পর পাইকদের বল্লম ব্যবহার ক্রমশ কমে আসে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের পদাতিক বাহিনীতে ১৭ হাজার সৈন্য ছিল ও অন্যদিকে অশ্বারোহী সৈন্য ছিল এক হাজারেরও কম পাইক গোলন্দাজ বাহিনী একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার ফলে অশ্বারোহীদের গুরুত্ব ক্রমশ হ্রাস পায়

১৪৫০ থেকে ১৫২৫ কালপর্বে যুদ্ধ-বিগ্রহে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারই যুদ্ধের রীতি আর কৌশলে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য বিপুল পরিমাণ ধাতুর প্রয়োজনীয়তার ফলে বেড়ে গিয়েছিল ধাতুর উৎপাদন পদাতিক বাহিনীর প্রয়োজনীয় অস্ত্রের জন্য প্রচুর ধাতুর প্রয়োজন হত ১৫৩০ এর দশকে একটি বড় কামান নির্মাণের জন্য থেকে টন আমার প্রয়োজন হত তাছাড়া ঐগুলি বহন করার জন্য ধাতু (লোহা) ও কাঠ নির্মিত যানের প্রয়োজন হত। পঞ্চদশ শতকের শেষের দিকে কামানের গোলা নির্মাণের ক্ষেত্রে পাথরের বদলে লোহার গোলা ব্যবহার শুরু হয় এই সময়ে তলোয়ার, ছোরা, তীর, ঘোড়ার নাল আর তার সওয়ার সৈনিকদের বর্ম তৈরিতে লোহার ব্যবহার করা হত এছাড়া বন্দুক নির্মাণে লোহার ব্যবহার করা হয় খনি থেকে আকরিক লোহা উত্তোলন আর তা শোধনের প্রযুক্তিতে উন্নতির ফলে পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত লোহার উৎপাদন পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল

১৪৬০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে কারিগরি বিদ্যায় উন্নতি শুরু হলে ধাতু উৎপাদন বৃদ্ধি পায় তামার আকরগুলি থেকে রুপাকে পৃথক করার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের পর তামা উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটে ষোড়শ শতকের শেষের দিকে ছাঁচের লোহা তৈরীর পদ্ধতি আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত কামান তৈরিতে তামার ব্যবহার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল তবে বারুদ কেবলমাত্র আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য ব্যবহৃত হত না, বারুদ বাজি বানানোর কাজে খনিতে বিস্ফোরণের কাজে ব্যবহার করা হত বারুদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে এবং যুদ্ধের পদ্ধতির পরিবর্তনের ফলে ইউরোপীয় শাসকদের তাদের রাজ্য সুগঠিত ও সুশৃংখল রাখতে বেশ সুবিধা হয়েছিল তারা নিজ রাজ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল বারুদের ব্যবহার পশ্চিম ইউরোপে যুদ্ধকে অনেক বেশি রাজতান্ত্রিক করে তুলতে পেরেছিল

 একদিকে যুদ্ধ-বিগ্রহ যেমন পুরোপুরি রাজা রাজড়াদের হাতে চলে গেল তেমনি অন্যদিকে যুদ্ধে অশ্বারোহী অভিজাতদের আধিপত্য জায়গা ছেড়ে দিতে হল নিম্নবর্গের পাইক আর বন্দুকধারী পদাতিকদের হাতে মধ্যযুগীয় বীরগাথা নাইটদের অবসান ঘটল এতে উচ্চবর্গের মানুষ তীব্র মর্মপীড়া পেয়েছিল, বস্তুত তাতে তারা যতখানি বিচলিত হয়েছিল, আগ্নেয়াস্ত্রের যুদ্ধে আগের চেয়ে অনেক বেশী রক্তপাতে ততখানি হয়নি মেকিয়াভেলী লিখেছেন যে, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে জোচ্চুরি আর ঠকানো ঘৃণ্য হলেও যুদ্ধে তা প্রশংসনীয় আর মহানউচ্চবর্গের মানুষ চিরকালের মতো একালেও যুদ্ধের বহু গুনাগুন ও উপকারিতা দেখতে পেয়েছিল

Eugene F. Rice and Anthony Grafton তাঁদের "The foundation of early modern Europe 1460-1559" বইতে বলেছেন যে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার যেমন যুদ্ধকে রাজতান্ত্রিক করে তুলেছিল তেমনি অন্যদিকে সামরিক বিপ্লবে সর্বহারাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল Pavia এর কারাগারে বন্দী অবস্থায় একজন ফরাসী অভিজাত মন্তব্য করেছিলেন যে, এই আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কারের ফলে অনেক ভীরু কাপুরুষের হাতে অনেক সাহসী শক্তিশালী বীরকে নিহত হতে হত আগ্নেয়াস্ত্রের আবিষ্কারের ফলে সশস্ত্র পদাতিক যোদ্ধা আগ্নেয়াস্ত্রের দ্বারা অতর্কিত আক্রমন করতে সক্ষম হয়েছিল মুখোমুখি বা হাতাহাতি লড়াই না করে নিরাপদ দূরত্বে থেকে একজন সাধারন যোদ্ধাও আগ্নেয়াস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারত এর ফলে পদাতিক বাহিনী সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের গুরুত্ব যেমন বৃদ্ধি পেয়েছিল তেমনি নাইটদের মর্যাদা ও প্রতিপত্তি ক্ষুন্ন হয়েছিল

 রাষ্ট্রের এই নতুন আধিপত্য বিস্তারের ফলে অভিজাত সম্প্রদায়ের তুলনায় রাজসিংহাসনের আধিপত্য বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল ইউরোপের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন হলেও ইউরোপের সর্বত্র বারুদ সম্বৃদ্ধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বড় বড় ভূস্বামীদের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তি অনেকটাই খর্ব করেছিলবারুদের যুগে যুদ্ধের জন্য শত শত কামান ও হাজারে হাজারে আগ্নেয়াস্ত্র সমৃদ্ধ দক্ষ পদাতিক বাহিনীর প্রয়োজন হয়। এর ফলে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন দেখা দেয় এই বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হতো কেবলমাত্র সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রগুলির শাসকদের পক্ষে অভিযাতরা ও যুগের প্রয়োজনে তাদের ভূমিকার বদল ঘটিয়েছিলেন তাদের পক্ষে সামরিক বাহিনীর খরচ ব্যক্তিগতভাবে বহন করা সম্ভব না হলেও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠান করা সম্ভব হয়েছিল

 যুদ্ধ ক্রমশ রাষ্ট্রীক ও রাজতান্ত্রিক হয়ে পড়লেও যুদ্ধকে ক্রমশ অনৈতিক হিসেবে দেখা হত একজন ফ্লোরেন্সের ধর্মতাত্ত্বিক লিখেছিলেন সামগ্রিক যুদ্ধের বিজ্ঞান লুটপাটে রূপান্তরিত হয়েছে সামরিক বাহিনীতে নিযুক্ত মানুষের প্রতি কোন বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার বোধ নেইএইসব লোকেরা জোচ্চুরি, মদ্যপান, জুয়াখেলা ও নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি প্রদর্শনে বেশি আগ্রহী তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে যুদ্ধ বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছিল এবং রাষ্ট্রগুলো সুশৃঙ্খল হয়েছিল।

ষোড়শ শতকে পবিত্র রোমান সম্রাট পঞ্চম চার্লসের রাজত্বে ইউরোপে যুদ্ধবিগ্রহের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই সময় যুদ্ধ অভিযানের সাথে সাথে সৈন্য সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি ঘটে খাদ্যশস্যের দাম আত্মরক্ষার প্রয়োজনে দুর্গ নির্মাণ এবং এসবের ফলে যুদ্ধ ক্রমশ ব্যয় বহুল হয়ে পড়েছিল নতুন নতুন আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাণের ফলে তা ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হয়েছিল দক্ষ স্থায়ী সামরিক বাহিনীর একজন ফরাসী সামরিক নেতা সুহিস সেনা বাহিনীর সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, তারা অর্থ চায় এবং অন্যান্য অযৌক্তিক চাহিদা এত বেশি যে তাদের সন্তুষ্ট করা খুবই কঠিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নানা রোগ বৃদ্ধি ঘটে, ফলে সামরিক বাহিনীকে ও অনেক সময় মহামারীর শিকার হতে হত ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে ইতালির নেপস আক্রমণের সময় ফরাসী সেনাবাহিনী মহামারীর শিকার হয়েছিল ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন স্যার জন নরিস ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে মন্তব্য করেন যে, যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনমাস অবস্থান একটি বড় সামরিক বাহিনীকে শেষ করে দেওয়া যথেষ্ট সামরিক ক্ষেত্রে ব্যয়বৃদ্ধি যেমন ঘটেছিল তেমনি বেড়েছিল যুদ্ধ জনিত ক্ষয় ক্ষতি পোড়ামাটি নীতি, পাহাড়ি লড়াই, পরিখার লড়াই, নাগরিকদের মাধ্যমে লড়াই, পরিখার জল বিষাক্ত করে দেওয়া ইত্যাদি সময়ে দেখা গিয়েছিল

পরিশেষে বলা যায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ইউরোপে যুদ্ধবিগ্রহে শুধু ক্ষয়ক্ষতি বা করভার বৃদ্ধি করেনি এর আরোও পরোক্ষ প্রভাব ছিল। ধাতুর চাহিদা সাংঘাতিক বেড়ে গিয়েছিল হাতাহাতি লড়াইয়ের জন্য তৈরি লোহার অস্ত্র পরিবর্তন এসেছিল যুদ্ধাস্ত্র ও রণকৌশল নিয়ে লেখা শুরু হয়েছিল নতুন যুদ্ধ কৌশলের আবির্ভাব ঘটেছিল পুরনো নীতি, বিশেষতঃ যুদ্ধ সংক্রান্ত ন্যায় নীতির অবসান ঘটেছিল ইউরোপে এসেছিল নিষ্ঠুর, কঠিন, কৌশল দ্বারা আক্রান্ত বিশাল যুদ্ধের দিন অস্ত্র ও সামরিক নীতির পরিবর্তন ইউরোপের সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পল্লব যুগের শিল্প ও স্থাপত্য

  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কাল বিন্ধ্যর দক্ষিনে উপদ্বীপীয় ভারতের তিনটি শক্তির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় - দাক্ষিণাত্যে বাদামীর চালুক্য বংশ , সুদূর দক্ষিনে কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং আরো দক্ষিনে মাদুরাইয়ের পান্ড্যবংশ। দক্ষিণ ভারতের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে এই তিনটি শক্তি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল । তথাপি এই তিনশ বছরের কালপর্বে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসামান্য বিকাশ ঘটেছিল আলবার , নয় নারদের ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটেছিল এবং এই ধর্মীয় পুনর্জাগরনের আবর্তে স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী ও গান-বাজনার জগত দারুণভাবে আলোড়িত হয়েছিল । এই সাংস্কৃতিক আলোড়নে পল্লবদের ভূমিকা ছিল অসীম । পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর এক অসামান্য দৃষ্টান্ত । পল্লব রাজত্বকালেই দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ শিল্প পরিত্যক্ত হয় এবং নতুনভাবে তৈরি কাঠামো যুক্ত মন্দির নির্মাণ শুরু হয় । পল্লব রাজ মহেন্দ্রবর্মনেরর রাজত্বকালে পাহাড় বা পাথর কেটে বেশ কয়েকটি...

দিল্লি সুলতানি কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল ?

  দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্র ইসলাম ধ র্মাশ্রয়ী ছিল কিনা , এটি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন । জিয়াউদ্দিন বার নী র মতো সমসাময়িক ঐতিহাসিক সুলতানি রাষ্ট্রকে ' জাহানদারী ' বলে অভিহিত করেছেন অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হত রাষ্ট্রবি দ্‌ দের চিন্তা ও রাষ্ট্রের পার্থিব প্রয়োজনের ভিত্তিতে ।   কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত । একটি ইসলামীয় রাষ্ট্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় । প্রথমত , রাষ্ট্র কোরানে র ভিত্তিতে রচিত আইন বিধি শ রি য়ত মেনে চলতে বাধ্য হত। দ্বিতীয়ত , সব ইসলামীয় রাষ্ট্র ধর্মগুরু খলিফার সার্বভৌম শাসনের অধীন । ফলে সুলতা নগণ কখনও সার্বভৌম ক্ষমতা দাবি করতে পারেন না , তাঁরা খলিফার আজ্ঞাবহ । তৃতীয়ত , ইসলামী য় রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হল ' মিল্লাত ' অর্থাৎ মুসলমান জনসাধারণের সৌভ্রাতৃত্ববোধ । ইসলামীয় রাষ্ট্রচিন্তায় এই তিন বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক ও অভিন্ন বলে মনে করা হত ।   ধ র্মা শ্র য়ী রাষ্ট্রের স্বপক্ষে বক্তব্য : ঈশ্বরীপ্রসাদ , রমেশ চন্দ্র মজুমদার , আশীর্বাদিলাল শ্রীবাস্তব , শ্রী রাম শর্মার মতো ঐতিহাসিক দিল্লির সুলতানকে ইসলাম ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র হ...

মার্টিন লুথারের ৯৫ থিসিস

    মার্টিন লুথার ছিলেন লুথা রিয়ান মতবাদের প্রবক্তা । জার্মানির স্যাক্সসনিতে ইসলিবেন নামে একটি গ্রামে ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথারের জন্ম হয় । ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে ইউটে ম বা র্গ চা র্চে র দরজায় তিনি তাঁ র ৯৫ তত্ত্ব ঝু লিয়ে দেন । এটি ছিল পোপের স্বর্গীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ । সমস্ত জার্মানির শিক্ষিত মানুষেরা লুথারের তত্ত্বে র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল । এই ৯৫টি ছিল তাত্ত্বিক প্রশ্ন , এতে বাইবেল ও খ্রিস্টান দর্শন সম্বন্ধে তাত্ত্বিক গুরুগম্ভীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রশ্ন ছিল । উইলিয়াম ওকামের চিন্তাভাবনা দ্বারা মার্টিন লুথার প্রভাবিত হয়েছিলেন । ইউরোপের এই চিন্তা ধারা পরিণত ছিল nominalism নামে । নমিনালিস্ট চিন্তাধারায় উল্লেখযোগ্য ছিল বিশ্বাস ও নিবেদিতপ্রাণতা । নমিনালিস্টরা মনে করত বিশ্বাসই মুক্তি আনবে , তবে এই বিশ্বাস অর্জনের জন্য শাস্ত্র পড়তে হবে এবং গভীর আগ্রহের সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের বোধগম্য ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে হবে । লুথার এইমতে বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি বিশ্বাস করতেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারিত হওয়া উচিত এবং আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল রচনা করা একান্ত দরকার । তিনি খ্...